রাজধানীর ‘দেব ধোলাই খাল’ কে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে!

0
88

বুড়িগঙ্গা নদী ঘিরেই রাজধানী শহর উৎপত্তি হয়েছে, প্রাচীনকাল থেকেই বুড়িগঙ্গা নদীর সাথে সংযোগ যে কয়টি খাল আছে প্রতিটি খালি যেন পুরো শহরটার শিরা-উপশিরার মত শহর জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে, দেব ধোলাইখাল তার মধ্যে অন্যতম।

এই গুরুত্বপূর্ণ খালটি বুড়িগঙ্গা নদী থেকে শহরের ভিতর দিয়ে দক্ষিণ উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে সোজা নড়াই নদী এবং বালু নদীর সাথে সংযোগ হয়েছে ফলে এই অত্র অঞ্চলের যত ব্যবসায়ীক মালামাল, চলাচল এই পদ দিয়েই। তাই এই পথের আশেপাশের অঞ্চলগুলি ব্যবসায়ী অঞ্চল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। জন সংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে এবং সময়ের সাথে ব্যবসায়িক জনপদ মূল্যায়নের কারণে এই নৌপথ টি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এখন খালটি এখন শুধু নাম মাত্রই।

তবে হ্যাঁ, তৎকালীন সরকারের কর্ম পরিকল্পনার ঘাটতি আছে বিদায় আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী খালটি বিলীনের পথে।

অবশ্যই দ্রুতগতিতে যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তা ঘাটের প্রয়োজন আছে তার মানে এই নয় যে খাল ভরাট করে রাস্তা ঘাট করতে হবে। এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যদিও দেশের সকল নদ-নদী কে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আমি বলবো এ খাল কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অবশ্যই শাস্তির এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে এরকম অধ্যক্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং নগর পরিকল্পনাবিদের কারণে আমাদের এই সুন্দর দেশের শহর গুলি ডাজবিনের শহরে পরিণত করবে।

“দেব ধোলাই খাল” বুড়িগঙ্গা নদী এবং দেবধোলাই খালের সংযোগস্থল ফরাসগঞ্জ ১০০ পায়া ব্রীজ (সূত্রাপুর সুইজগেট), পূর্ব সাইডে মেইল ব্রাক পুলিশ লাইন, সুত্রাপুর লোহারপুল খালপাড় পর্যন্তই খালটি দৃশ্যমান। এরপর গেন্ডারিয়া লোহারপুল হয়ে বানিয়ানগর পাশ দিয়ে খালের উপরে রাস্তা। যাত্রাবাড়ী প্রধান সড়ক থেকে দোলাইপার প্রধান সড়ক পর্যন্ত খালের উপর রাস্তা! খালটি কুতুবখালী দিকে কিছুটা অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ধোলাইপাড় এর প্রধান সড়ক থেকে যাত্রাবাড়ী বড় বাজার হয়ে ডেমরা পুরনো প্রধান সড়ক কোনাপাড়া- মাওতাইল রোড পর্যন্ত রাস্তা পরবর্তীতে কাজলারপাড় থেকে খাল টির কিছুটা দৃশ্যমান দেখা যায়। তবে আশেপাশে বসবাসকারীদের দখলের কারণে সমস্ত ময়লা আবর্জনা ভাগাড় বলা যেতে পারে!

এই ময়লা-আবর্জনার ড্রেন টি (দেব ধোলাই খাল) যদি কোন ভিনদেশী লোক দেখে থাকেন অবশ্যই আমাদের দেশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করে থাকবেন এটা সত্য।

কাজলাপাড় থেকে সোজা উত্তর দিকে মানিক নগর এর মধ্য দিয়ে মুগদা মান্ডা অবস্থিত “গ্রীন মডেল টাউন” যা আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন ল্যান্ড ডেভলপার কোম্পানী মূল ফটকের পাশ দিয়ে মানিকদিয়া, শেহের জায়গা- নন্দীপাড়ার মধ্য দিয়ে ত্রিমোহনীর নড়াই নদীর সাথে সংযোগ হয়েছে। ত্রিমোহনী নাসিরাবাদ ইউনিয়নের নড়াই মুখ থেকে সোজা পূর্বদিকে দেব ধোলাই খাল টি বালু নদীর সঙ্গে সংযোগ হয়েছে।

এখানে বলা বাহুল্য এই দেব ধোলাই খাল টি প্রবাহ কালে অনেকগুলি শাখা খাল সৃষ্টি হয় সেই শাখা খালগুলো কিন্তু দেব ধোলাই খাল এরই অংশ। তবে দুঃখের সহিত বলতে হয় “গ্রীন মডেল টাউন হাউজিং কোম্পানি টি এই দেবধোলাই খাল এর অনেক শাখা অংশগুলি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে। শুধুমাত্র হাউজিং কম্পানি নয় অনেক প্রভাবশালী লোকরাও দেব ধোলাইর অনেক অংশ দখল করে নিয়েছে তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আমাদের জন্য আশার আলো এইযে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী – খাল দখল ও দূষণ মুক্ত করার জন্য যথাযথ সংস্থা এবং কর্তৃপক্ষকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এর চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী নদী ও খাল দখল এবং দূষণের লক্ষ্যে কিছু কার্যকরী ভূমিকা পালন করছেন। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা ক্রমেই ঢাকা দুই সিটি মেয়র এই খাল নদী দখল ও দূষণ মুক্ত করার লক্ষ্যে কিছু ভূমিকা রাখছেন। যদি এই খালটি আবার পুনরুদ্ধার করা যায় তাহলে খালের মধ্য দিয়ে ওয়াটার বাস চলাচলের মাধ্যমে রাস্তার উপর যানবাহন চলাচলের এবং মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক অংশে চাপ কমবে ও সময় বাঁচবে।
তবে দেবধোলাই খালটি সম্পূর্ণরূপে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন তাই জনসাধারণের প্রত্যাশা হচ্ছে অতিসত্বর “দেবধোলাই খাল” এর ভয়াবহ দূষণের ও দখল থেকে মুক্ত হবে।
লেখা: ফজলে সানি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে