ভারতে করোনায় আক্রান্ত প্রায় তিন লাখ, তীব্র অক্সিজেন সংকট

0
15
স্বজন হারানোর বেদনা। দিল্লির একটি মর্গের সামনের দৃশ্য।

ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত দুই লাখ ৯৫ হাজার মানুষ। মৃত্যও দুই হাজার ছাড়িয়েছে। দেশজুড়ে তীব্র অক্সিজেন সংকট।

পরিস্থিতি ভয়াবহ। একদিনে প্রায় তিন লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। হাসপাতালে জায়গা নেই। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র অক্সিজেন সংকট। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা দিল্লি ও মুম্বইয়ের। দিল্লিতে অনেক হাসপাতালেই অক্সিজেন শেষ হওয়ার মুখে।

হাইকোর্টের ধমক ও রাজনীতিকদের বারবার আবেদনের পর রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে ভোররাতে অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। তবে তা দিয়ে এক-দুই দিনই চলবে।

পরিস্থিতি কোন জায়গায় গেছে তা পটপরগঞ্জের ম্যাক্স হাসপাতালের পরিস্থিতি থেকে বোঝা যাবে। সেখানে অক্সিজেন পৌঁছনোর কথা ছিল রাত দুটোয়। পৌঁছেছে সকাল আটটায়। যে কোনো সময় তাদের অক্সিজেন ফুরিয়ে যেতে পারত। ম্যাক্সে তিনশ রোগী ভর্তি আছেন। তার মধ্যে দুইশজনকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে।

পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকারের সিদ্ধান্তে। সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে,উত্তর প্রদেশেও অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। তারপর যৌগী আদিত্যনাথ সরকার নয়ডায় অক্সিজেন প্ল্যান্টে দুইজন সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে। তারা ২৪ ঘণ্টা নজর রাখবেন, সেখান থেকে অক্সিজেন যেন গৌতম বুদ্ধ নগর জেলার করোনা হাসপাতালে যায়। এখান থেকে দিল্লিতেও অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এই নির্দেশের পর তা ব্যাহত হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গতরাতে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, দিল্লিতে তীব্র অক্সিজেন সংকট চলছে। গঙ্গারাম হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টার মতো অক্সিজেন আছে। সেখানে ৪৮৫টি কোভিড বেড আছে। করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৭৫ জন। ১২০ জন আইসিইউ-তে। এরপর গভীর রাতে ও ভোরবেলায় গঙ্গারামে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে।

ভারতে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এই প্রথমবার এত মানুষ একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন দুই হাজারের বেশি মানুষ। মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। দিল্লিতে আক্রান্ত ২৮ হাজারের বেশি। উপরের ছবিটি দিল্লির একটি হাসপাতালের।

দিল্লি সরকার হাইকোর্টেও জানিয়েছিল, রাজধানীর জন্য বরাদ্দ অক্সিজেন উত্তর প্রদেশকে দেয়া হচ্ছে। উত্তর প্রদেশ সরকারও দিল্লিতে অক্সিজেন পাঠাতে দিচ্ছে না। বিচারপতি বিপিন সাংভি ও বিচারপতি রেখা পাল্লি বলেন, ”যুক্তিহীনভাবে ওষুধ ও অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস অন্য রাজ্যে পাঠিয়ে দেয়ার মানে তো আমাদের শাস্তি দেয়া।” কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত ২২ এপ্রিল থেকে শিল্পে অক্সিজেন ব্যবহার করা যাবে না। বিচারপতিদের প্রশ্ন, ”২২ এপ্রিল থে্কে কেন বন্ধ করা হচ্ছে? কেন তার আগে বন্ধ করা হলো না? যদি অক্সিজেন সংকট মেটানো না যায়, তা হলে দেশ অনেক বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।”

লকডাউন চান না মোদী

এই পরিস্থিতিতেও লকডাউন চান না প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বলেছেন, লকডাউন হলো একেবারে শেষ অস্ত্র। তিনি চান, মানুষ আরো দায়িত্বশীল হোক। তারা ধৈর্য ধরুন, মাস্ক পরুন, দূরত্ব বজায় রাখুন। আর প্রতিটি পাড়ায় নতুন প্রজন্ম কমিটি করুক। করোনাবিধি মানুষ মানছে কি না তার উপর নজর রাখুক তারা।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ”মানুষ এগিয়ে এলে লকডাউনের কোনো প্রশ্নই নেই। আমাদের লকডাউনের হাত থেকে বাঁচতে হবে।” তিনি টিকা নেয়ার উপর জোর দিয়েছেন।

কংগ্রেস সহ প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দল মোদীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে। বিরোধীদের মতে, মোদী নিজের ও কেন্দ্রীয় সরকারের দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। তিনি সব দায় দেশের মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে অব্যাহতি পেতে চাইছেন।

দিন কয়েক আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কবি ও প্রাবন্ধিক শঙ্খ ঘোষ। বুধবার সকালে কলকাতার বাসভবনে তার মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
(পিটিআই, এনডিটিভি)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে