করোনা লকডাউনে নোঙর’র বুড়িগঙ্গা নদীতে পর্যবেক্ষণ ও মাঝিদের জন্য ইফতার বিতরণ

0
531

করোনা মোকাবেলায় শুক্রবার, ৮ মে ২০২০, দিনব্যাপী বুড়িগঙ্গা নদী পর্যবেক্ষণের সাথে ‘তিন শত’ খেয়া নৌকার মাঝি-মাল্লাদের মধ্যে এক ইফতার বিতরণ কর্মসূচি পাপলন করেছে নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠনটি নোঙর।

রাজধানী ঢাকার প্রধান নদী বুড়িগঙ্গার অক্সিজেন থাকে না বছরের বেশির ভাগ সময়। এ নদীর পানির গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে আর ওঅনেক আগেই।মনুষ্য সৃষ্ট অত্যাচারে বুড়িগঙ্গার পানির রং এতটাই কালো যে খালি চোথে দেখলে আলকাতরা মনে হবে! উৎকট গন্ধে এই নদীর পাশ দিয়ে চলাচল করার সময় নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হয়।

আদি বুড়িগঙ্গা নদীর কুড়ারঘাট এলাকায় নদীর মধ্যে আবর্জ্যনা জমে পানির উপরে বিশাল বিশার স্তর জমে আছে। এই আবর্জ্যনা থেকে মিথেন গ্যাস সৃস্টি হয়েছে। এই বিষাক্ত গ্যাসের ফ্যানার মধ্যেই বুড়িগঙ্গার মাঝিরা খেয়া নৌকা চালাতে গিয়ে অনেক প্রবিণ মাঝিদের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।

নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর পরিবারের অনুসন্ধানে দেখায়ায় যে, পানিতে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে পানিতে ছুড়ে দিলেই দাউদাউ আগুন জ্বলে ওঠে।পলেথিন জমাট হয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। দখলদার প্রভাবশালীরা নদী উভয় দিক থেকে নদীর জায়গায় বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে তুলেছে।

দখলদারদের সুবিধার্থে সিটিকপোর্রেশনের ময়লার ট্রাক নিয়মিত বর্জ্য ফেলে নদী ভরাট করছে! আর সেই সুযোগে ট্রাক স্ট্যান্ড, ট্যাম্পু স্ট্যান্ড, রিকশা গ্যারেজ, মসজিদ নির্মাণ, মন্দির নির্মাণ চলমান রেখেছে দখলদারেরা।

এর মধ্যে করোনার লকডাউনের কারণে একটু একটু করে বদলাচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদীর পানির রঙ। কামরাঙ্গীচর ঠোডা থেকে খোলামোড়া ঘাট এলাকা পর্যন্ত অনুসন্ধানসে দেখা যায় বুড়িগঙ্গার জলে কলকারখানা বন্ধ থাকায় লঞ্চ-স্টিমারের অপরিশোধিত তরল ও কঠিন বর্জ্য পানিতে না থাকায় নদীর প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে।

খেয়া নৌকায় উঠে মানুষ ঘুড়ি ওড়ানোএ প্রতিযোগিতায় আনন্দে মেতে উঠেছে। খেয়া নৌকার যাত্রীদের পারাপারের দৃশ্যেরও দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ঘাটে ভিড়ে থাকা নৌযানগুলো থেকে মাঝেমধ্যেই ফেলা হতো খাবারের পরিত্যক্ত মোড়ক, ফলের খোসা, প্লাস্টিকের বোতলসহ নানা দরণের বর্জ্য; করোনায় এখন সেসব দূষণ বন্ধ থাকলেও রাজধানীর অপরিষোধিত পয়োবর্জ্য পড়ছে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপা্শের নদ-নদীতে।

লকডাউনে চামরা প্রস্তুতকারী ট্যানারি বন্ধ থাকায় ক’দিনের মধ্যেই পুরোপুরি বদলে গেছে দেশের অধিকাংশ নদীর চিত্র।এ যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে দেশের অনেক নদ-নদী।

নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর’র গবেষণা বলছে, মূলত নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার প্রায় হাজারটা কলকারখানা, গার্মেন্টস ও ইপিজেডের বর্জ্য ঢাকার নদীগুলোর পানিকে দূষিত করে নিয়মিত। বুড়িগঙ্গা পাড়ে প্রায় ৫০টি, তুরাগের পাড়ে ৫০টি, টঙ্গী খালের ৩০টি কলকারখানা এবং ধলেশ্বরী নদীর পাশের ট্যানারির বর্জ্যে দূষণ বেড়েছে।

করোনাভাইরাস নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে কিছুটা প্রাণ ফিরেছে প্রায় নদীতে।করোনা ভাইরাস যেনো নদী সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। তবে এর স্থায়ী সমাধানের জন্য সকল কলকারখানার মালিক এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘমেয়াদি ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কোন বিকল্প নেই।

প্রাচীনকালে গঙ্গা নদীর একটি প্রবাহ ধলেশ্বরী হয়ে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশেছিল। সময়ের পরিক্রমায় প্রাকৃতিক কারণে প্রবাহটির গতিপথ পরিবর্তন হয়। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় গঙ্গার সঙ্গে যোগাযোগ। পরবর্তীতে বিচ্ছিন্ন প্রবাহটি বুড়িগঙ্গা নামে পরিচিতি পায়। মূলত ধলেশ্বরী নদী থেকেই বুড়িগঙ্গার উৎপত্তি হওয়া এ নদীটি এখন মানুষেরই অত্যাচারে আজ মরতে বসেছে। অথচ ১৮০০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক আবাসিক প্রতিনিধি জন টেইলর বুড়িগঙ্গা নদীর রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, বর্ষাকালে যখন বুড়িগঙ্গা পানিতে ভরপুর থাকে, তখন দূর থেকে ঢাকাকে দেখায় ভেনিসের মতো।

করোনা ভাইরাস মহামারিতে বাংলাদেশে অঘোষিত লক-ডাউনে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে প্রত্যেকটি নদ-নদীর মাঝিরাও অসহায় হয়ে পড়েছে।

এ সময়ে দেশের সকল নদ-নদীর নৌকার মাঝি, জেলে ও বেদে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার জন্য স্থানীয় বিত্তবান ব্যাক্তিদের এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন নোঙর সভাপতি সুমন শামস। তিনি বলেন আমারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি যা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।

ইফতার বিতরণের শুরু থেকেই বুড়িগঙ্গা নদীর দুই পাশ থেকে হাসিমুখে ছুটে আসতে থাকে খেয়া নৌকার মাঝিরা। কামরাঙ্গীরচর ঠোডা খেয়া ঘাট থেকে ইফতার বিতরণ শুরু করে বুড়িগঙ্গা নদীর খোলামোড়া ঘাট এবং কেরাণীগঞ্জ খেয়া ঘাটের গিয়ে শেষ হয়।

নোঙর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুমন শামস এর নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সংগঠনের সম্মানিত কেন্দ্রীয় সদস্য, মীর মোকাদ্দেস আলী, আমিনুল হক চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, মোহম্মদ শাজাহান, শরাফত আলী, সুমন মোস্তাফিজ ও এফ এইচ সবুজ।

এ ছাড়াও অংশগ্রহণ করেন ‘নোঙর-বুড়িগঙ্গা’ শাখার সম্মানিত সদস্য জনাব মিজানুর রহমান, মোঃ মনির, শাহ নেওয়াজ শাহিন, মোঃ কামাল, খালেদা আক্তার কল্পনা ও চিত্রশিল্পী সবুর খান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে