কচুরিপানার জটে তিতাস নদী অবরুদ্ধ

0
78

তিতাসের কান্নার কথা লিখতে গেলে কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে কিন্তু এ কান্না যেন শেষ হবার নয়! তিতাস শুধু নদী-ই নয়। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসীর আবেগ, অনুভূতি ও ভালবাসার নাম।

কামরুজ্জামান খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া (নোঙর নিউজ) : মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে, উপন্যাসে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, কৃষিতে, জীবন-জীবিকায়, আবেগ-ভালাবাসায়, আনন্দ -বিনোদনে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন আমাদের প্রত্যাহিক জনজীবনে।

আমরাই আবার এই তিতাস নদীকে গলাটিপে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দখল, দূষণের ফলে জীবন সায়াহ্নে এসেও জন-জীবনে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে চলছে আমাদের এই তিতাস নদী। বিনিময়ে আমরা এই তিতাস নদীর কতটা দেখভাল করতে পেরেছি? একদম-ই না! অথচ যুগ যুগ ধরে নিঃস্বার্থভাবে আমাদের শুধু দিয়েই যাচ্ছেন, আমরা শুধু গ্রহন করেই যাচ্ছি।

মহামান্য হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করার পরও অযত্নে অবহেলায় তিলে তিলে শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে তিতাস নদী সহ দেশের প্রায় বেশিরভাগ নদী-ই। প্রতিটি জেলায় নদী কমিশন থাকা সত্বেও দেশের প্রতিটি নদীর এই করুণ পরিণতি। যা মোটেই কাম্য নয়। এই করুণ পরিণতির মাঝে নিবু নিবু করে বইতে থাকা তিতাস নদী এখন কচুরিপানায় স্তব্ধ হয়ে জনজীবনের দুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণা করেছে।

নদী কেন্দ্রিক যারা মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন সেই সব মানুষজন আজ বেকার হয়ে বসে আছেন। তিতাস নদী কেন্দ্রিক যারা চলাফেরা করে থাকেন তাদের চলাচল বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে এই কচুরিপানার জটে। তিতাস নদীর পূর্বে অবস্থিত বিলে যারা কৃষিকাজ করেছেন তারা বেশ চিন্তিত যে, তাদের ফসল ঘরে তুলবেন কিভাবে। সরেজমিনে দেখা যায় মজলিপুর ইউনিয়নের বাকাইল বাজর ঘাট দিয়ে জনসাধারণ তথা বাকাইল হাইস্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা খেয়া পরাপার করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সুহিলপুর ইউনিয়নের খলাপাড়া ঘাট একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাট। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজারে হাজার মানুষ পারাপার করে থাকেন জীবন জীবিকার তাগিদে। কিন্তু কচুরিপানার জটে দীর্ঘ সময়ে পারাপার করতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

নদী পাড়ের বাসিন্দা শ্যামপুর গ্রামের হাবিব মিয়া বলেন, সরকার যদি এই তিতাস নদীর দিকে কিছুটা নজর দিতেন আজ এই দুরাবস্থায় থাকতো না এই নদী। আমাদের বাপ-দাদাদের ও আগে থেকে এখন পর্যন্ত আমরা এই নদী কেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু এই নদীর বেহালদশার কারণে আমাদের আয় রোজকারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।পুকুরের মাছ বা চাষের মাছ দিয়ে দেশের চাহিদা কখনোই মিটাতে পারবে না। নদীতে যেমন মাছ উৎপাদন বেশি হয় তেমনি মাছের স্বাদে ও ভিন্ন।

বর্তমানে কচুরিপানার যে সমস্যা তা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ, সরকার গোকর্ণ এলাকায় তিতাসের মোহনায় শুধু এই মওসুমে একটি বাধ সৃষ্টি করে যাতে এই কচুরিপানা তিতাস নদীতে ঢুকতে না পারে তাহলে তিতাস নদী কচুরিপানা জট থেকে মুক্তি পাবে। এবং নদী কেন্দ্রিক জনজীবনে স্বাবাভিক গতি ফিরে আসবে। উল্লেখ্য এ-ই কচুরিপানার জট শুধু মাত্র এই মওসুমে শাহবাজপুর ব্রিজ থেকে শুরু করে মজলিসপুর, ধার্মা, বাকাইল, সুহিলপুর, ঘাটুরা, মেড্ডা, কাউতলি হয়ে গোকর্ণ পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে।

নদী প্রকৃতি সামাজিক সংগঠন নোঙরের সম্মানিত সদস্য প্রফেসর মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নদী মানুষের প্রত্যাহিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।আমার বাড়ী এই তিতাস নদীর পাড়ে। নদী হইতে ৫০/৬০ ফুট দূরত্ব আমার বাড়ী। খুব ছোট বেলা থেকে এই তিতাস নদী ও মানুষের জীবন জীবিকার সূতিকাগার গুলো প্রত্যহ করে আসছি।

নদী ও মানুষের জীবন নিয়ে বলতে গেলে তা শেষ হবে না। বর্তমানে তিতাস নদীর প্রধান সমস্যা কচুরিপানার জট। এই জট নিরসনে মাননীয় জেলা প্রশাসন ও জেলা নদী কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি একটি কমিটি গঠন করে এই সমস্যা নিরসনের উৎস খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করন। তিতাস নদী ও মানুষের জীবন চলার পথে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসুক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে