জাপানের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ

0
260

জাপান এরইমধ্যে করোনা প্রতিরোধে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় জারি করা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার শুরু করলেও জাপান ভ্রমণে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা করেছে৷ এই নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী দুই মাস পর্যন্ত থাকতে পারে৷

বুধবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে৷ বাংলাদেশ ছাড়া আরো ১০টি দেশ নতুন এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে৷ সেগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, আর্জেন্টিনা, এল সালভাদর, ঘানা, গিনি, কিরগিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা৷

করোনা প্রতিরোধে জাপান তার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নতুন করে এই ১১ দেশ থেকে তাদের দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল৷ এখন জাপানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইউরোপসসহ ১১১টি দেশ ও অঞ্চল৷ তাদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে৷

তবে জাপান ৩১ মের মধ্যে করোনা প্রতিরোধ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জারি করা জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার কাজ শুরু করছে৷ এমনকি ওই তারিখের আগেও তারা জরুরি অবস্থা তুলে নিতে পারে৷ জাপানের ৪৭টি এলাকার মধ্যে ৩৯টি এলাকায় জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷ ওসাকা, টোকিও, হোক্কাইদোর উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপে জরুরি অবস্থা এখনো বহাল আছে৷ যেসব এলাকায় সংক্রমণ কমছে সেখানে তারা জরুরি অবস্থা তুলে নিচ্ছে৷ জাপানে এপর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৬২৩ জন৷ মারা গেছেন ৮৪৬ জন৷

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে জাপানে যাওয়া একটি ফ্লাইটে চারজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়৷ এরমধ্যে একজন বাংলাদেশি নাগরিক৷ বাকি তিনজন জাপানি৷ আর বাংলাদেশে এখনো করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলছে৷ এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে৷ আগামী দুই মাস নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে৷

জাপান ছাড়াও এর আগে চীন, ভারত, কাতার, শ্রীলঙ্কা, বাহরাইন, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, তুরস্ক, ওমান, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর ও কুয়েত বাংলাদেশ থেকে ওইসব দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷

বাংলাদেশ থেকে কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের নিয়েও গেছে৷ আবেদনের ভিত্তিতে এপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ভারত তাদের নাগরিকদের ফেরত নিয়েছে৷

জাপানে বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সরাসরি কোনো মন্তব্য এখনো করেনি৷ আর চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান ফারুক খান এমপি বলেন, ‘‘কোনো দেশ যদি তাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অন্য দেশ থেকে সেই দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সেটা তাদের ব্যাপার৷ নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য এটা তারা করতেই পারে৷ আমরাও তো করছি৷ বিশ্ব পরিস্থিতিই এখন এরকম৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের অবস্থা ভালো৷ আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার দুই দিক বিবেচনায়ই আমাদের অবস্থা ভালো৷’’

তবে তিনি মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ বেশি৷ উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না৷ আর আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি৷ ফলে ঘরে ঘরে খাবার বা ঘরে ঘরে বেতন পৌঁছে দেয়া সম্ভব নয়৷ আসলে আমাদের এখানে ব্যক্তির সচেতনতা সবচেয়ে বেশি দরকার৷ ব্যক্তি সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই৷ কিন্তু সেই সচতেনতা এখানো তেমন আসেনি৷’’

বাংলাদেশে বুধবার পর্যন্ত করোনায় মোট মারা গেছেন ৫৪৪ জন৷ আর মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ হাজার ২৯২ জন৷ গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির আওতায় বাংলাদেশে করোনা প্রতিরোধের চেষ্টা চলে আসছে৷ ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি আছে৷ তবে এরপর সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়বে নাবলে জানা গেছে৷

আইইডিসিআর-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন গণসংক্রমণ চলছে৷ পরিস্থিতি এখনো স্বচ্ছ নয়৷ টেস্ট আরো বাড়ানো গেলে পরিস্থতি হয়তো বোঝা যেত৷ জাপানে করোনার এখন নিম্নগতি৷ তারা বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে৷ এখন তারা বাংলাদেশকে কেন ট্রাভেল ব্যানের আওতায় ফেলেছে তা তারাই বলতে পারবে৷ সারা বিশ্বেই এখন এই পরিস্থিতি চলছে৷ তারা হয়তো কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারেও তো তারা একই ব্যবস্থা নিয়েছে৷’’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে