লকডাউনে ভারতে শিকার বেড়েছে

0
249

ভারতে লকডাউন চলাকালীন শিকারের সংখ্যা বেড়েছে বলে রিপোর্ট দিয়েছে একটি সংস্থা। কেন শিকার বাড়লো, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নানা মত।

লকডাউনে চোরা শিকারির উৎপাত বেড়েছে ভারতে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফেডারেশনের (ডাব্লিউডাব্লিউএফ) একটি রিপোর্ট এমনই তথ্য দিয়েছে। যাতে দেখা গিয়েছে লকডাউনের আগের ছয় সপ্তাহে গোটা দেশে বন্যপ্রাণী শিকার হয়েছে ৩৫টি। কিন্তু লকডাউনের ছয় সপ্তাহে বন্যপ্রাণী হত্যা হয়েছে ৮৮টি। শতকরা হিসেবে বন্যপ্রাণী শিকারের প্রবণতা ৪৪ শতাংশ বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডাব্লিউডাব্লিউএফের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মূলত খাওয়ার তাগিদেই এই সময়ে বন্যপ্রাণী হত্যা বেড়েছে। দেখা গিয়েছে বুনো শুয়োর, হরিণ, চিতলের মতো প্রাণীকে হত্যা করা হয়েছে বেশি। তুলনায় কচ্ছপ বা বাঘ জাতীয় প্রাণীর হত্যা কম হয়েছে। যদিও গত দেড় মাসে বেশ কিছু চিতা শিকারের খবরও পাওয়া গিয়েছে।

প্রাক্তন ফরেস্ট অফিসার কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ”জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম বা বন বস্তিগুলিতে যাঁরা বসবাস করেন, এক সময় তাঁদের অনেকেই চোরা শিকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে সরকার তাঁদেরকেই জঙ্গল সংরক্ষণের কাজ দিয়ে মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু লকডাউন হয়ে যাওয়ায় দেশের বহু জায়গাতেই জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ফলে কেউ কেউ বাঁচার তাগিদেই ফের শিকার করতে বাধ্য হয়েছেন।” কাঞ্চনবাবুর বক্তব্য, রিপোর্টে স্পষ্টই বলা হয়েছে, মূলত খাওয়ার জন্য বন্য পশুর হত্যা হয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে এর সঙ্গে চোরা কারবারের সম্পর্ক বিশেষ নেই। লকডাউন ক্রমশ উঠে গেলে এবং গ্রামের মানুষরা কাজ ফিরে পেলে শিকারও কমে যাবে বলে তাঁর ধারণা।

বিপর্যস্ত সুন্দরবনএকমাত্র সম্বল৮০ বছরের এই বৃদ্ধা আমফানে ঘর হারিয়েছেন, হারিয়েছেন স্বজন। কেবল এই ভেড়াটিকে নিয়ে বেঁচে আছেন রাস্তার ধারে।

কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, মার্চ থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে শিকার উৎসব হয়। লকডাউনের জন্য বহু জায়গায় বড় আকারের শিকার উৎসব না হলেও ছোট ছোট করে হয়েছে। প্রতি বছরেই দেখা যায়, এই সময় শিকারের সংখ্যা বাড়ে। ডাব্লিউডাব্লিউএফের পরিসংখ্যানেও তার প্রভাব পড়তে পারে বলে তাঁদের বক্তব্য।

তবে পশ্চিমবঙ্গের বন দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, লকডাউনের সময় বিভিন্ন জঙ্গলেই কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। করোনার জন্য প্রশাসন এই নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছিল। চোরা শিকারিরা বহু জায়গাতেই সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। যার জেরে শিকারের ঘটনাও বেড়েছে। লকডাউন উঠে গেলে নতুন করে জঙ্গলে নজরদারি বাড়ানো হবে। ফলে শিকারের সংখ্যাও কমবে। বস্তুত, চোরা শিকারের জন্য এর মধ্যেই গোটা দেশে ২২২ জনকে গ্রেফতার করেছে বন দফতর। অন্য সময়ের চেয়ে যে সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি। বন দফতরের আধিকারিকদের ধারণা, আগামী কয়েক মাসে নজরদারি অনেকটাই বাড়ানো সম্ভব হবে।

সম্প্রতি কেরালায় হাতির মৃত্যু নিয়ে দেশ জুড়ে আলোচনা হচ্ছে। তারই মধ্যে ডাব্লিউডাব্লিউএফের এই রিপোর্ট পশুপ্রেমীদের মধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছে। তবে বন দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, বন্য পশু শিকারের সংখ্যা বাড়লেও চোরা কারবার বেড়েছে, এমন কথা এখনই বলার সময় আসেনি। ডয়েচে ভেলে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে