ইমন রাগে ঝড়াপাতার গান

0
1146

ঢাকা, সোমবার ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ (নোঙরনিউজ) : স্বাধীনতা উদ্যানে প্রবেশ করলেই যে কারো চোখে পড়বে খোলা মাঠের নানা দৃশ্যপট। এই দেশের প্রতিশ্রুতিশীল, সৃজনশীল যুবক-তরুণীদের মুক্তমনের চর্চা কেন্দ্র এই উদ্যান। মাঝে মাঝে এখানে আসলে দেখা যায় অনেকগুলো স্বপ্নবাজ তরুন-তরুণী গোল হয়ে বসে হাতে কাগজ নিয়ে একজন মডেলের অবয়ব পেন্সিলে আকতে চেষ্টা করছে। সেখানে একজন বা দুই জন সিনিয়র চারু শিল্পী তাদের কে চিত্রকলার হাতেখড়ি দিচ্ছে। আবার দেখা যায় একমেন ধ্যানে বসে খোলা পার্কের বিভিন্ন ফ্রেমের দৃশ্য অংকন করছে আরেক দল তেলরঙা শিল্পী।

ঈমন রাগে ঝড়াপাতার গান। ছবি : নোঙরনিউজ

আবার চোখে পড়ে একদল নবীন প্রবীণ লেখক মাঠের সবুজ ঘাসে বসে বিকালের কবিতায় জীবনানন্দ দাশকে নানা প্রশ্ন করছে, কেহ বা সাইকেল চালাচ্ছে। আবার দেখা যাবো প্রবীণ মানিক মামার উদাম বসত ভিটায় আড্ডা চলছে, বাশী বাজছে, কেউ বা গলা ছেড়ে গাইছে ফকির লালনের গান। আর এই ফাকে চোখে পড়ে ভাসমান লাজুক পিথকরা কেউ কেউ বিভিন্ন ফুল-ফল গাছের নিচে মূলে মূত্র ত্যাগ করে সবুজ ঘাস এবং সবুজ গাছ অসুস্থ করে দিচ্ছে।

কিন্তু গত দুই দিন ধরে দৃশ্যটা একটু পালটে যাচ্ছে। ছিমছাম ষশ্রুমণ্ডিত হালকা গড়ণের এক তরুণ হাতে দীর্ঘ বাশের মাথায় ঝাড়ু বেধে তুলি বানিয়ে পার্কের গাছের নাচি ঝড়াপাতা কুড়িয়ে অসাধারণ এক নতুন সুন্দর্য নির্মাণ করছে। তার নাম সৈয়দ মুহাম্মদ জাকির।

সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির একজন ব্যাতিক্রম ধর্মী প্রতিশ্রুতিশীল চারু শিল্পী। আধুনিক নগরের নাগরিকদের আরো উন্নত মগজের চর্চায় চিন্তা নির্মানে ব্যাস্ত এই তরুণ প্রকৃতির চারুশিল্পী সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির। মনে পড়ে, আজ থেকে দুই দশক আগে থেকেই সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির আর ও দুই জন চারুশিল্পীদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন রাজধানী ঢাকা শহরের ব্যস্ত সড়ক পথে। নগরের সৃঙ্খলা এবং নাগরিক নিরাপত্তা নির্মল করার জন্য বিভিন্ন ব্যাস্ত সড়কে ‘পারর্ফমেন্স আট’শো কের থাকেন।

দেখা গেলো শহরেরে রাজপথে গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে চালকেরা নিয়ম কানুন না মেনে চলার জন্য ব্যাস্ত শহরে তৈরী হয় জ্যাম-জট। ঠিক তখনই যেনো আকাশ থেকে উড়ে আসে দুই থেকে তিন জন ‘সিলভার ম্যান’, মনে হবে ভিন গ্রহের মানুষ! এদের একজন ট্রাফিকের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। আর অন্য জন সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী হয়ে ফুটপাতের উপর ফেলে রাখা ডাস্টবিনের ময়লা পরিষ্কার করছে।

সত্যজিত রায়ের গোপি গাইন বাঘা বাইনের মতো এদের এয কোন সময় যে কোন স্থানে দেখা যেতে পারে। কখনো শহর ছেড়ে দূর-বহু দূরে, কোন প্রত্যন্ত গ্রাম কিংবা জেলা শহরের কোন এক মাটির দেয়ালে আকছে যেনো প্রয়োজনীয় জরুরী রঙিন বোধের ছবি।

আবার দেখা যায় নভচারী সেজে উড়ে বেড়াচ্ছেন শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে। মূলত তাদের বিচরনের একটা উদ্যেশ্য থাকে। আর সেটা হচ্ছ সমাজের বিভিন্ন ধরনের অসঙ্গতি গুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য সাহসী অভিনেতার সাজসজ্জায় ঘুরতে থাকেন। আবার স্যাটেলাইট ও তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমরা বাঙালিরা অনেক পিছিয়ে থাকার কথাও মনে করিয়ে দেয় সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির’র এই অভিনব ‘পার্ফমেন্স আর্ট’।

এই’পার্ফমেন্স আর্ট’এর মাধ্যমে আমাদেরকে দেখিয়েছেন সামাজিক সৃঙ্খলার আর চেতনা বোধ জাগ্রত করে। নেতিবাচক না করা। এই ধরণিকে সুস্থ রাখার জন্য এখনই প্রয়োজন আমাদের সমাজের সকলকে শিল্পের ভাষা বুঝতে পারার চেষ্টা করা এবং করণীয় সঠিক কাজটি করা।

যেমন এই রাজধানী শহর ঢাকাতে দুই কোটি মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যপার হচ্ছে যে, এই শহরে সিটিকপোর্রেশন কোন ধরনের পাবলিক টয়লেট পরিকল্পণায় রাখে নি। আবার ঢাকা ওয়াসা এই শহরের কোন সড়কে পথচারিদের জন্য পানির কলের ব্যাবস্থা রাখে নি।
ব্যাস্ত সড়কের দুই পাশের ফুটপাতের উপড় ঢাকনা বিহীন খোলা ম্যানহোল, উচুনিচু ভাঙ্গাচোড়া ফুটপাত তাও আবার দখল বাণিজ্যের কারণে কর্মব্যস্ত শহরে পায়ে হেটে যাতায়াত করতে পারছে না পথচারী।

আবার চোখে পড়ে ঘনবসতির রাজধানী শহরে পর্যপ্ত পাবলিক টয়লেট না থাকার কারণে চলমান ব্যাস্ত পথচারিগণ প্রকাশ্যে সড়কের উপরে মূত্র ত্যাগ করছে। আরো দেখা যায়, অনেক লাজুক ভদ্রলোক সড়কের উপড়, সবুজ পার্কের কোন গাছের গোড়ায় মূত্র ত্যাগ করছে। ফলে মূত্রস্রোতে ধীরে ধীরে একদিন সবুজ গাছটি মরে যাচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে সবুজ প্রকৃতি দিনে দিনে আরো রুষ্ঠ হচ্ছে। তাই সবুজ, আরও সবুজ সুন্দর প্রকৃতি বাচিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারী এবং বেসরকারী সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

এ প্রসঙ্গে সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির নোঙর নিউজকে বলেন, ‘গত দুদিন হলো সোহরাওর্য়াদী স্বাধীনতা উদ্যানে কাজ করছি।আমার ইচ্ছে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে, সবুজ গাছেদের সাথে নিবিড় ঘনিষ্ঠতায় একটু বড় পরিসরে কাজ করা। এই গণশিল্পের কাজ ধারাবাহিক ভাবে চলবে।
এ উপলক্ষে আগামী ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ মঙ্গলবার বিকেল চারটায় ‘গাছ ও ঝড়াপাতা’ শীর্ষক আড্ডায় চলবে।

এই চলমান প্রদর্শনী দেখা এবং প্রাকৃতিক গাছ ও ঝড়াপাতার শিল্প বিষয়ক আড্ডায় যোগ দেয়ার জন্য সকলকে আমন্ত্রণ জানাই।

স্থানঃ সোহরাওয়ার্দী স্বাধীনতা উদ্যান (ছবির হাটের গেট দিয়ে ঢুকে একটু সামনে, ডানে)। সময়ঃ বিকেল চারটা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে