গাছে কাটার প্রতিবাদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘শোক সভা’ অনুষ্ঠিত

0
25
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছের জন্য নোঙর'র শোক সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বারক স্মৃতি ভুমি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী স্বাধীনতা উদ্যানের গাছ কেটে কথিত সৌন্দর্যবর্ধন ও রেস্টুরেন্ট নার্মাণ করার মাধ্যমে পাখিদের বাস্তচ্যুত করার পাশাপাশি অক্সিজেন শুণ্য করা হচ্ছে।

বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ গাছ ও ঔষধি গাছ কেটে সাতটি খাবার রেস্তোঁরা নির্মাণ এবং সৌন্দর্যবর্ধনের নামে প্যাঁচানো হাঁটার পথ তৈরী করার জন্য অসংখ্য গাছ কাটা হয়েছে। ‘আর একটি গাছও কাটতে দেয়া হবে না’।

বুধবার, ৫ মে, বেলা ১২ ঘটিকায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর লাল চিহ্ন দেয়া কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে এক শোক সভা এবং মানববন্ধনে সংহতি জানানো বক্তারা এসব কথা বলেন।

নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর বাংলাদেশের আহবানে ‘স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট’ ‘গ্রীণ প্ল্যানেট বাংলাদেশ’সহ কয়েকটি পরিবেশবাদি সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গাছ রক্ষা করার পক্ষে সংহতি প্রকাশ করেন।

নদী ও প্রাণ প্রকৃতি প্রেমিক সুমন শামস বলেন, বর্তমানে করোনা মহামারিতে অক্সিজেন সংকটে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। তাই অক্সিজেনের উৎস বৃক্ষ নিধন না করে আমাদের আরো বেশীবেশী বৃক্ষ রোপন করে অক্সিজেনর শুণ্যতা পুরণ করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত উদ্যানের শতশত গাছ বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্য।

এই উদ্যানের গাছ কাটার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল বিভাগীয় শহরের সড়ক ও জনপথের উন্নয়ন কান্ডে গাছ না কেটে পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন করতে হবে। কারণ এ উদ্যানের অধিকাংশ গাছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, কাঠবিড়ালী, কোকিল, দোয়েল, বুলবুলি, ভুবন চিলসহ অনেক ধরণের প্রাণি বেঁচে থাকার অভয় আশ্রম।

তিনি আরো বলেন, এ জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা বিস্তৃতভাবে অবিলম্বে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। উদ্যানসহ সব ঐতিহাসিক স্থাপনা বা এলাকার উন্নয়নের জন্য নগর পরিকল্পক, স্থপতি, শিল্পী, ইতিহাসবিদ, উদ্যানবিদ, প্রকৌশলী, শিক্ষক, পরিবেশবিদ ও কবি-সাহিত্যিক সব স্টোকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করতে হবে। যারা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে উন্নয়ন কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন ও প্রয়োজনীয় মতামত দেবেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রেস্টুরেন্ট, ওয়াকওয়ে ও পাকিংজোন বানানোর জন্য অর্ধশত বছর পুরনো শতাধিক গাছ কেটেছে গণপূর্ত অধিদফতর। এর আগেও বুধবার সকালে এবং গত কয়েকদিন ধরে এ বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদে হতাশা আর ক্ষোভে প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। পাশাপাশি গাছ কাটার প্রতিবাদে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবগুলো প্রবেশপথসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত সাতটি রেস্টুরেন্ট স্থাপন করার কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ। তাদের দাবি, এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও রয়েছে। এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী শামিম আখতার গণমাধ্যমকে জানান, নিয়ম মেনেই গাছ কাটছেন তারা।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায় নতুন করে আরও অনেক গাছের গায়ে ‘লাল চিহ্ন’ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে রাতের আঁধারেও গাছ কেটে নেয়া হয়। আর এর আগে কাটা গাছগুলো রমনা কালী মন্দিরের পাশে ঢেকে রাখা হয়েছে।

মানববন্ধনে পরিবেশ গবেষক পার্থ পাভেল বলেন, ইতিহাসের সাক্ষী সবুজের সমারোহ গাছ-গাছালির এ উদ্যানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এই উদ্যানকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। দেশের নতুন প্রজন্ম, পরবর্তী প্রজন্ম বংশ পরম্পরায় শত শত বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেখবে এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্মরণ করবে।

‘সেক্টর তেরো’র সভাপতি দর্পন জামিল বলেন, আমাদের প্রয়োজনেই এই গাছগুলো রক্ষা করতে হবে। কারণ প্রকৃতি বাঁচলেই মানুষ বাঁচবে, বাঁচবে দেশ, বাঁচবে পৃথিবী। তাই এই উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌনন্দর্যো রক্ষার স্বার্থে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং গাছ বাঁচিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করতে হবে।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন গণমাধ্যম কর্মী হোসেন সোহেল, সংগঠক ও প্রকাশক আনোয়ার ফরিদী, কবি জামিল জাহাঙ্গীর, শিল্পী ও সমাজ কর্মী আবির বাঙ্গলী, কবি তপন রশিদ, সমাজ কর্মী রাশেদ হাওলাদার, সংগঠক আর আই শেখর, সোক্টর তেরো’র সদস্য সাইদুল হক লিটন, পরিবেশ কর্মী মাধবী, পর্বত আরোহী ও সাংস্কৃতিক কর্মী সাইয়েদা ওয়ার্দীসহ আরো অনেক পরিবেশ কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে