নরসিংদীর বেলাবোতে বাউল আশ্রমে হামলার প্রতিবাদে ‘তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানায়েছে স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট স্বাউসাজো।

0
38
নরসিংদীর বেলাবোতে বাউল আশ্রমে হামলার প্রতিবাদে ‘তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানায়েছে স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট স্বাউসাজো।
নরসিংদীর বেলাবোতে বাউল আশ্রমে হামলার প্রতিবাদে ‘তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানায়েছে স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট (স্বাউসাজো)।
নরসিংদীর বেলাবোতে বাউল আশ্রমে হামলার প্রতিবাদে ‘তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানায়েছে স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট (স্বাউসাজো)

শুক্রবার, ১২ মে ২০২৩। বিকাল ৪ ঘটিকায় ) শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে এ প্রতিবাদী মানব্বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ লিখতে যে ‘ব’ আকার আমরা প্রথমে লিখি সেই ব আকার হলো বাউল। বাউলের একতারা দোতারা ছাড়া যেমন বাংলাদেশ হয় না তেমনি লালন সাঁই, হাসন রাজা, দ্বিজ দাস, দূরবীন শাহসহ অসংখ্য বাউলের বাউলিয়ানা ছাড়া বাংলা সংস্কৃতি অকল্পনীয়।

সহজিয়া জীবন প্রণালী আর নিভৃত সাধনার জন্য সাধুসঙ্গ আমাদের সংস্কৃতির এক অপার নান্দনিকতা। এই অসীম অনিন্দ্যলোকের নির্যাস নিতে সারা পৃথিবীর গবেষকগণ বাংলার ছুটে আসেন বারবার। আমাদের বাউল গানে মোহাবিষ্ট অনেক গবেষক অন্তরে লালন করেন বাউল মন। গুনগুন করে আউড়ে চলেন বাংলা গানের চরণ সূধা।

বাউলেরা আমাদের ঐতিহ্য, বাউলিয়ানায় মুখরিত আমাদের প্রিয়তম দেশ সে বাউলেরা আজ বিপন্ন। হরহামেশাই তাঁদের ওপর চলছে অবর্ণনীয় নির্যাতন নিপীড়ন।

দেশের বিভিন্ন স্থান হতে বাউলদের উপর হামলার খবর আসছে প্রতিনিয়ত। যারা জীবনের প্রয়োজনকে তুচ্ছ করে সহজ সরল পথের অনন্ত যাত্রী। তাঁদের জন্য আমাদের পরম মমতা থাকার কথা। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি তাদের প্রতি চরম নির্মমতা এবং আগ্রাসী আক্রমণ।

২০২২ সালের ১১ মে বাউল মণিমালার ওপর হামলা, ২ সেপ্টেম্বর বাউল হারেজ ফকিরের বাড়িতে হামলা ও তার বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে ফেলা, ৯ অক্টোবর বাউল সিরাজ উদ্দিনের ওপর হামলা ও নির্যাতন, ৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সাধুসঙ্গে হামলায় আহত হন আটজন বাউল।

২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার বেলগাছিতে একজন বাউল নিহত হন এবং আহত হন ৮ জন। ৭ মে নরসিংদীর বেলাবোতে লালন আখড়ায় হামলা হয়। সাধুদের নির্মম নির্যাতন ও তাদের প্রিয় বাদ্যযন্ত্রগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। এই ঘটনার কিছু ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যমে। সারাদেশে নিন্দার ঝড় বইছে।

বাউলেরা বাংলার সংস্কৃতি সেতু। জাতি ধর্ম গোত্রের করাল থাবার বাইরে এক সহজিয়া মানবতোরণ। তাঁদের ওপর আক্রমণ মানে দেশের আবহমান সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ। বাদ্যযন্ত্রের প্রতি তীব্র আক্রোশ মানে আমাদের সম্মিলিত ঐতিহ্যের প্রতি প্রবল ঘৃণা। বাংলার বাউল আকাশ আজ স্তব্ধ।

এই নিন্দিত সময়ে স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট (সা উ সা জো)র সকল সহযোগী এসব অনভিপ্রেত আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাই। ধিক্কার জানাই সেই সব আক্রমণকারীদের। আমরা গান গাই, ছবি আঁকি, কবিতা লিখি। আমাদের বাউল অন্তর, বাউলমনন। বাউলের ওপর আক্রমণ মানে আমাদের ওপর আক্রমণ।

স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের আবেদন। আমরা রাজপথে আসতে চাই না। সাধুসঙ্গে একতারা দোতারা মন্দিরা বাজিয়ে গানের আবহে ফিরে যেতে চাই। আক্রমণের বিরুদ্ধে আক্রমণ আমাদের লক্ষ্য নয়।

আমরা চাই এসব আগ্রাসন দ্রুত বিচারের আওতায় এনে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। প্রকাশ্য হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া। যাতে নতুন করে কেউ বাউলের গায়ে হাত তোলা দূরের কথা বাউলকে স্পর্শ করতেও একশোবার ভাবে। বাউলদের আখড়া ও সাধুসঙ্গের নিরাপত্তা জোরদার করা এখন সময়ের দাবি।

স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে বাউলেরা আক্রান্ত হলে আমাদের পতাকা লজ্জা পায়। আমাদের স্বাধীনতা কলঙ্কিত হয়। আমরা এই কলঙ্কের অবসান চাই।

নরসিংদী জেলার বেলাবো এলাকায় সাধু ও বাউল আশ্রমে হামলা এবং বাদ্যযন্ত্র ভাংচুরের ঘটনায় সমগ্র দেশজুড়ে সংস্কৃতি অঙ্গণেসহ স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট (স্বাউস্বাজো)”বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অপসংস্কৃতি ও আগ্রাসনের কালো হাত ভেঙে দাও” শ্লোগানে ‘তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাতে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে।

স্বাউস্বাজো মুখপাত্র সুমন শামস এর সভাপতিত্বে উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট (স্বাউস্বাজো) সদস্য সংস্কৃতি কর্মী আবীর বাঙ্গালী, সদস্য কবি জামিল জাহাঙ্গীর, শিল্পী অভিলাষ দাস, সংস্কৃতি কর্মী দর্পন জামিল, শুভ ঘোষ, আনোয়ার হোসেন মাসুদ, কবি রেবেকা শিল্পী, সাগর খান, ফাহিম খান, পটুয়া নাজির হেসেন, শিল্পী সনাতন উল্লাস.মোহাম্মদ মিজানুর রহমানসহ আরো অনেকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে