কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাট উদ্বোধন

0
955

সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ | ৩ মাঘ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ | নোঙরনিউজ ডটকম: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে মাদারীপুরের শিবচরে ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাট (কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাট) উদ্বোধন করা হয়েছে। গত রোববার (১৫ জানুয়ারি) নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এ ফেরিঘাটের উদ্বোধন করেন।
কাওড়াকান্দি থেকে কাঁঠালবাড়ীতে ঘাট স্থানান্তর করার ফলে ওই রুটে যাতায়াতকারীদের পরিবহন খরচ ও সময় দু’টোই সাশ্রয় হবে।


নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, কাঁঠালবাড়ীতে ফেরিঘাট স্থানান্তরের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর যাতায়াতে পরিবহন খরচ ও সময় সাশ্রয় হবে। ফেরির ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে যাবে। জনদুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটে ১৮টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার আরো সহজ হবে।
শাজাহান খান বলেন, ফেরি সার্ভিস স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য এ সরকারের বিগত মেয়াদসহ বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ১৭টি ফেরি নির্মাণ করা হয়েছে। ফেরিতে ওভার লোডেড ট্রাকের মালামাল পরিমাপের জন্য ৬টি ‘ওজন সেতু’ স্থাপন এবং ৬টি ফেরিঘাটের জন্য ৬টি ‘রেকার’ কেনা হয়েছে। পাটুরিয়া-কাজিরহাট ফেরি সার্ভিস পুনরায় চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী, সংসদ সদস্য রোকসানা ইয়াসমিন ছুটি, সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধর রায় এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জ্ঞান রঞ্জন শীল।
তিনি বলেন, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও শরীয়তপুর এবং চাঁদপুরের মতলব ও নারায়ণগঞ্জের মধ্যে ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জামালপুরের বাহাদুরাবাদঘাট ও গাইবান্ধার বালাশীঘাট এবং আরিচাঘাট ও পাবনার নরদাহের মধ্যে ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণবঙ্গের জনগণের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে “এমভি বাঙালি” এবং “এমভি মধুমতি” নামে স্টিমার মডেলের বৃহৎ দু’টি আধুনিক যাত্রীবাহী জাহাজ চালু করা হয়েছে। আরো ২টি বৃহৎ যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণাধীন রয়েছে।
শাজাহান খান বলেন, নদী খননের জন্য ড্রেজার প্রয়োজন। কিন্তু ৭৫ পরবর্তি কোনো সরকার ড্রেজার ক্রয় করেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে বিআইডব্লিউটিএ ১৩টি ড্রেজার সংগ্রহ করেছে। আরোও ২০টি ড্রেজার সংগ্রহের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। নদীর তলদেশ থেকে বর্জ্য তোলার জন্য তিনটি এক্সেভেটর কেনা করা হয়েছে, আরো ৬টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


মন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ৫৩টি নৌ-পথ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া নৌ-পথ উদ্ধার তথা সেগুলো সচল রাখার জন্য বর্তমান সরকার কর্তৃক ১২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার কিলোমিটার নৌপথ উদ্ধার করা হয়েছে ও প্রায় তিন হাজার একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। মংলা-ঘষিয়াখালি চ্যানেল পুনরায় খনন করে নৌপথটি জাহাজ চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে।
শাজাহান খান বলেন, সরকার নদীর দখল ও দূষণরোধে শক্তিশালী কমিটি গঠন করেছে। কর্ণফুলিসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে নৌবাহিনী সহযোগিতা করবে। নদীর নাব্যতা রক্ষা অবৈধ দখলমুক্ত ও দূষণরোধে ২০১০ সালে ‘টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে নদী তীরে ‘সীমানা পিলার’ বসানো হয়েছে। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরে টাস্কফোর্স কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত শিমুলিয়া-চরজানাজাত নৌ-রুটটি একটি জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ নৌ-রুট। বর্তমান সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ‘পদ্মা সেতু’ নির্মাণের কাজ চলছে। পদ্মা বহুমূখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নদী শাসন কাজের অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী চরজানাজাত হতে নদী শাসন কাজ শুরু করতে হবে। সে অনুযায়ী পদ্মা সেতুর নদী শাসন কাজ শুরু করার লক্ষ্যে চরজানাজাত নদী বন্দরের কার্যক্রম স্থগিত রেখে কাওড়াকান্দি এলাকায় ঘাটগুলো কাঁঠালবাড়ী এলাকায় স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেয়া হয়। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্থ না করে জনসাধারণ ও নৌ-যানসমূহের নিরাপদ নৌ-চলাচল নিশ্চিতকরাসহ যাত্রী সেবার মান বজায় রাখতে চরজানাজাত (কাওড়াকান্দি) নদী বন্দরের কার্যক্রম কাঁঠালবাড়ী এলাকায় স্থানান্তরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


বর্তমানে মাওয়া (শিমুলিয়া) হতে চরজানাজাত (কাওড়াকান্দি) পর্যন্ত নৌ-পথের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। চরজানাজাত (কাওড়াকান্দি) নদী বন্দর কাঁঠালবাড়ী এলাকায় স্থানান্তরের ফলে নৌ-পথের দূরত্ব কমে দাঁড়াবে ৮ কিলোমিটারে অর্থাৎ মোট দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার কমে আসবে। এক্ষেত্রে ওই নৌ-রুটে পরিবহন খরচ ও যাতায়াতের সময় দুই-ই বাঁচবে, যা দক্ষিণাঞ্চলের আপামর জনগণের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
কাঁঠালবাড়ী এলাকায় ঘাট স্থানান্তরের জায়গাটি সেতু কর্তৃপক্ষের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় অবস্থিত। ওই জায়গা ব্যবহারের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ ও সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক হিসেবে কাঁঠালবাড়ী হতে বাংলাবাজার ও কাঁঠালবাড়ী হতে জাজিরা পর্যন্ত বিদ্যমান রাস্তা ৬ কিলোমিটার উন্নয়ন ও প্রশস্থকরণ কাজ পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঁঠালবাড়ীঘাটের উন্নয়ন করেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে