হাওড়বাসীদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

0
449

অকাল বন্যায় ফসল হাড়িয়ে বিপন্ন হাওড়বাসীদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে হাওর অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম (হ্যাপ)। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে হ্যাপ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের উপদেষ্টা মোস্তফা জব্বার বলেছেন, মানুষ যদি না থাকে, তাহলে মাটি দিয়ে কী হবে? তাই হাওরের মানুষগুলোকে রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বাণের পানিতে ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হবার পর হাওর অঞ্চলে এখন ধনী-গরিব সবার একই অবস্থা। সেখানে সবাই এখন ক্ষতিগ্রস্থের তালিকায়। গরিব মানুষ না হয় অন্য কোথাও গিয়ে অথবা সরকারের সাহায্য নিয়ে টিকে আছে, কিন্তু যারা কারও কাছে সাহায্য নিতে পারছে না, তারা কোথায় যাবে?

তাই হাওরের সব ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে সরকার থেকে শুরু করে দেশের সব পর্যায়ের মানুষের সাহায্য করা দরকার। তিনি হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে একটি ‘অথর্ব’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে হাওরের জন্য মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রণালয়ে বিভাগ করার দাবি জানান।

চলতি বছরের মার্চের শেষ দিকে হাওড় অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এক পর্যায়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় কৃষকের বোরো ফসল। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার কৃষকরা এক চিমটি ধানও ঘুরে তুলতে পারেনি এবছর। এছাড়াও নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট অঞ্চলের কৃষকরাও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাল্লা এলাকায় ঘুরে এসেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন বিপন্ন হাওড়বাসীর জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করবেন। আগামী ১৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচ্ছেন নেত্রকোনার দ্বীপ উপজেলা খালিজুড়ি। সেখানে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করবেন। যোগ দেবেন জনসভায়।

এবছর আগাম বৃষ্টিপাতের কারণে কমবেশি সাত জেলার হাওড়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরপর থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে হাওড় অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি ওঠে। যদিও সরকার দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে নারাজ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারপ্রতি ৩০ কেজি চাল ও প্রতি মাসে ৫০০ টাকা দেয়া শুরু হয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। এর প্রেক্ষিতে তিনজন প্রকৌশলীকে বরখাস্তও করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক সহ চার কর্মকর্তা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও মিলেছে। তাই বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম বা দুর্নীতি অনুষন্ধানে পৃথক পৃথক ভাবে একাধিক কমিটির তদন্তও শুরু হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হ্যাপের সদস্য এ কে এম মুসা বলেন, হাওরে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক না কেন, সংবাদমাধ্যমের সারা বছরই এই বিষয়ের ওপর নজরদারি রাখা দরকার। কারণ, এই ক্ষতি এক বছরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এ বছর হাওর ইজারা না দিয়ে হাওরবাসীর জন্য তা উন্মুক্ত রাখতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হ্যাপের যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান শরিফ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অকালবন্যার কারণে হাওরে মাছের মড়কে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ডিমওয়ালা মাছ মরে গেছে। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমে গেছে। হাওর এলাকার ১৫টি গ্রামে গ্রামবাসী ১০ হাজারেরও বেশি গরু অনেক কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। আর হাঁস মারা গেছে ৯ হাজার ৭৫০টি।

এ ছাড়া বেসরকারী সংস্থাগুলো ঋণের কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হাওরে ধান উৎপাদন ও ক্ষতিগ্রস্থ জমির সরকারী যে হিসাব দেখানো হয়েছে, তাতে ভুল আছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে হ্যাপের যুগ্ম আহ্বায়ক আনিস আহমেদ, সদস্য সুমন দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে