ঢাকার সকল খাল বাঁচাতে সিএস নকশায় সীমানা পিলার চায় নোঙর

0
53
দখল হয়ে যাওয়া ঢাকার সকল খাল সুরক্ষায় ৭ দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে ‘নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন নোঙর বাংলাদেশ’

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর শহর হওয়ার কথা ছিলো নদীমাতৃক বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর। অথচ দুর্ভাগ্য আমাদের যে পৃথিবীর সবচেয়ে অবহেলিত শহর আমাদের রাজধানী ঢাকা। গত চারশত বছরের পুরোনো এই প্রচীন শহরটি ঘিরে ছিলো অসংখ্য নদী ও খাল যা এখন বিলীন প্রায়।

দখল হয়ে যাওয়া ঢাকার সকল খাল সুরক্ষায় ৭ দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে ‘নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন নোঙর বাংলাদেশ’। আজ শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সকাল ১১ ঘটিকায় উত্তর বাড্ডার সুতিভোলা খালের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এ প্রসঙ্গে নোঙর বাংলাদেশ এ-র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সুমন শামস বলেন, গত পঞ্চাশ বছরে ব্যবধানে রাজধানী ঢাকা শহরের ৪৭ খালের মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ২৬টি খাল!  এ জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক, ভূমিখেকো নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের অসৎ কর্মকর্তারা দায়ী।সংশ্লিষ্টদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিতে দখল হয়ে গেছে শহরের ২১টি খাল।যে কারণে প্রতি বর্ষায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ঢাকার অধিকাংশ রাস্তায় পানি জমে যায়।চরম পরিবেশ দূষণে গণমানুষে ভোগা্ন্তির দৃশ্য দেখে শুরু হয় খাল উদ্ধার করার আলোচনা।কিন্ত সে কাজ আর শেষ হয় না! এক সময় ঢাকা শহরের বেশিরভাগ খাল ১৫০ ফুটের বেশি প্রস্থ ছিল। খালগুলো বৃষ্টির পানি ধারণ ও নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহার হতো। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর মাত্র চার যুগের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকা মহানগরী এলাকার অনেকগুলো খাল অবৈধ দখলের কারণে বিলুপ্ত হয়েছে। যেগুলো রয়েছে তার বেশিরভাগই সঙ্কুচিত হয়ে ১০/২০ ফুটে নেমে এসেছে।

দখল হয়ে যাওয়া ঢাকার সকল খাল সুরক্ষায় ৭ দফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে ‘নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন নোঙর বাংলাদেশ’

ঢাকার প্রধান চারটি নদী এ শহরে ৪৭টি খাল সংযুক্ত রেখে ছিল।সূত্রাপুর-লোহারপুল হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী, মোহাম্মদপুরের বছিলা হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী, উত্তরার আবদুল্লাহপুর ও উত্তরখান হয়ে তুরাগ নদ, খিলক্ষেত-ডুমনি হয়ে বালু নদী ও মানিকনগর হয়ে শীতলক্ষ্যা নদী। নদী ও খালগুলো দখল হয়ে যাবার পেছনে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উত্তরা, বনানী, বনশ্রী, নিকুঞ্জসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক বড় বড় প্রজেক্ট দায়ী।এই আবাসিক প্রজেক্টগুলো গড়ে তোলার সময় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।ঢাকার চার পাশের নদী থেকে ভেতরের খালগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার আরেকটি কারণ ৯০ এর দশক তৈরি করা ৩৪ কিলোমিটার শহর রক্ষা বাঁধ।বন্যার পানি যাতে শহরে ঢুকতে না পারে সে জন্য এই বাঁধ দেওয়া হয়ে ছিলো। খালের পানি নদীতে নেওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয় পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো বা রেগুলেটর।এখন সেই রেগুলেটরগুলো অকার্যকর হওয়ায় শহরের খালের পানি নদীতে নেমে যোতে পারছে না।

রাজধানীর সকল খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ, সিএস নকশায় খালের সীমানা পিলার স্থাপন, খালের সংগে  নদীর সংযোগ, নৌকা  চলাচলের উপযোগী করে সকল খাল সংরক্ষণ, গুলশান লেকের সাথে সুতিভোলা  খালের সংযোগ, ঢাকা ওয়াসার কার্যকরী ভূমিকা,.খাল সুরক্ষায় সকল কালভার্ট অপসারণ চাই; এ-ই ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করে ‘নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক সংগঠন নোঙর বাংলাদেশ’।

এ সময় উপস্তিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটিকর্পোরেশনের ৩৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিরর জনাব শফিকুল ইসলাম বাছেক, বাংলাদেশ আওয়ামী মৎসজিবী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক জনাব এস এম সিদ্দিক মামুন, চিত্রশিল্পী রোকসানা আক্তার তুহিন, নোঙর বাংলাদেশ এ-র জনাব ফজলে সানি, বহারুল ইসলাম টিটু, দর্পন জামিল প্রমুখ।

অবৈধ দখলের কারণে নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ২৬ খালের মধ্যে শহরের পশ্চিমাংশে আছে কাটাসুর, হাজারীবাগ, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, আবদুল্লাহপুর, রামচন্দ্রপুর, বাউনিয়া, দ্বিগুণ, দিয়াবাড়ি, ধোলাই, রায়েরবাজার, বাইশটেকি ও শাহজাহানপুর খাল। পূর্বাংশে আছে জিরানী, মান্ডা, মেরাদিয়া-গজারিয়া, কসাইবাড়ি, শাহজাহানপুর, শাহজাদপুর, সুতিভোলা, ডুমনি, বোয়ালিয়া, রামপুরা, গোবিন্দপুর, সেগুনবাগিচা, খিলগাঁও-বাসাবো খাল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে