
নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বলেন, নদী রক্ষায় ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা এবং নদীসম্পদ মন্ত্রণালয় গঠন করা প্রয়োজন।
দেশে বিপন্ন হতে বসা নদীগুলো রক্ষায় নদী সম্পদ মন্ত্রণালয় গঠন এবং ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস করার দাবি জানিয়েছে নদী রক্ষা ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন নোঙর ট্রাস্ট।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর সংস্কার প্রসঙ্গে যে পরিমাণ আলোচনা হয়েছে, তা বিগত ৫৪ বছরেও হয়নি। তবে এই সংস্কার ঠিক কোন জায়গায় এবং কীভাবে হবে, সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। একমাত্র সংবিধান নিয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট আলোচনা দেখা গেলেও, নদী নিয়ে কোনো সংস্কার কমিশন বা উদ্যোগ নেই- যা দেশের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে নোঙর ট্রাস্ট আয়োজিত আন্ত:সীমান্ত নদী এবং নদী সংস্কৃতি সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার নদী নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ তোলেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, সরকারের একটা সহজ কাজ ছিল নদী নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সংযুক্ত করা, ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করা। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এসব কাজ করতে পারেনি।’ ভারত যেহেতু এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি সেহেতু বাংলাদেশের করা উচিত বলে মনে করেন আনু মুহাম্মদ।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন, নদীর পানিবণ্টনে ভারত কখনো বহুপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নিতে চায় না। আবার দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় গিয়েও বাংলাদেশ ইতিপূর্বে তেমন লাভবান হতে পারেনি। সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ নিয়ে বাংলাদেশের যে সাফল্য, সেটাও আন্তর্জাতিক আইনের সহায়তায় অর্জিত হয়েছে। তাই নদীর পানির ন্যায্যতা আদায়ে বাংলাদেশকে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, সেটার শিকার কিন্তু ভারতের জনগণ। ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করেছিলেন ভারতের মধ্যে বিশেষজ্ঞরা। ভারতের মধ্যেই এখন ফারাক্কা বাঁধ ভাঙার আওয়াজ উঠেছে।
ভারতের মধ্যে বিভিন্ন বাঁধবিরোধী মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংহতি, যোগাযোগ এবং ভারতের শাসক শ্রেণির ওপর চাপ সৃষ্টির পরামর্শ দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
নদী বিপর্যয়ের তিন কারণ
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দেশের নদী বিপর্যয়ের জন্য সামগ্রিকভাবে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন- ১. ভারতের নদী আগ্রাসন। ২. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নদী বিধ্বংসী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প। ৩. বিভিন্ন ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর দখল ও দূষণ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘যদি জলবায়ু পরিবর্তন নাও হয়, আমাদের দেশের ভেতরেই ক্ষমতাবানদের জন্য নদী বিনাশী অনেক প্রকল্প গ্রহণ হয়েছে।’
জাতীয় নদী দিবস, নদীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দাবি
আলোচনা সভায় নোঙরের পক্ষে নদী রক্ষায় ধারণাপত্র ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামস। তিনি বলেন, নদী রক্ষায় ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা এবং নদীসম্পদ মন্ত্রণালয় গঠন করা প্রয়োজন।
নদীসম্পদ মন্ত্রণালয় গঠনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সুমন শামস বলেন, সমন্বয়হীনতা, দখল ও দূষণ রোধ করা, আন্তর্জাতিক পানিবণ্টন চুক্তি এবং জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য এ- সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় গঠন করা জরুরি।
৪০ নদী নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে
নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারত নৈতিকতার জায়গায় নেই বলে উল্লেখ করেন নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি দাবি করেন, অভিন্ন নদীর সংখ্যা সরকারিভাবে ৫৪টি হলেও বাস্তবে সরেজমিন করে তিনি ২১৫টি নদীর খোঁজ পেয়েছেন। আর ৪০টি নদীর খোঁজ পেয়েছেন যেগুলো বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে, কিংবা ভারত থেকে বাংলাদেশ হয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করছেন। এসব নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ চাইলে ভারতের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে এমন নদীর সংখ্যাও ১৫টি। সামগ্রিকভাবে ৪০টি নদী নিয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি। তবে নদীর ওপরে কোনো স্থাপনা সৃষ্টি করা উচিত হবে না। কারণ, আন্তর্জাতিকভাবে এটি বাংলাদেশের নৈতিকতার প্রশ্ন।’
পরিবেশবিদ ও মানবাধিকারকর্মী শরীফ জামিল বলেন, ‘অভিন্ন নদীর ওপর হাত দিতে হলে অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করা উচিত। সভ্য সমাজে আলোচনা ছাড়া কোনো পরিকল্পনা করা যায় না।’
আলোচনা সভায় মুঠোফোনে যুক্ত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নদীর সংখ্যা নির্ধারণ করা। বিশেষত আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সুন্দরবনে কতটি নদী আছে, সেই সংখ্যাটা জানা নেই। এই বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’













