রামপালরামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না : প্রধানমন্ত্রী

    0
    542


    ঢাকা। শনিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭। ১ মাঘ ১৪২৩। নোঙরনিউজ ডটকম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হবে না। প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবন ধ্বংস করবে বলে একটি মহলের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।
    শেখ হাসিনা বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবনের সীমানা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার এবং ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত, একটি গভীর বনের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ইউনেস্কোর ঘোষণার উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এই স্বীকৃতি অর্জন করা সম্ভব হয়।
    শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে বিএনপি চেয়ারপার্সনের যোগ দেয়ার সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের অবস্থান অনেকটা মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হওয়ার মতো। শেখ হাসিনা বলেন, ন্যায্যমূল্যে জনগণের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে দেশে বিভিন্ন অংশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রামপালে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এগুলোর একটি। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে উন্নয়ন বিরোধী একটি স্বার্থান্বেষী মহল জনগণের মধ্যে নেতিবাচক, ভিত্তিহীন, কল্পকাহিনী ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।
    সর্বশেষ ২৪ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সনের এ প্রপাগান্ডায় যোগ দেয়ায় মনে হচ্ছে এর পেছনে এক গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তা না হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরুর অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে তিনি কেনো জনসম্মুখে নেতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করলেন? শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভেতর থেকে প্ররোচণা দিচ্ছিলেন। গত ২৪ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনিও ওই অপপ্রচারে অংশ নেন।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতায় বিশেষ মহলের সঙ্গে খালেদা জিয়া জনসম্মুখে আসার পেছনে একটি গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সম্পর্কে বিএনপি নেত্রীর দেয়া সকল তথ্য-উপাত্ত মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর। তিনি আরো বলেন, জনগণকে বিভ্রান্তি করার জন্যই তিনি মিথ্যা তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এই কয়লাকে ভবিষ্যত জ্বালানির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সম্পদ অভিহিত করে বলেন, অদূর ভবিষ্যতে দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ রাখা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানী, চীন ও জাপানের মতো উন্নত দেশ এবং প্রতিবেশী ভারত তাদের ৪০ থেকে ৯৮ শতাংশ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে। কিন্তু বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ মাত্র এক শতাংশের সামান্য বেশি।
    রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে দেয়া বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলাকাটিতে মানুষের কোন স্থায়ী বসতি ছিল না। কোন বসতি উচ্ছেদ করা হয়নি। নীচু, পতিত জমি মাটিভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পশুর নদী থেকে লবণ পানি নিয়ে তা শোধন করে ব্যবহার করা হবে। ব্যবহৃত পানি শীতল করে পুনরায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন দূষিত বা গরম পানি পশুর নদীতে ফেলা হবে না। যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হবে তা অত্যন্ত নগণ্য। শুষ্ক মওসুমে পশুর নদীর প্রবাহের মাত্র (০.০৫%) দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ভাগের এক ভাগ পানির প্রয়োজন হবে।
    তিনি বলেন, এই পশুর নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ড্রেজিং করা হবে। ফলে পানি চলাচল বাড়বে। নাব্যতা বৃদ্ধি পেলে মংলা বন্দরে নৌযান চলাচল বৃদ্ধি পাবে। আয় অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। ভারতে বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটার মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের আইনী বাধা রয়েছে বলে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যে সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত একটি বিশাল আয়তনের দেশ। বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশের সঙ্গে এর তুলনা সঠিক নয়।
    তিনি বলেন, তাঁর সরকার দূষণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ। শব্দ ও আলো দূষণ সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গভীর সমুদ্র হতে কাভার্ড বার্জে কয়লা পরিবহন করা হবে। বার্জে ব্যবহৃত হবে ঢাকনাযুক্ত কম শব্দযুক্ত ইঞ্জিন। ফলে পরিবেশ দূষণের কোন সম্ভাবনা নেই। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শব্দ দুষণ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা থাকবে। ১৪ কিলোমিটার দূরে শব্দ যাবে না। ২০০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
    তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে। সেখানে ৭ হাজারের বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হবে কয়লার দামের উপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, ভারতের এনটিপিসি এবং বাংলাদেশের পিডিবি’র সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। উভয় সংস্থা ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করবে। বাকী ৭০ শতাংশ দিবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এই ৭০ শতাংশ অর্থায়নের ব্যাংক গ্যারান্টর থাকবে বাংলাদেশ। অজ্ঞাতবশতঃ কেউ কেউ এটাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। গ্যারান্টর হওয়া মানে তো বিনিয়োগ করা নয়। কোন কারণে যদি কোম্পানি ব্যর্থ হয়, তখন ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন আসবে। সে রকম হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। একটা ব্যক্তিগত লোন নিতে গেলেও তো গ্যারান্টর লাগে। আর স্থাপনা যেহেতু বাংলাদেশে, গ্যারান্টর হতে তো কোন দোষ দেখি না। বাংলাদেশের স্থাপনায় ভারত কেন গ্যারান্টর হতে যাবে?
    রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার জন্য বিশ্বের প্রথিতযশা ফার্ম জার্মানীর ফিশনার গ্রুপকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজের মান নিয়ে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই। এ বিষয়ে কোন আপোষ করা হবে না। তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষের চুরি করে গাছ কাটার প্রয়োজন হবে না। এলাকার লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। কোম্পানি থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা সিএসআর ফান্ডে জমা হবে। তা দিয়ে এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কাজ করা হবে।
    রামপালে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি সাধারণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পোড়ানোর দক্ষতা যেখানে ২৮ শতাংশ, সেখানে আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্টের দক্ষতা ৪২-৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ একই পরিমাণ কয়লা পুড়িয়ে আমরা দেড়গুণ বিদ্যুৎ পাব। সবচেয়ে গুণগত মানসম্পন্ন কয়লা এখানে ব্যবহার করা হবে। কয়লা আমদানি করা হবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, দূষণ প্রতিরোধে সর্বাধুনিক যত ধরণের প্রযুক্তি পাওয়া যায় সেগুলো আমরা ব্যবহার নিশ্চিত করব। ফ্লু গ্যাস টেম্পারেচার, নাইট্রোজেন, সালফার-ডাই-অক্সাইড কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদির নিঃসরণ পর্যবেক্ষণের জন্য রিয়েল টাইম কন্টিনিউয়াস এমিশন মনিটরিং সিস্টেম থাকবে। যাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। পাশাপাশি অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রপাতি বসানো হবে।
    রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইএসপি থাকবে যা উদগীরণকৃত ফ্লাই অ্যাসের ৯৯.৯৯ শতাংশ ধরে রাখতে সক্ষম হবে। এই ছাই সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত হবে। একইভাবে এফজিডি স্থাপনের ফলে ৯৬ শতাংশ সালফার গ্যাস শোষিত হবে। এই সালফার গ্যাস থেকে জিপসাম সার তৈরি হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিমনীর উচ্চতা হবে ২৭৫ মিটার। এই চিমনি দিয়ে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হবে তা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১.৬ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য যে সমস্ত গ্যাস সামান্য পরিমাণে বের হবে সেগুলোর ঘনত্ব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃত মাত্রার চেয়ে অনেক কম থাকবে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ এবং প্রতিবেশের ক্ষতি করে, তাদের একটু বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুরে আসতে বলছি। বড়পুকুরিয়া একটি সাব-ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্ট। সাব-ক্রিটিক্যাল এবং আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্লান্টের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। সাব-ক্রিটিক্যালের তুলনায় সুপারক্রিটিক্যালে ৪০ শতাংশ কার্বন, সালফার ও নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃসরণ কম হয়। আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্লান্টে যে কোন দূষণের মাত্রা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব।
    তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করি ২০০০ সালে। খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করেনি। তখন পরিবেশের জন্য তো মায়াকান্না করেননি। বরং ফুলবাড়িতে ওপেনপিট কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত মানুষের উপর গুলি করে আধা ডজন মানুষ হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া।
    তিনি বলেন, সাব-ক্রিটিক্যাল প্লান্ট ব্যবহার করলেও ঘনবসতি এবং সবুজে ঘেরা বড়পুকুরিয়া এলাকায় বিগত দশ বছরে পরিবেশ এবং জনজীবনে কোন বিরূপ প্রভাব পড়েনি। উল্টো সেখানকার জমি আরও ঊর্বর হয়েছে। ফসল ভালো হচ্ছে। বিশ্বের বহুদেশে বনভূমির মাঝখানে, শহরের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্নস্থানে ঘণবসতিপূর্ণ এলাকা ও বনভূমির কাছাকাছি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর চিত্র তুলে ধরেন।
    প্রধানমন্ত্রী দেশে একশ্রেণীর মানুষ উন্নয়ন কাজ করতে গেলেই বাধা দেয় উল্লেখ করে এর সমালোচনা করে বলেন, রামপালে সুন্দরবনের কথা বলে বিরোধিতা করছে, আনোয়ারায় সুন্দরবন নেই। কিন্তু সেখানেও বিরোধিতা করছে কেন? এদের কথা শুনতে গেলে তো কোন উন্নয়ন কাজেই হাতে নেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট যদি এতই দূষণ সৃষ্টি করত, তাহলে জাপানের মত দেশ নতুন নতুন কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট তৈরির উদ্যোগ নিত না। ক’দিন আগে জাপান সরকার ৭০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। চীনে প্রায় ৩০০ কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ কাজ চলছে।
    প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, এই যে শত শত মানুষ জড় করে রোডমার্চ করে, সমাবেশ করে, এগুলো করতে টাকা কে দেয়? পকেটের পয়সা থেকে কেউ নিশ্চয়ই খরচ করে না। এরা বাংলাদেশ বিরোধী শক্তির দাবার ঘুটি। তাদের এজেন্ট হয়ে কাজ করে। এসি-লাগানো বাড়িতে থেকে, এসি গাড়িতে ঘুরে মানুষকে হয়ত সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করা যায়, কিন্তু মানুষ ঠিকই এসব মতলববাজদের এজেন্ডা বুঝতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, যদি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সুন্দবনের সামান্যতম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকত, তাহলে আমিই হতাম প্রথম ব্যক্তি যে এটা স্থাপনের বিরোধিতা করত।
    প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবন সংরক্ষণের তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজকে যে সুন্দরবন দেখছি ১০০ বছর আগেও এর ব্যাপ্তি অনেক বড় ছিল। ছোট হতে হতে আজকে এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। সুন্দরবন কি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে? তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বা দূষণ ভৌগলিকভাবে সীমাবদ্ধ নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কোন কারণ সুদূর আমেরিকায় ঘটলে, তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়বে। তাহলে আমেরিকা, জাপান, চীন, ভারতকে বলুন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ রাখতে।
    তিনি বলেন, সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ মরে গেছে। মানুষ গাছপালা কেটে সাবাড় করেছে। মানুষের যাতে সুন্দরবনের উপর নির্ভর করতে না হয়, সে জন্য আমরা তাঁদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। সুন্দরবনে নতুন করে বৃক্ষরোপনের ব্যবস্থা করেছি। গাছ কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আমাদের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে সুন্দরবনের আয়তন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছের ঘনত্ব বাড়ছে।
    তিনি বলেন, উপকূল এলাকায় সবুজবেস্টনী সৃষ্টি করা হয়েছে। নতুন জেগে উঠা চরে বৃক্ষ রোপণ করে সেগুলোর ভূমিক্ষয় রোধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আইন তৈরি, বাঘ সংরক্ষণে টাইগার অ্যাকশন প্লান গ্রহণসহ তার সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে দেশে বনভূমির পরিমাণ ২০০৫-০৬ সালের ৭-৮ শতাংশ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪-১৫ সালে ১৭.০৮ শতাংশ হয়েছে। পরিবশে সংরক্ষণে আধা ডজনের বেশি আইন করা হয়েছে এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন করে ১৫তম সংশোধনীতে ১৮ ক নামে একটি নতুন সংযোজন করা হয়েছে।
    তিনি বলেন, গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের ফলে দেশের পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়ায় মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বিএনপি সরকার এ ব্যাপারে কিছুই করেনি। আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পাদন করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করি। ফলে ঐ অঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়েছে। আমরা গড়াই নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু করেছিলাম ২০০১ সালে। বিএনপি এসে তা বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আবার তা শুরু করেছি।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশের নাজুকতা সম্পর্কে সামান্য হলেও তাঁর যেমন ধারণা আছে, তেমনি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষমতার উপরও তাঁর পূর্ণ আস্থা আছে। তিনি বলেন, প্রযুক্তিকে আপনি অস্বীকার করতে পারেন না। আগে কলেরায়, কালাজ্বরে, গুটি বসন্তে হাজার হাজার মানুষ মারা যেত। মানুষের আবিষ্কৃত ওষুধে জীবনহানি বন্ধ হয়েছে।
    তিনি বলেন, কয়লা পোড়ালে ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ হবে- এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা এমন সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, যেগুলো ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে পরিবেশে ছড়াতে দিবে না। উল্টো সেগুলোর কোন কোনটিকে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তন করে মানুষের উপকারি বস্তুতে পরিণত করা হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি এটা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। বাংলাদেশ কেন এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশ কেন স্বনির্ভর হবে, মানুষ কেন ভালো থাকবে – এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। এজন্যই একটা অজুহাত খোঁজার চেষ্টা করছে তারা।
    শেখ হাসিনা বলেন, যারা নিজেদের পরিবেশবাদী হিসেবে জাহির করেন, তাদের কাছে প্রশ্ন: পরিবেশ সংরক্ষণে একটা গাছ লাগিয়েছেন জীবনে? নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করুন, যা করছেন সেগুলো কি মানুষের মঙ্গল বয়ে আনবে? ভুল, মনগড়া, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। আপনারা যেসব তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করছেন, সেগুলো ৬০’র দশকের। বিশ্ব অনেক বদলে গেছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে। এসব মান্ধাতা আমলের তথ্য দিয়ে জনগণকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
    তিনি বলেন, ২০১৩-১৫ সালে পেট্রোল বোমা মেরে একশোর বেশি মানুষ হত্যা করে, জঙ্গিদের মদদ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ মেরে, হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়ায় ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে, ফায়দা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেত্রী এবার ভাবছেন, একটা মওকা পাওয়া গেছে! রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলবেন। জনগণকে অত বোকা ভাববেন না। জনগণ আপনার দুরভিসন্ধি বোঝে।
    তিনি বলেন, একটা নন-ইস্যুকে ইস্যু করে কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে চায়, তাহলে তা কঠোর হাতে দমন করতে আমরা পিছ পা হব না। দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য যা কিছু ভালো মনে হবে তিনি সেগুলো করবেনই উল্লেখ করে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি এমন কোন কাজ আগেও করিনি, ভবিষ্যতেও করব না, যা দেশের এবং দেশের মানুষের সামান্যতম ক্ষতি করে। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াদের অপপ্রচারে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।’

    একটি উত্তর ত্যাগ

    আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
    এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে