লাকী আখান্দ চলে গেলেন না ফেরার দেশে

0
597

‘এই নীল মণিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘আগে যদি জানতাম’- এ রকম অনেক জনপ্রিয় গানের শিল্পী লাকী আখান্দ আর নেই।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আরমানিটোলায় নিজের বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে শিল্পীর মেয়ে মাম্মিন্তি আখান্দ নূর জানিয়েছেন।

ষাটের দশকের তুমুল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী লাকী আখান্দের বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।

বছর দেড়েক আগে ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা আড়াইমাস থাকার পর ৭ এপ্রিল বাসায় ফেরেন শিল্পী।

চিকিৎসকদের পরামর্শেই তিনি বাসায় গিয়েছিলেন জানিয়ে শিল্পীর ঘনিষ্ঠজন এরশাদুল হক টিংকু বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, লাকী আখান্দ এখন কিছুটা সুস্থ। বাসায় ফিরে গানে সময় দিচ্ছেন তিনি।

শিল্পীর মেয়ে মাম্মিন্তি বলেন, “কাল রাত থেকে অনেক জ্বর ছিল উনার। সকালে কিছু কথা বলেছিলেন। মনে করছিলাম, জ্বর কমে যাবে। কিন্তু আর কমেনি।”

গুরুতর অসুস্থ হয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে লাকী আখান্দের।

এরপর থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পর তাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা এই শিল্পীর চিকিৎসায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকেও সহায়তা করা হয়েছিল।

আশির দশকের তুমুল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী লাকী আখান্দ একাধারে সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার ও গীতিকার। ১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে প্রথমবারের মতো একক অ্যালবাম বের করেন লাকী আখান্দ।

ওই অ্যালবামের ‘এই নীল মণিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘রীতিনীতি জানি না’, ‘মামনিয়া’, ‘আগে যদি জানতাম’ গানগুলো শ্রোতাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

১৯৮৭ সালে ছোট ভাই হ্যাপী আখান্দের মৃত্যুর পরপর সঙ্গীতাঙ্গন থেকে অনেকটাই স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান এই গুণী শিল্পী। মাঝখানে প্রায় এক দশক নীরব থেকে ১৯৯৮-এ ‘পরিচয় কবে হবে’ ও ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ অ্যালবাম দুটি নিয়ে আবারও শ্রোতাদের মাঝে ফিরে আসেন লাকী আখান্দ।

লাকী আখান্দের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৮ জুন। শৈশব পেরোতেই তিনি সুযোগ পেয়ে যান রেকর্ড লেভেল প্রতিষ্ঠান এইচএমভিতে। তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছন্দ-লয়ের টানে তিনি ভেসে চললেন সুরদরিয়ায়।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই শিল্পীর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “লাকী আখান্দ হলেন সুরের বরপুত্র।” ওই অনুষ্ঠানে তাকে আজীবন সম্মাননা জানায় জি-সিরিজ।

কুমার বিশ্বজিৎ এর কণ্ঠে ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘কী করে বললে তুমি’, হাসানের ‘হৃদয়ের দুর্দিনে যাচ্ছে খরা’- এর মতো অনেক জনপ্রিয় গানের সুরারোপ করেন তিনি।

‘লিখতে পারি না কোনো গান আজ তুমি ছাড়া’ ব্যান্ডতারকা জেমসের গাওয়া জনপ্রিয় এই গানের সুরসংযোজনা ও সঙ্গীতপরিচালনা করেছেন লাকী আখান্দ।

‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’, ‘কে বাঁশি বাজায়রে’, ‘স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে’, ‘নীল নীল শাড়ি পরে’, ‘পাহাড়ি ঝর্ণা, ‘হঠাৎ করে বাংলাদেশ’সহ অসংখ্য গানে সুরারোপ ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে