ধর্ষক মাসুদ বেপারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

0
50
রায় ঘোষণার পর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাসুদ বেপারীকে। হলুদ সার্ট পরা বেকসুর খালাস প্রাপ্ত আসামী শরীফ সর্দার (২১)।

শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার সাবেক পৌর মেয়র ইউনুস বেপারীর পুত্র মাসুদ বেপারীকে ধর্ষণের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে শরীয়তপুর জেলা জজ আদালত। বিশেষ প্রতিবেদক: আনোয়ার ফরিদী:

দণ্ডপ্রাপ্ত মাসুদ বেপারী (৩১)।

অন্যদিকে ধর্ষকের সহযোগী হিসাবে অভিযুক্ত জাজিরা ডিগ্রিরকলেজের ছাত্র শরীফ সর্দারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত।

গত বুধবার ২৪ নভেম্বর সকাল ১১ টায় শরীয়তপুর জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-এর বিচারক আব্দুস সালাম এ রায় ঘোষণা করেন।

ঘটনার সূত্রপাত: এ ঘটনার ভিকটিম জাজিরার একটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর বয়ানে জানা যায়, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে একই গ্রামের বাসিন্দা জাজিরা ডিগ্রি কলেজের ছাত্র শরীফ সরদারের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে শরীফ সরদার অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করার জন্য আমাকে এড়িয়ে যেতে থাকে। উপায়ন্তর না দেখে আমি আমার দূর সম্পর্কের ভগ্নিপতি জাজিরা পৌরসভার সাবেক পৌর মেয়র ইউনুস বেপারীর পুত্র মাসুদ বেপারীর স্বরণাপন্ন হই।

আকস্মিক ছন্দপতন: ২০১৯ সালের ২৯ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আসামী মাসুদ বেপারী আমাকে ফোন দিয়ে বলে, তুমি আমাদের বাসায় আসো। আমি সুমন সরদারকে বাসায় আটকে রেখেছি। ওর বিচার করে তোমার সঙ্গে বিয়ে দেবো। এসময় আমি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পার্টটাইম চাকরি করতাম।

মাসুদ ব্যাপারির ফোন পেয়ে আমি সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে তার হরিয়াশা গ্রামের বাড়িতে যাই। এসময় আমি জানতে চাই, সাদিয়া আপা কোথায়? উত্তরে মাসুদ বেপারী জানায়, তোমার আপা ভিতরের রুমে ঘুমাইয়া আছে। তুমি ভিতরে যাও।

আমি ভেতরে যাওয়া মাত্র মাসুদ বেপারী ঘরের দরজা আটকে আমাকে বিছানার উপর ফেলে একাধিকবার ধর্ষণ করে। অতঃপর ভয় দেখিয়ে বলে, এই ঘটনা জানাজানি হলে তোমাকে শেষ করে ফেলবো। এসময় আসামী মাসুদ বেপারী বাথরুমে ঢুকলে আমি কৌশলে সেখান থেকে বেরিয়ে ওই বাড়ি সংলগ্ন রশীদ বেপারীর বাড়ির সামনে গিয়ে চিৎকার করতে থাকি। অন্যদিকে আসামী এবং তার সঙ্গের লোকজন আমাকে ধাওয়া করছিল। আমার চিৎকারে রশীদ বেপারী, তার স্ত্রী এবং অন্যান্য লোকজন এসে পড়লে তারা পালিয়ে যায়।

উল্লেখ্য, আসামীর পিতা একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় থানার ওসি মামলা দায়ের করতে গড়িমসি করছিলেন। এমনকি তারা ভিকটিমকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার জন্যও ভিকটিমের পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।

এক্ষেত্রে তৎকালীন এসপি আবদুল মোমেন-এর সরাসরি হস্তক্ষেপে পরদিন সকালে মামলা দায়ের করা হয়। আসামীকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আসামী মাসুদ বেপারীর সহযোগী শরীফ সরদারকেও আটক করে পুলিশ।

এ মামলা আদালতে যাওয়ার পর ঘটে আরেক ঘটনা। সেই সময়ে একজন নারী বিচারক আসামীদের জামিন দিয়ে দিলে শরীয়তপুরসহ সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরবর্তী সময়ে বিচারককে অপসারণ পর্যন্ত করা হয়। এরপর মাননীয় জেলা জজ দায়িত্ব নিয়ে আসামীদের জামিন বাতিল করে তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

তদন্ত, চার্জশিট প্রদান এবং আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে প্রায় ২ বছর ৫ মাস পর এ মামলার রায় প্রদান করা হলো।

বাদিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান রোকন। তাঁর সহযোগী হিসাবে ছিলেন অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম সজিব ও অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দীন উজ্জ্বল এবং আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান কবীর।

তবে এ মামলার বাদি নির্যাতিত ওই নারী এ প্রতিবেদককে জানান, এই রায়ে তারা সন্তষ্ট নন। রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে