ভুল চিকিৎসা এবং চরম অবহেলার কারণে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ড. শামসুল আরেফিন এ-র শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

0
99

অগ্নাশয়ের সিস্ট অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর রক্তনালী কেটে ফেলেছেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. সামসুল আরেফিন, যিনি সার্জারির চিকিৎসকই নন। সংগীত পরিচালক শেখ জসীমের মেয়ে মেহবিশ জাহানের সাথে ঘটে যাওয়া এমন দুর্ঘটনায় ভেঙ্গে পরেছে রোগীর পরিবার।

একজন চিকিৎসকের এমন ভুলে সোস্যাল মিডিয়াতেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সঙ্গীতাঙ্গনের সুধী জনেরা। এই অমানবিক ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে ও চিকিৎসক ডা. সামসুল আরেফিন এর লাইসেন্স বাতিল চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রোগীর বাবা সংগীত পরিচালক শেখ জসীম উদ্দিন।

গত সোমবার (২৯ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রোগীর স্বজনরা বলেন, ২০১৭ সাল থেকে মেহবিশ জাহান ডা. সামসুল আরেফিনের শরণাপন্ন হন। তারপর রোগী ২০২১ সালে একবার এবং ২০২২ সালের জুলাই মাসে পুনরায় অগ্নাশয়ের সিস্টের জন্য ডা. সামসুল আরেফিনের কাছে পরামর্শ করেন। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সেগুলোর ফলাফল নিয়ে দেখাও করেন রোগীর পরিবার। এরপর ডা. সামসুল আরেফিন পরবর্তী প্রসিডিউর “অগ্নাশয় সুডোসিস্ট ড্রেইনেজ” এর জন্য রোগীকে হাসপাতালে এসে প্রসিডিউর সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন। ডাঃ আরেফিন কখনোই ই,আর,সিপি প্রসিডিউর এর ঝুঁকি সম্পর্কে রোগী ও রোগীর পরিবারকে অবহিত করেননি। সকল প্রসিডিউর সম্পন্ন করে ৯ আগস্ট রোগী বিকাল ৩:৩০ মিনিটে ই,আর,সিপি বিভাগে গেলে দুই ঘন্টা পর রোগীর স্বামীকে ডেকে ডা. সামসুল আরেফিন বলেন রোগীর অবস্থা গুরুতর কারণ প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় একটি আর্টারি কেটে গেছে তাকে আইসি ইউ তে স্থানান্তরিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রোগীর পরিবার অভিযোগ করে বলেন, রক্তপাত বন্ধের কোনো ব্যবস্থা না করেই তাকে আইসিইউতে পাঠিয়ে লাপাত্তা হন এ চিকিৎসক। পরে আরেক চিকিৎসকের অপারেশনে কোনোক্রমে প্রাণ বাঁচানো গেলেও একেবারে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

ভুল চিকিৎসার সব প্রমাণ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরে ঘুরে ফিরছেন রোগীর বাবা আর শ্বশুর। ডা. আরেফিনের লাইসেন্স বাতিল চেয়ে মামলাও করবেন তারা। ভুল চিকিৎসার প্রতিকার চেয়ে স্বাস্থ্য ভবনে যান মেহবিশ জাহানের বাবা আর শ্বশুর। মহাপরিচালকের কাছে তাদের অভিযোগ, অগ্নাশয়ের একটি সিস্ট অপারেশন করতে গিয়ে তাদের মেয়ের রক্তনালী কেটে ফেলেছেন ডা. সামসুল আরেফিন। সাথে সংযুক্ত ছিল বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালেরই প্রমাণপত্র।

রোগীর বাবা শেখ জসিম উদ্দিন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ডা. সামসুল আরেফিন সার্জন না হয়েও উনি কেনো অপারেশন করতে গেলেন। এমনকি উনি ওনার টিমে কোনো সার্জনও রাখেননি। উনি কেনো এটা করতে গেলেন? উনি ওভার কনফিডেন্ট হয়ে মনিটরে না তাকিয়ে পুশ করেছেন। এটা করতে গিয়ে সেখানে যে আর্টারি ছিল সেটি উনি খেয়াল করেননি। আমারে ওনারা বলছে যে, ‘সাতদিন অপেক্ষা করেন আর মিডিয়ার সাথে কথা বলিয়েন না।’

অপরদিকে, বেঁচে থাকার ন্যূনতম সম্ভাবনা নিয়ে বিছানায় মেহবিশ জাহান। দেড় বছর হলো বিয়ে হয়েছিল তার, এখন ডাক্তারের অ্যাপ্রোনে কাউকে দেখলেই আঁতকে উঠছে মেহবিশ।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেহবিশের বাবা শেখ জসিম উদ্দিন আরও বলেন, আমি মনের দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল একজন মানুষ। আমার মেয়েটা আমাকে সাহস জােগাতো সবসময়। সেই মেয়েটা আমার চাইতেও দুর্বল হয়ে গেছে। আমি করজোড়ে সবার কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।

রোগীর শ্বশুর আরকানউল্লাহ শ্যামল বলেন, শুরুতেই উনি ভুলটা করেছেন। তারপর ৩ ঘণ্টা গাফিলতি করে রোগীকে মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলেছেন। ওই ঘটনার পর থেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না ডা. আরেফিন। ফোনেও পাওয়া যায়নি তাকে। যেহেতু অভিযোগ হাসপাতালের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই, তাই সব প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন হাসপাতাল ম্যানেজার।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজ হাসপাতালের ম্যানেজার ফরিদ উদ্দিন বলেন, রোগীর অভিভাবকরা সকালে এসে কথা বলে গেছেন। অভিযোগ তুলে নেয়া হয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না অভিযোগ তুলে নেয়া বিষয় না। তারা আমাদের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে গেছেন।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন সদুত্তর পাননি ভুক্তভোগি রোগীর পরিবার। মেডিকেল কাউন্সিলেও ভুল চিকিৎসার লিখিত ওই অভিযোগ জানিয়েছেন মেহবিশের বাবা। হাসপাতাল থেকে কেউ এই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলতে আসেনি জানিয়ে রোগী মেহবিশ জাহানের বাবা শেখ জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের থেকে কোন উত্তর পাইনি। আমাদের রোগীর সাথে যা হয়েছে তা অবশ্যই ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। রোগীর শরীর ভালো নেই। আমার মেয়েটা এখন খুবই অসুস্থ।

আমাদের আজকে এখানে আসার একটাই কারণ, অন্যায় হলে তার প্রতিবাদ অবশ্যই করতে হবে বলে আমরা মনে করি। এই অমানবিক ঘটনার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করি এবং এরকম ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। তার সাথে সাথে দোষী চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক সাজা যেন হয় এটাই আমাদের চাওয়া।

সংগীত পরিচালক শেখ জসীমের মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেহবিশ জাহানের স্বজনদের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন, সংগীত পরিচালক ও সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার, বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান ফাউন্ডেশনের সভাপতি গাজী আব্দুল হাকিম, বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ডালিম কুমার বড়ুয়া, সংগীত শিল্পী ও সংগীত পরিচালক মানাম আহমেদ, সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক ফুয়াদ নাসের বাবু, সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান, গীতিকার ও সুরকার মিল্টন খন্দকার, সংগীত পরিচালক আনিসুর রহমান তনু প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে