


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে কোনো শর্ত দিয়ে ঋণ নিচ্ছে না।
আইএমএফ কেবল তখনই (যেকোনো দেশকে) ঋণ দেয় যখন দেশটি ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা অর্জন করে। আমরা তো তেমন কোনো শর্ত দিয়ে ঋণ (আইএমএফ থেকে) নিচ্ছি না।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
মুজিবুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে কিছু শর্ত পূরণ করছে এবং ইতিমধ্যে বিদ্যুতের শুল্ক বাড়িয়েছে এবং ঋণের কারণে গ্যাসের শুল্ক বৃদ্ধি করবে, যা পণ্যের দাম এবং মূল্যস্ফীতির দিকে নিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হলো- পৃথিবীর কোন দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যের আলোচ্য প্রশ্নের জবাবে কিছু ব্যবসায়ী ও শিল্প-কারখানার মালিকদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চাইলে যে মূল্যে কিনে আনব সেই মূল্য তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়েছি। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর ইংল্যান্ড বিদ্যুতের দাম ১৫০ ভাগ বাড়িয়েছে। আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ালাম আর বাল্কে কিছু গ্যাসের দাম বেড়েছে। এলএনজি আমরা যেটা ৬ ডলারে স্পট প্রাইসে কিনতাম, সেটা এখন ৬৮ ডলার। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকি দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য আজকে সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিম্ন ও মধ্যম আয়ের যারা, আমরা তাদের জন্য টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ড দিয়ে দিয়েছি। যেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। তেল, চিনি, ডাল সীমিত আয়ের মানুষ ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। এর থেকে যারা নিম্ন আয়ের তাদের জন্য আমরা ১৫ টাকায় চাল দিচ্ছি। সেই সঙ্গে তেল, ডাল ও চিনিও দেওয়া হচ্ছে। আর একেবারে হতদরিদ্র যারা কিছুই করতে পারে না, তাদেরকে বিনা পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে কষ্টে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রেখে এই ব্যবস্থা করছি। কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হচ্ছে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। এটা একটা উন্নত দেশের কথা বললাম। পৃথিবীর সব দেশে এই অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনো সেই অবস্থায় পড়েনি।’
ভর্তুকি প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ; বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে যদি ৪০, ৫০ ও ৬০ হাজার কোটি টাকা আমাকে ভর্তুকি দিতে হয় তাহলে সেটা কী করে দেব? এর ফলে দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার যে চেষ্টা সেটা করে কিছুটা সফলতা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।’
সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম যদি বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি মানুষ যদি একটু সাশ্রয়ী হয়, তবে গায়ে লাগবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ী হতে পারে।’
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী আছেন, এখানেও (সংসদে) আছেন, তাদের আমি তো স্পষ্ট বলেছি। গ্যাস আমি দিতে পারব- কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস আমরা বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসলাম সেই মূল্য যদি আপানারা দেন আমরা গ্যাস দিতে পারব। তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায় তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব সেই মূল্য তাদের দিতে হবে।’
ভর্তুকি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ভুলে যাবেন না, ভর্তুকির টাকা তো জনগণেরই টাকা। যত মূল্য কম থাকে তাদের অর্থাৎ আমাদের বিত্তশালীরা লাভবান হন। যারা সাধারণ মানুষ তারা কিন্তু ঠিকমতো বিল দেয়। বিত্তশালীরা আরাম-আয়েশ করবে আর স্বল্প মূল্যে পাবে তা কী করে হয়? সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিচ্ছি।’