দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর রেকর্ড

0
19

দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়াল। গত ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ একজনের মৃত্যু হয়। এরপর ক্রমেই সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ে। ওই বছরের ৩০ জুন ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে বছরজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা আর বাড়েনি। গত ৩১ মার্চ ৫২ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর দৈনিক মৃত্যু আর কখনও ৫০-এর নিচে নামেনি। দু’দিন ধরে মৃত্যু ৯০ জনের ওপরে থাকছে। এর মধ্যে গত বুধবার ৯৬ জন এবং বৃহস্পতিবার ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১ মৃতসহ মোট ১০ হাজার ১৮২ জনের মৃত্যু হলো। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে চার হাজার ৪১৭ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত সাত লাখ ১১ হাজার ৭৭৯ জনে পৌঁছাল। এর বিপরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল ও বাসায় চিকিৎসাধীন আরও পাঁচ হাজার ৬৯৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে সংক্রমিত মোট ছয় লাখ দুই হাজার ৯০৮ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।

করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, দেশে প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর চলতি বছরের ৩০ মার্চ তা ছয় লাখ ছাড়ায়। আর পরের ১৬ দিনেই শনাক্ত হয়েছে এক লাখের বেশি মানুষ।

চলতি বছরের ৩১ মার্চ মৃত্যু ৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত ১৬ দিনে প্রায় এক হাজার ২০০ জনের মৃত্যু হলো। গত বছরের জুন-জুলাইয়ে সর্বোচ্চ সংক্রমণের দ্বিগুণ হারে শনাক্ত ও মৃত্যু হচ্ছে। গত বছরের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময় এক মাসে শনাক্ত ছিল ৮৮৪০৩ জন, মৃত্যু হয় ১২২৩ জনের। আর সর্বশেষ ১৭ দিনে শনাক্ত এক লাখ পাঁচ হাজার ৮৪২ জন, মৃত্যু হয় ১১৮৮ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সারাদেশে ২৫৭টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৭০৭১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের দিনের নমুনাসহ মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ হাজার ৯০৬টি। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৮টি। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।

করোনায় মৃত ১০১ জনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৬৭ জন এবং নারী ৩৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫৯, চট্টগ্রামে ২০, রাজশাহীতে তিন, খুলনায় পাঁচ, বরিশালে চার, সিলেটে এক, রংপুরে ছয় এবং ময়মনসিংহে তিনজন। মৃতদের মধ্যে ৯৪ জন হাসপাতালে এবং সাতজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। মৃতদের মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী সাতজন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী আটজন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৩ জন এবং ৬০ বছরের ওপরে ৬৩ জন রয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে ৫২৫ জনকে। একই সময়ে আইসোলেশন থেকে ৩৮৮ জন ছাড় পেয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে গেছেন এক লাখ ১৪ হাজার ৬০৭ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৯৭ হাজার ১০৬ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৭ হাজার ৫০১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৬২৬ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। একই সময়ে কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন এক হাজার ৬৯৬ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ৪৫৫ জনকে। কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ছয় লাখ ৩২ হাজার ৯৫৬ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫০ হাজার ৪৯৯ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যর্থতায় মৃত্যু বাড়ছে, অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের :করোনায় মৃত্যু বৃদ্ধির পেছনে স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যর্থতাকে দায়ী করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, শনাক্তের হার ২৩ শতাংশ বা তার আশপাশে রয়েছে। নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্তের সংখ্যা কম হচ্ছে। ৩৮ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষার পর দেখা গিয়েছিল সাড়ে সাত হাজারের ওপর শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অর্ধেকে নামানোর পর শনাক্তের সংখ্যা কমছে। কিন্তু শনাক্তের হার একই রয়েছে। তার মানে নমুনা পরীক্ষা বাড়লে শনাক্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়া মানে শনাক্ত ব্যক্তিরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। শনাক্ত ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিকিৎসার আওতায় আনা গেলে মৃত্যু কমানো যেত। সময় পেয়েও চিকিৎসা পরিধি কেন বাড়ানো গেল না- এটি একটি বড় প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী তো জেলায় জেলায় আইসিইউ ও হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্য বিভাগ কি সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছে? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করলে আজ এই পরিণতি হতো না। সংক্রমিত হলেও মৃত্যু কমিয়ে আনা যেত।

প্রায় একই অভিযোগ করে বিএমএর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে, এজন্য বলা যাবে যে, সময় পেয়েও তা কাজে লাগায়নি। তাহলে প্রশ্ন হলো- এতদিন স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ কি ঘুমিয়ে ছিল। না হলে কী করল? কেন আইসিইউ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটরের সংখ্যা বাড়ল না? করোনা সংক্রমিত মানুষের চিকিৎসার জন্য এই সামগ্রীগুলো প্রয়োজনীয়। এসব সাপোর্ট না লাগলে তার তো হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। আর হাসপাতালে গিয়ে এসব সুবিধা না মিললে তাহলে ভর্তি হয়ে কী হবে? সুতরাং মূল সমস্যাটি হচ্ছে চিকিৎসার অপর্যাপ্ততা।

তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তবে প্রতিদিনই আইসিইউ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটরসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এত পরিমাণ মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, যা সামাল দিতে গিয়ে পুরো স্বাস্থ্য বিভাগকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর পেছনে ছিল কয়েক মাস ধরে স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মাস্ক ব্যবহার না করা। মানুষ সাহসী হয়ে উঠেছিল। যার ফল এখন সবাইকে ভোগ করতে হচ্ছে। সুতরাং সরকার জারি করা বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে হবে। তাহলে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে