গণহত্যার কবলে মিয়ানমার

0
985

মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭( নোঙরনিউজ ডটকম): মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়ন, মানবাধিকারের পদদলন, সংখ্যালঘু নিধন ও নিশ্চিহ্নকরণ কোনো নতুন ঘটনা নয়। বিশ্বের নানা দেশ, প্রতিষ্ঠানসহ স্বয়ং জাতিসংঘ এখনো বার্মায় গণহত্যার কথা স্বীকার করছে। কিন্তু বিশ্ব বিবেক এখনো এ গণহত্যার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সোচ্চার নয়।

মিয়ানমারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী রাষ্ট্র চীন। ভারতও মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে। তা ছাড়া পরিবর্তিত মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদ, ব্যবসা ও শিল্পের অংশীদার হওয়ার প্রচ্ছন্ন বাসনায় চীন ও ভারতসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশই মিয়ানমারের ব্যাপক মানবাধিকার পদদলন, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্নকরণ এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করছে না। মুসলিম বিশ্ব গণতন্ত্রহীনতার অভ্যন্তরীণ সংকট এবং তারই পরিণতিতে সৃষ্ট নানা ধরনের জঙ্গি মতবাদের উত্থানে ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত। গরিব ও অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য কারো কারো উদ্বেগ থাকলেও অর্থবহ কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এখন আবার রোহিঙ্গার সঙ্গে ইসলামী জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতার সম্ভাবনা বিষয়ে নানা সমর্থিত-অসমর্থিত সূত্রের মতামত নতুনভাবে তার কূটনৈতিক তৎপরতাকে আড়ষ্ট করছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। মুসলিম-অমুসলিম প্রশ্নটি পাশে রেখেও জাতিগত নিপীড়ন, গণহত্যা, দেশ ও বাস্তুহারা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানবিক বিষয়কে যেমন অবহেলা করা যায় না, তেমনিভাবে মিয়ানমার বাংলাদেশের ওপর স্থায়ীভাবে একটি সমস্যা চাপিয়ে দেবে তাও হজম করা সম্ভব নয়। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কোনো জঙ্গিবাদের উত্থান হয়ে থাকলে তার নিজস্ব সীমানার মধ্যেই সমাধান করতে হবে। তা অন্য দেশের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়া যায় না। তাছাড়া তাদের নিজস্ব অধিবাসীকে রাষ্ট্রবিহীন করে অন্য দেশে ঠেলে দেওয়া সব আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিপন্থী।


১৯৯০ সালের পর থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে প্রবেশের যে ঘটনা, তার মূলে কাজ করছে ১৯৮২ সালে বার্মার সামরিক জান্তা কর্তৃক জারিকৃত নতুন নাগরিকত্ব আইন। এ আইনের বলে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লাখ মুসলমান অধিবাসীকে ‘রাষ্ট্রবিহীন’ মানুষে পরিণত করে নানা বিধিব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে বিধিব্যবস্থা বলবৎ করতে পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় সব ধরনের শক্তিকে প্রয়োগ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত উগ্র বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর অত্যাচার, যা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে তিন ধরনের লোকের নাগরিকত্ব অনুমোদনের বিধান রয়েছে। এক.কাছিন, কেয়াহ (কেরেননি), চীন, বারমান, মুন, রাখাইন, শান, কামন, জেরবাদি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত মানুষ হিসেবে যারা প্রমাণ দিতে পারবে। দুই. ১৯৮২ সালের আগে ও পরে উল্লিখিত নৃগোষ্ঠী বা জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত কারও প্রপিতা-প্রমাতা সম্পর্ক অথবা ১৯৪৮ সালে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে সেরূপ প্রমাণ এবং তিন. ১৯৪৮ সালে যারা নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে, তাদের সঙ্গে রক্ত সম্পর্কে সম্পর্কিত। রাখাইন রাজ্যের যে অংশে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বসবাস করে তা বার্মা রাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি জনপদ। শিক্ষাদীক্ষা, জীবনযাত্রা প্রণালি, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো এবং সাংস্কৃতিক সর্বদিক থেকে অত্যন্ত অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ একটি জনপদ। এখনও এটি একটি বিদ্যুৎবিহীন এলাকা। মাথাপিছু বিদ্যুতায়নের মানদণ্ডে রাখাইন রাজ্য একটি চরম অনুন্নত জনপদ। বাংলাদেশের তুলনায় বিদ্যুতায়ন প্রায় ২০ ধাপ পিছিয়ে, সে ক্ষেত্রে মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত উত্তর রাখাইনের দুটি জেলা চরমভাবে অবহেলিত। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন মেনে নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করার কোনো সুযোগই তাদের দেওয়া হয়নি। মূলত তাদের দেশছাড়া করার জন্যই এ আইন করা হয়।
এ আইন বলবৎ করার পর তাদের ‘রাষ্ট্রবিহীন’ ঘোষণা করে তিনটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১. রাষ্ট্রবিহীন রোহিঙ্গা মুসলমানরা তাদের নিজের অঞ্চল ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবে না, ২. তারা কোনো জমির মালিক হতে পারবে না এবং ৩. তাদের কেউ দুইয়ের অধিক সন্তান নিতে পারবে না। এসব আইন, রাষ্ট্রীয় নির্যাতন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ উগ্র বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর অব্যাহত নির্যাতনে তারা দেশান্তরী হতে থাকে। মাঝেমধ্যে দলভুক্তভাবে আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে দাঙ্গা বাধে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মুসলিম জঙ্গিবাদী সংগঠনে অন্তর্ভুক্তিরও অভিযোগ ওঠে। বর্তমানে সৌদি আরব, ভারত, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা অভিবাসী বা উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করছে। রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৩৭ শতাংশ অধিবাসী বা বার্মার মোট জনসংখ্যা ১-১.৫ শতাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম বলে সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়। কিন্তু এ সরকারি পরিসংখ্যানের সর্বজনীন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। যেমন মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার (৫১ মিলিয়ন) ৪ শতাংশ মুসলমান হিসেবে রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যানে বলা হয়। বার্মিজ মুসলমানরা তা স্বীকার করে না। তাদের মতে, বার্মায় জনসংখ্যার ৮ থেকে ১২ শতাংশ অধিবাসী মুসলমান। এসব মুসলমান শুধু ভারতীয় কিংবা বাঙালি নয়। এখানে চীন, মালয়, আরব, ফার্সি, তুর্কি এবং পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের মুসলমানদের বংশধররাও রয়েছে। তাছাড়া মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা নামক কোনো নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বই স্বীকার করে না। তারা সরাসরি বলে এরা বাংলাদেশি, এরা ১৯৭১ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছে। এটি একটি মিথ্যা অপপ্রচার। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি আক্রমণের মুখে কিছুসংখ্যক বাঙালি মিয়ানমারে সাময়িকভাবে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি অংশে আশ্রয় নিতে পারে; কিন্তু এ রকম একটি পশ্চাৎপদ, অনুন্নত ও দরিদ্র সমাজে বাংলাদেশের কোনো মানুষের যাওয়া এবং থাকার যুক্তি নেই।


বরং বাংলাদেশের বান্দরবান, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বঙ্গোপসাগরের তটরেখা বরাবর অনেক এলাকাতেই প্রায় ২৩ লাখের অধিক রাখাইন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বসবাস। কক্সবাজার ও কুয়াকাটার পর্যটন নগরীতে তাদের অনেকের ভালো ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। তারা বাংলাদেশের সমাজজীবনে নানা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তারা বাংলাদেশের নাগরিক। তাছাড়াও বাংলাদেশের ১৫ থেকে ১৬ কোটি মানুষের প্রায় এক-শতাংশ মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একই বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ এবং সেই একই ভগবান বুদ্ধের অনুসারী। তাদের কেউই সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে বসবাসের চিন্তা করে না। এ অবস্থায় বাঙালি মুসলমানের কোনো কারণেই মিয়ানমারের ওইরকম বৈরী পরিবেশে বসবাস করতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যেসব মুসলমান রাখাইন রাজ্যে বসবাস করছেন তারা নৃগোষ্ঠী হিসেবে বাঙালি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে সেখানে তাদের বসবাস ষোড়শ বা সপ্তদশ শতক না হলেও অন্তত ১৮২৪ থেকে ১৯৪৮ সালের আগের। যেকোনো বিবেচনায় তারা বার্মা তথা মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের ভাষা, জীবনযাত্রার ধরন, সংস্কৃতি, জীবিকা সবই স্বতন্ত্র এবং বাংলাদেশ মূল ভূখণ্ডের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালির সঙ্গে তাদের পার্থক্য স্পষ্ট।
মিয়ানমারে ভারতীয় ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বসবাসের পটভূমি আসাম (১৮১৭-১৯), মণিপুর (১৮১৪) এবং আরাকানকে (১৭৮৫) মূল বার্মা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভারত ও বার্মার ব্রিটিশ সীমানা সাময়িকভাবে অচিহ্নিত হয়ে পড়ে। বার্মিজ সেনাবাহিনীতে এসব অঞ্চলের সমর্থ পুরুষদের নিয়োগদান করা হয় এবং অনেককে বেশ উচ্চপদেও সমাসীন করা হয়। নিজেদের গোত্রীয় হানাহানির ভয়ে এসব ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে বিশ্বস্ততার জন্য রাজকীয় প্রাসাদরক্ষীর দায়িত্বও প্রদান করা হয়। পরে সামরিক কৌশলগত কারণে অন্যান্য শাসক ওইসব এলাকা থেকে নিজেদের গুটিয়ে মূল ভূখণ্ডেই তাদের রাজত্বকে সীমিত রাখে।
বার্মাকে ব্রিটিশ-ভারতীয় শাসনের অধীন আনার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৮২০ সালের পর থেকে। ভারতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা বার্মাকে ভারতীয় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে আনার জন্য ১৮২৪ থেকে ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং প্রতিটি যুদ্ধে ইংরেজরা বিজয়ী হয়। চূড়ান্ত বিজয়ের পর ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সম্পূর্ণ বার্মা ইংরেজদের অধীন হয়। ব্রিটিশ অধিকৃত নতুন বার্মায় সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন, ব্যবসা, চাষাবাদ, শিল্প প্রভৃতিতে প্রচুর ভারতীয়কে নিয়োগ করা হয়। তাদের অনেকেই বার্মায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হয়। এভাবে প্রচুর ভারতীয় হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বার্মায় স্থিত হয়। রেঙ্গুনসহ বার্মার অন্যান্য অংশে বসবাসকারীদের সঙ্গে মূল বার্মিজদের বড় ধরনের সংঘর্ষ বা উদ্বিগ্নতার বিষয়ে খুব বেশি জানা না গেলেও রাখাইন অংশে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষের কিছু ঐতিহাসিক কারণ এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের বার্মা দখল এবং মিত্রবাহিনীর বিশেষত ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে ভারতীয়দের বার্মা অভিযানে অংশ নেওয়ার কারণে রাখাইন রাজ্যে ও মুসলমানরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে প্রভূত রাজনৈতিক সুবিধা পেয়েছিল। সেটি সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী কখনো ভালোভাবে নেয়নি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বার্মা ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তার আগের প্রায় দুই দশক বার্মায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন তা বেশ তীব্রতা পায়। বার্মার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ইউবিশরা (U-Wisra) নামক একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু ব্রিটিশের দ্বারা অন্তরীণ হয়ে কারাগারে ১৬৬ দিন অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন। তার দাবি ছিল, কারাগারে তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য নির্দিষ্ট গেরুয়া পোশাক পরবেন। তার কারাগারে মৃত্যু বার্মার সব বৌদ্ধ ভিক্ষুকে বিক্ষুব্ধ করে। তাছাড়া ব্রিটিশ শাসকরা বার্মার আবহমান সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়।
এসব ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম সফলতা হচ্ছে, ১৯৩৭ সালে বার্মাকে পৃথকভাবে শাসিত ব্রিটিশ উপনিবেশের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং বা-মৌকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। বার্মার ইতিহাসের ১৮২৫ থেকে ১৯৪৮ সালে ১২৩ বছরে বার্মাব্যাপী ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলমানদের বসবাসের একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর একটি অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হলে অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ও পেশা গুটিয়ে নিজ নিজ বাসভূমে ফিরে এলেও যারা সেখানে স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল তারা আর ফেরেনি। তাছাড়া ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত বার্মায় (১৯৫১-৫২, ১৯৫৬ এবং ১৯৬০) পরপর তিনটি সাধারণ নির্বাচন হয়। দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার ছিল। এমনকি ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের সামরিক শাসন জারির পরের দশকও বার্মায় শান্তি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। পাকিস্তানেও একই সময়ে সামরিক সরকার থাকায় বার্মা ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে সদ্ভাব ছিল। বার্মা ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে যেভাবে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন একটি একত্ববাদী হয়ে ওঠে, তা তার আগে এতটা ছিল না। যার ফলে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এক সময়ের বার্মার রাষ্ট্রপতির সচিব মি.ইউ থান্ট দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বার্মা তথা মিয়ানমারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বার্মায় ভারতীয়দের বসবাসের ১৯৪৮ সালের আগের দেড়শ’ বছরের ইতিহাস রয়েছে, যা শুধু ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের আড়ালে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, নির্যাতন ও গণহত্যার ঘটনাকে ঢাকতে পারবে না। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের সাঁড়াশি কূটনীতির ক্ষেত্রগুলো রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে তার প্রতিবেশী মিয়ানমারের কুশাসন, জাতিগত নিপীড়ন, নিশ্চিহ্নকরণ, নিরীহ মানুষকে নিজ ভূখ- থেকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঠেলে দেওয়ার এ জঘন্য প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, ওআইসি, আরব লীগসহ সব আন্তর্জাতিক ফোরাম ও সংস্থায় তথ্য-উপাত্ত সহকারে উপস্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রয়োজন আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী গণমাধ্যমগুলোর সম্পৃক্ততা।
সূত্র: প্রতিদিনের সংবাদ।

লেখকঃ রায়হান আহমেদ তপাদার,  কলামিস্ট, যুক্তরাজ্য।
ইমেইলঃ raihan567@ yahoo.co.uk

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে