যে দলেই থাকুক-একজন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাই: প্রধানমন্ত্রী

0
10
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্র্রধানমন্ত্রী। ছবি : পিএমও

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে দেশের গৌরব সমুন্নত রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেন শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতায় সর্বত্র প্রশংসিত হতে পারেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে দেশের গৌরব সমুন্নত রাখতে পারেন, সেটাই কামনা করি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২১’-এর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এদিন সকালে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের দেওয়া সংবর্ধনা এবং ২০২০-২১ সালের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সদস্যদের পদকে ভূষিতকরণ অনুষ্ঠানে। ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে এ অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যেখানেই থাকুক, যে দলেই থাকুক—একজন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাই। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই তিনি তাঁর সম্মান পাবেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়াসহ তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করতে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২১’-এর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হবে জনগণের বাহিনী তথা পিপলস আর্মি।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতির অহংকার। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে, আমরা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলব, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসে আজকের এই দিনটি এক বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। যুদ্ধের বিজয় ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা যৌথভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করেন। ডিসেম্বরের শুরুতে সম্মিলিত বাহিনীর সঙ্গে মিত্র বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ আক্রমণে পর্যুদস্ত পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথা জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।’

তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্য ও তাঁদের পরিবারবর্গের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবাই সচেতন থাকবে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান অন্যদের মধ্যে সেনাকুঞ্জে উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতিরা, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ সদস্যরা, সাবেক প্রধান উপদেষ্টারা, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা, ডেপুটি স্পিকার, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা, বিচারপতিরা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মুখ্য সচিব, সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা, বাহিনীত্রয়ের সাবেক প্রধানরা, ২০২১ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, স্বাধীনতাযুদ্ধের সব বীরশ্রেষ্ঠর উত্তরাধিকারীরা, স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীরা, উচ্চপদস্থ অসামরিক কর্মকর্তারা এবং তিন বাহিনীর চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

শিখা অনির্বাণে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী সশস্ত্র বাহিনীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম বাসসকে এ খবর জানান। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পরে শিখা অনির্বাণ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে স্বাগত জানান।

মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা এবং পদক প্রদান অনুষ্ঠান

সকালে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারদের দেওয়া সংবর্ধনা এবং ২০২০-২১ সালের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সদস্যদের পদকে ভূষিতকরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সে সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সশস্ত্র বাহিনী দিবসে আমি এটুকুই চাই, দেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে কোনো রকম ব্যাহত না হয়।’

মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়াসহ তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের সম্মান প্রকৃতপক্ষে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর হারিয়ে গিয়েছিল। সেই সম্মানটা আবার যেন ফিরে আসে, আমরা তার ব্যবস্থা নিয়েছি। যে যেখানেই থাকুক, যে দলেই থাকুক—একজন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাই। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই তিনি তাঁর সম্মান পাবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে, বাংলাদেশকে বিশ্বমর্যাদায় আমরা আজকে নিয়ে এসেছি। এই মর্যাদা ধরে রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ আমরা গড়ে তুলব। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।’

তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকেও এ সময় অভিনন্দন জানান। সূত্র : বাসস।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে