ডিসিসি মার্কেটেই থাকতে চান ব্যবসায়ীরা

0
815

{CAPTION}
*গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে সব হারিয়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ীরা ওই মার্কেটেই নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে চান। এজন্য তারা দ্রুত নতুন ভবন তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন।*
সোমবার গভীর রাতে ওই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে মার্কেটের কয়েকশ দোকান। রাত থেকে মঙ্গলবার প্রায় সারাদিনের চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস ২২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে বুধবারও মার্কেটের কাঁচাবাজার অংশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধোঁয়া উঠতে গেছে। বাতাসে ছিল পোড়া গন্ধ। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এখনও সেখানে পানি ছিটিয়ে যাচ্ছেন।
এরই মধ্যে ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী- আশা যদি বেঁচে যাওয়া কিছু পাওয়া যায়।
দ্বিতল এই বিপণী বিতানে কাঁচা ও পাকা মার্কেট মিলিয়ে দোকান আছে ছয়শর মত। নিচতলায় বড় একটি অংশে রয়েছে আসবাবপত্রের দোকান। বেশ কিছু খাবারের দোকানও রয়েছে। দোতলায় রয়েছে আমদানি করা খাদ‌্যপণ‌্য, প্রসাধনী, পোশাক, প্লাস্টিক পণ‌্য ও গয়নার দোকান।
মার্কেটের নিচতলায় গ‌্যাস সিলিন্ডার মেরামতের কয়েকটি দোকান আছে। নিচতলায় পূর্ব অংশে কাঁচাবাজার।
মঙ্গলবার রাত ২টায় আগুন লাগার পর ভোর সোয়া ৪টার দিকে মার্কেটের পেছনের একটি অংশ ধসে পড়ে। কাছাকাছি সময়ে ধসে পড়ে সামনের একটি অংশও।
বুধবার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন।
সকাল থেকে মার্কেটের সামনে জড়ো হয়েছেন দোকান মালিকরা। অনেকেই বেঁচে যাওয়া মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন।
আগের মতোই ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগুন লাগাটা ‘পরিকল্পিত’। তারা এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান।
দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল জানান, আগুন লাগার আগের রাতে মাত্র এক হাজার টাকা নিয়ে বাসায় গেছেন।
“পাঁচ লাখ টাকা ক্যাশে রেখে গিয়েছিলাম। আগুনে সব শেষ। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমরা আবার উঠে দাঁড়াতে চাই। এজন্য অতি তাড়াতাড়ি আমাদের মার্কেটের ভবনটা তৈরি করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাই। আমরা আর্থিক সাহায্য চাই না। আমাদের দোকানটা দ্রুত তুলে দিলে ব্যবসা করে খেতে চাই।”
নিজের দোকান পুড়ে গেছে। আরেক বড় ভাইয়ের দোকানের মালামাল সরানোর কাজে সাহায্য করছিলেন তরুণ ব্যবসায়ী সুবর্ণা ভ্যারাইটিজের মালিক মো. ফয়জুর রহমান।
তিনি বলেন, “আমার ৩ নম্বর দোকানটা ছিল কাঁচা মার্কেটের একেবারে সাথে। শীতের জন্য মাত্র কয়েকদিন আগে ৬০ লাখ টাকার মাল তুলেছি। সব শেষ। রাতে দোকানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। পারি নাই। সকালে আগুন নিভলে দেখি সব পুড়ে ছাই।”
মার্কেটের পশ্চিম অংশে আগুন না লাগলেও ধোঁয়া আর আগুনের প্রচণ্ড তাপে অনেক দোকানের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকান মালিকরা।
জেমস ফ্রেইজার নামে একজন জানান, আগুনের তাপে তার খেলনা ও ঘর সাজানোর মালামাল নষ্ট হয়েছে।
“বাচ্চাদের খেলনা প্লাস্টিকের তৈরি। গরমে অনেক খেলনা গলে গেছে। এছাড়া অনেক ইলেকট্রনিক ডিভাইস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতে মালামাল সরানোর সময় অনেক কিছু চুরি গেছে।”
একদিকে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা পানিয়ে ছিটাচ্ছেন, এরই মধ্যে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া মালামাল সরানোর চেষ্টা করছিলেন কবির ট্রেডওয়েজ নামে একটি প্রসাধনী দোকানের মালিক জাফর সালেহ।
“আগুনে পোড়া থেকে মালামাল বাঁচলেও চাপা পড়ে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব তো আর কোনো কাজে আসবে না। ভেতরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল। দেখি সেগুলো পাই কিনা,” বলেন এই ব্যবসায়ী।
*তদন্ত সব দিক মাথায় রেখেই* অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক প্রধান লে. কর্নেল মোশাররফ হোসেন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, “সবদিক মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। এটা নিছক অগ্নিকাণ্ড, নাকি নাশকতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
“আমরা দোকান মালিকদের অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছি না। পুড়ে যাওয়া দোকানগুলো থেকে আলামত সংগ্রহ করছি। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হবে, কি কারণে অগ্নিকাণ্ড হলো।”
*সহায়তা দেবে সরকার* দুপুর দুইটায় ঘটনাস্থলে আসেন সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর। আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেট ঘুরে দেখেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের সহায়তা দেওয়া হবে।
“সরকার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সবাই আপনাদের পাশে আছি,” ব্যবসায়ীদের বলেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের জন্য তার মালিকানাধীন ফার্মার্স ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ দেবে বলেও জানান মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে