জেল হত্যা দিবসে জাতীয় চার নেতার খুনিদের বিচার চায় স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট

0
12

যথাযোগ্য মর্যাদায় এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরসেনানী ও জাতীয় চারনেতাকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত এই কালো অধ্যায়টিকে স্মরণ করেছে স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট (স্বাউসাজো)।

জেল হত্যা দিবসে জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায় স্বাধীনতা উদ্যানের রেডিও পয়েন্ট চত্বরে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।
স্বাধীনতা উদ্যান সাংস্কৃতিক জোট (স্বাউসাজো) মুখপাত্র সুমন শামস এ সময় বলেন, জেলখানার ভেতর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল আজ থেকে ৪৭ বছর আগে। কিন্তু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে​ গেছেন খুনিরা। জেলহত্যা মামলা নামে পরিচিত এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিচারের তিনটি ধাপ পার হলেও দণ্ডিত ১১ আসামির সবাই পলাতক আছেন, যাঁদের তিনজন মৃত্যুদণ্ড ও আটজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। তাঁদের মধ্যে ছয়জন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায়ও দণ্ডপ্রাপ্ত।
আসামিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন কোথায় আছেন, সে ব্যাপারে সরকারের কাছে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুজন ছাড়ে বাকিদের বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। তাঁদের মধ্যে কর্নেল (অব.) এম বি নূর চৌধুরী কানাডা এবং লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে চেষ্টা চলছে। প্রতিবছর ১৫ আগস্ট এলে এ নিয়ে সরকারের মন্ত্রী-নেতারা অনেক কথা বলেন। পরে এ নিয়ে আর তেমন কোনো আলোচনা থাকে না। আমরা এই খুনের সঠিক বিচার দাবি করছি।
এ সময় উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক রানা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলংকজনক অধ্যায় এই জাতীয় চার নেতা হত্যার দিনটি। পনেরই আগষ্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্নেল (বহিস্কৃত) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (বহিস্কৃত) খন্দকার আব্দুর রশীদ জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার এ পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য তারা আগে ভাগে একটি ঘাতক দলও গঠন করে। এ দলের প্রধান ছিল রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন। সে ছিল ফারুকের সবচেয়ে আস্থাভাজন। ১৫ আগস্ট শেখ মনির বাসভবনে যে ঘাতক দলটি হত্যাযজ্ঞ চালায় সেই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলেহ উদ্দিন।
সভায় উপস্থিত চিত্রকর মাসুদ আলী বিশ্বাস ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুসহ মহান এই চার নেতা আপোষ করেননি, কখনো মাথানত করেন নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরপরেই জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাটি এমনভাবে নেয়া হয়েছিল যাতে পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে আপনা আপনি এটি কার্যকর হয়। আর এ কাজের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ঘাতক দলও গঠন করা হয়। এই ঘাতক দলের প্রতি নির্দেশ ছিল পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে কোন নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করবে। ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুথান ঘটানোর পরেই কেন্দ্রীয় কারাগারে এই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির জনককে তাঁর ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। পরে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সমধিক পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল লন্ডনে। এসব হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে যে সমস্ত কারণ বাধাগ্রস্ত করেছে সেগুলোর তদন্ত করার জন্য ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। তবে সেই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের অসহযোগিতার কারণে এবং কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় এ উদ্যোগটি সফল হতে পারেনি। তখন বাংলাদেশের সরকার প্রধান ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
অভিলাষ দাসের শঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সেক্টর -১৩ এর সভাপতি দর্পন জামিল, সংস্কৃতি কর্মী মুরাদ নূর, আলী আশরাফ, মেহেদী হাসান স্বরণ, দেলোয়ার হোসেন, ফুয়াদ আলম প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে কবিতা আবৃত্তি করেন অভিনেতা আহমেদ ফারুক। আলোচনা সভা শেষে দেশের গান পরিবেশন করেন সুমন মোস্তাফিজ, শহিদুল ইসলাম যিশু, আহসান রিপন, জাকির হোসেন দীপু।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে