কূটনীতিকরা হবেন দেশ ও জনগণের আদর্শ : রাষ্ট্রপতি

0
368
দূত সম্মেলনের সমাপনী দিনে রাষ্ট্রপতি আজ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ছবি : ইনটার্নেট

ঢাকা, ২৮ নভেম্বর, ২০১৭ (নোঙরনিউজ) : রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পুরোপুরি পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কূটনীতিকরা হবেন দেশ ও জনগণের আদর্শ।

দূত সম্মেলনের সমাপনী দিনে রাষ্ট্রপতি আজ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন, ‘আপনারা বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন আপনাদের কর্ম ও চিন্তায় এ দেশের জনগণের কল্যাণকেই অগ্রাধিকার দেবেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। এ স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ করতে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখবেন।’
আবদুল হামিদ বলেন, বহির্বিশ্বে আপনারা দেশ, সরকার ও জনগণের প্রতিনিধি। বিদেশে প্রতিটি চ্যান্সেরী এক একটি বাংলাদেশ। বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে তাই আপনাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘শান্তি ও জনগণের জন্য কূটনীতি’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে আপনাদের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। সম্মেলেনে আমাদের জাতীয় স্বার্থ, পররাষ্ট্রনীতির চ্যালেঞ্জ, ভিশন-২০২১, এসডিজি বাস্তবায়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ব্লু-ইকোনমিক ও যোগাযোগ, শ্রম ও অভিবাসন, রোহিঙ্গা সমস্যা, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়া, প্রটোকল ও কনস্যুলার সেবা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এগুলোর বিষয়ে সঠিক দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ আপনাদের দায়িত্ব পালনকে সহজ করে তুলবে বলে আমি মনে করি।

আবদুল হামিদ বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাদের প্রেরিত অর্থ আমাদের রেমিটেন্স প্রবাহকে সচল রেখেছে। এ রিজার্ভ আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি।
যেসব প্রবাসীরা বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, তাদের পাশাপাশি অনাবাসী বাংলাদেশীরাও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, অনাবাসীরা তাদের অর্জিত অর্থের পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে দেন। তাই তারা যেন বিদেশে হয়রানির স্বীকার না হয় বা ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। শ্রম বাজার সম্প্রসারণসহ দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে উদ্যোগী হতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশীয় শিল্পের অনেক কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনতে হয়। রপ্তানি সম্প্রসারণের পাশাপাশি আমদানি সহজলভ্য ও সাশ্রয়ীকরণের বিষয়েও আপনাদের উদ্যোগী হতে হবে। বিনিয়োগ শিল্প ও কর্মসংস্থানের ভিত্তি। তাই জাতীয় স্বার্থে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও উদ্যোগ নিতে হবে।

আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ এমডিজি’র অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে। আমাদের যে অর্জন তা বিশ্বে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রীতির এই ঐতিহ্য বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ আজ বিশ্বব্যাপী সমস্যা। বাংলাদেশও এ সমস্যার বাইরে নয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এ সমস্যার সফলভাবে মোকাবিলা করেছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় সমৃদ্ধ ও গৌরবদীপ্ত। ভাষা, কৃষ্টি, শিল্প, সাহিত্য, লোকাচার যেমন পুরানো তেমনি তা অনন্য। মহান শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। দু’টো অর্জন এসেছে ইউনেস্কোর মাধ্যমে।

এ দেশের জাতিসত্তার বিকাশকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ায় রাষ্ট্রপতি ইউনেস্কোসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে