




২৩ মে জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস’ ঘোষণাসহ নদী রক্ষায় ১১ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী কে স্মারকপত্র প্রেরণ করেছে নোঙর বাংলাদেশ
ঢাকা, শুক্রবার ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, (নোঙরনিউজ) : এক সময় গোটা বাংলাদেশে জালের মতো ছড়িয়ে ছিল শতশত নদ-নদী, সেই গল্প এখন অতীত। এক সময় আমাদের জাতীয় শ্লোগাণ ছিল, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা, যা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু নদী যে আমাদের প্রাণ, নদী না বাঁচলে ঢাকা তো দূরের কথা বাংলাদেশও বাঁচবে না।তাই যে ক’টা নদী আছে সেগুলো দখল-দুষণ থেকে সুরক্ষা এবং নদীতে চলাচলকারী নৌযানের নিরাপত্তা গ্রহণের জন্য ২৩ মে জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস ঘোষণার এখনই উপযুক্ত সময়।



গতকাল বৃহস্পতিবার ’২৩ মে জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস’ ঘোষণাসহ নদী রক্ষায় ১১ দফা দাবিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর নদী নিরাপত্তার সংগঠন নোঙর এক স্মারকলিপি প্রদান করে। নোঙরের আহবায়ক সুমন শামস গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২:৪০ মিনিটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডাক গ্রহণ ও বিতরণ শাখায় এ স্মারকলিপি প্রেরণ করেন।
নৌ-দুর্ঘটনা নিয়ে এক অনুষন্ধানে দেখা যায় ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সারাদেশে ২ হাজার ৫৪৫টি নৌ-দূর্ঘটনায় ১৮ হাজার ২৬২ মানুষ প্রাণ হারান। এরমধ্যে ১ হাজার ৫২৭টি নৌ-যান নিমজ্জিত হযেছে, উদ্ধার হয়েছে ৯৯৯টি। এখনো ৫২৯টি নৌ-যান উদ্ধার করা হয়নি। সম্পদহানি হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এসব দুর্ঘটনার প্রায় ৪০ ভাগ চালকের দোষে, ২০ ভাগ মালিকের অতি লোভ, ২০ ভাগ খারাপ আবহাওয়া, ১০ ভাগ ড্রয়িং ডিজাইনের ক্রুটি, ৫ ভাগ নৌ-পথের নাব্যতার অভাব, ৩ ভাগ পাইলটের ক্রুটি এবং ২ ভাগ মার্কিংয়ের অভাবে ঘটে।
২০০৪ সালের ২৩ মে’ চাঁদপুরে মেঘনা নদীসহ বিভিন্ন নদীতে এক রাতেই তিনটি লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে ছিল। তার মধ্যে মাদারীপুর থেকে ছেড়ে আসে ফিটনেসহীন লঞ্চ ‘এম.ভি লাইটিং সান’ গভীর রাতে মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে তিন শতাধিক যাত্রীসহ দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে বেশীর ভাগ যাত্রী নিহত হয়। নিহত হয় আমাদের মা, বাবা, ভাই বোন, আত্মিয়-স্বজন। সারা দেশে নেমে আসে শোকের ছায়া।



নৌ-দুর্ঘটনা নিয়ে নোঙরের অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ ৬ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথের ৭৪টি রুটের ছোট বড় ২০ হাজার নৌ-যান চলাচল করে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি লঞ্চের রেজিস্ট্রেশন নেই, যেগুলোর আছে সেগুলোর ফিটনেস বিহীন। নিয়ম অনুযায়ী সাধারণত নৌ-যান তৈরির নকশা অনুমোদন করে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সনদপত্র নিতে হয়। নৌ স্থপতিদের নৌ-যান নকশা তৈরির কথা থাকলেও এ কাজ করছেন অদক্ষ ড্রাফটসম্যানরা, ফলে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।



তাই নদীমাতৃক বাংলাদেশের নৌ-দুর্ঘটনা রোধ করতে ২৩ মে’কে জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস ঘোষণার দাবিসহ ১১ দফা দাবিতে গত একযুগ ধরে নদী নিরাপত্তার সংগঠন নোঙর বিভিন্ন ধরণের কর্মসুচী অব্যহত রেখেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ‘২৩ মে জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস’ ঘোষণার দাবি সমর্থন করেন।আরো সমর্থন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নদী বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, নদী দখল-দূষণ করে এবং অপরিকল্পিতভাবে নদীতে সেতু নির্মাণ করে রাষ্ট্রকে অপূরণীয় ক্ষতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।একই সাথে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত করা হচ্ছে।
দেশের প্রত্যেকটি নৌযানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার প্রয়োজন হলেও সরকার এ কাজে গাফিলতি করছে। প্রায় প্রত্যেক বছর নৌদুর্ঘটনা ঘটলেও এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না। ঢাকার চারপাশের নৌপথ চালু থাকলে ঢাকার জনপরিবহন কিছুটা উন্নত হবে। তুরাগ, বুড়িগঙ্গা ও বালুর তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে, আবার তা দখলও হচ্ছে।এর একটা সমাধান হোয়া দরকার।