করোনা: জ্বর সর্দি কাশিতে এত মানুষের মৃত্যু!

0
266

শুক্রবার পর্যন্ত গেল ১৪ দিনে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ মৃত্যুর আগে এদের কারো করোনা টেস্ট করা হয়নি৷ মৃত্যুর পর তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে৷ অধিকাংশের রিপোর্ট এখনো মেলেনি৷

গত বুধবার রাতে টাঙ্গাইলের সখীপুরে শামসুল হক (৫০) নামে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়৷ শামসুল হক কাকড়াজান ইউনিয়নের বড় হামিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন৷ তার নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে৷

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ছালেহ আহাম্মদ (৫৫) নামে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়৷ তিনি উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙ্গালিয়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন৷ তারও নমুনা নেয়া হয়েছে৷

এছাড়া শুক্রবার ভোরে আশ্রাফ উদ্দিন নামে এক যুবক মারা যান৷ তিনি লক্ষীপুর সদর উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাড়িতে মারা যান৷ তার নমুনা নেয়া হয়েছে৷

প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীর এমন মৃত্যুর খবর আসছে৷ সেসব খবরের ভিত্তিতে দেখা গেছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এসব উপসর্গে ভোগা রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা এ বছর বেশি৷

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা স্বাভাবিক মৃত্যু৷ দেশে প্রতিদিন আড়াই হাজার মানুষ মারা যান৷ এখন তো হাসপাতালে রোগী কম৷ তাহলে তারা যাচ্ছেন কোথায়? অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন৷ আমি বলব, কারো যদি করোনা হয় এবং তিনি যদি বাড়িতে থেকে সুস্থ থাকেন তাহলে তো ভালো৷ বুঝতে হবে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি৷”

তবে প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটা অস্বাভাবিক৷ আমি ৩০ বছর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত৷ কখনোই আমি দেখিনি, এভাবে এত মানুষ মারা যেতে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখাবে বলছে, টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট৷

সেখানে আমাদের দেশে নো টেস্ট, নো করোনা৷ এরপর মিনিমাম টেস্ট, মিনিমাম করোনা৷ এখন কিছু টেস্ট হচ্ছে রোগীও ধরা পড়ছে৷ তারপরও বলব, যেটা হচ্ছে পানিতে বরফ খণ্ড ভাসার মতো৷ বরফ খণ্ড যখন ভাসে তার ১১ ভাগ পানির নিচে থাকে আর এক ভাগ উপরে থাকে৷ এখানেও করোনা রোগী সেভাবেই দেখা হচ্ছে৷ আসলে সঠিক সংখ্যাটা আমরা পাচ্ছি না৷”

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯৩০ জন, যা ২০১৯ সালে ছিল ৮২০ জন, ২০১৮ সালে এক হাজার ১০ জন এবং ২০১৭ সালে ছিল ১৪১ জন৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই রোগে আক্রান্ত হন ২৬ হাজার ৪৬১ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ২৪ হাজার ৯৫০ জন৷ গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল সাত হাজার ৫২০ জন ও ফেব্রুয়ারিতে চার হাজার ৪৬০৷ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ছিল ছয় হাজার ৭১২ জন ও ফেব্রুয়ারিতে চার হাজার ১১৫ জন৷

বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো গেল দু’সপ্তাহে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে৷

শুক্রবার পর্যন্ত গেল ১৪ দিনে ১১৬ জন পর্যন্ত মৃত্যুর খবর দিয়েছে দৈনিক প্রথম আলো৷ আর দৈনিক সমকাল গেল ১২ দিনে ১১৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে৷ পত্রিকাটি বলছে, এদের কারো শরীরে করোনা ভাইরাস ছিল কি না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এত মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিক না৷ তবে টেস্ট না করে আসলে বলা ঠিক হবে না, এরা করোনা আক্রান্ত ছিল কি-না৷ তবে এটা বলা যায়, এদের সবার যদি টেস্ট করা হতো তাহলে হয়তো করোনা রোগী পাওয়া গেলেও যেতে পারত৷ শুরুতে আমাদের যেভাবে টেস্ট হয়েছে সেটা একেবারেই ঠিক ছিল না৷ এখন তো কিছু হচ্ছে৷ আসলে আরো টেস্ট বাড়ানো দরকার৷ তাহলে হয়ত আসল চিত্র উঠে আসবে৷”

অভিযোগ রয়েছে, এসব মৃত্যুর ঘটনায় নমুনা নেয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তারা করোনা আক্রান্ত ছিলেন কি-না সে রিপোর্ট পরে আর মিলছে না৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিপোর্ট মিললে মানুষ সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতো৷

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে