জলবায়ু পরিবর্তন: গ্রেটা থুনবার্গ কে এবং আসলে কী চায়?

0
357
বার্লিনের দেয়ালে আঁকা গ্রেটার মুর‍্যৈাল

স্কুল পালিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে আন্তর্জাতিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচয় পাওয়া সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ এখন পরিবেশ আন্দোলনের পরিচিত মুখ।

তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে আয়োজিত বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে।

কিন্তু এই গ্রেটা থুনবার্গ আসলে কে এবং সে আসলে কী চায়?

গ্রেটা থুনবার্গ কে?

সুইডেনের স্টকহোমে বড় হওয়া গ্রেটা থুনবার্গের বয়স ১৭। তার মা ম্যালেনা আর্নম্যান একজন অপেরা গায়িকা।

তার বাবা স্ভান্তে থুনবার্গ একজন অভিনেতা এবং রসায়নে নোবেল পুরস্কার জয়ী বিজ্ঞানী স্ভান্তে আরহেনিয়াসের উত্তরসূরি।

গ্রেটার বাবা বলেন তার বড় মেয়ে গ্রেটা আট বছর বয়সে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জানতে পারে। তবে তার বাবা মা কেউই অ্যাক্টিভিস্ট ধাঁচের ছিলেন না। গ্রেটার অ্যাসপারজার্স সিনড্রোম রয়েছে, যা এক ধরনের বিকাশগত ব্যাধি।

পাল তোলা নৌকায় নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন গ্রেটা থুনবার্গ
Image caption পাল তোলা নৌকায় নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন গ্রেটা থুনবার্গ

কবে থেকে তিনি ক্যাম্পেইনিং শুরু করলেন?

২০১৮ সালের মে মাসে গ্রেটার বয়স যখন ১৫, সেসময় গ্রেটা স্থানীয় এক পত্রিকার জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে এক রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পান।

তিন মাস পর অগাস্টে সুইডেনের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভ করা শুরু করেন তিনি। সুইডেন সরকার যেন ২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের আলোচনায় ঠিক হওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, সেলক্ষ্যে বিক্ষোভ করে গ্রেটা।

‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’ লেখা একটি লেখা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে তিনি পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়ান এবং শুক্রবার স্কুল ফাঁকি দেয়া শুরু করেন। বিশ্বব্যাপী ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও তিনি আহ্বান জানান যেন তারা তার সাথে প্রতিবাদে যোগ দেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিক্ষোভ ভাইরাল হয় এবং তার প্রতিবাদের কারণ দিনদিন জনপ্রিয়তা পায়।

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা গ্রেটার প্রতিবাদের আদলে প্রতিবাদ শুরু করে। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাশট্যাগ ফ্রাইডেজফরফিউচার জনপ্রিয় হয়।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী গ্রেটার প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজ নিজ দেশে বিক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ট্রেনে ভ্রমণ করে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি।

ব্রিস্টলে মার্চের সময় গ্রেটা
Image caption ব্রিস্টলে মার্চের সময় গ্রেটা

গ্রেটার অর্জন কী?

পুরো ২০১৯ সালই ক্যাম্পেইনিং করতে, জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে এবং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যোগ দিতে গ্রেটা স্কুল থেকে ছুটি নেন।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে বক্তব্য দিতে নিউ ইয়র্কে যান গ্রেটা। যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্য বিমানে উঠতে অস্বীকৃতি জানান তিনি, কারণ বিমানের জ্বালানি পুড়ালে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

গ্রেটা নিউ ইয়র্কে একটি রেসিং ইয়টে করে যান, যেই যাত্রায় তার সময় লাগে দুই সপ্তাহ। নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর পর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সীমিত করার উদ্দেশ্যে প্রতিবাদ করে।

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে গ্রেটা রাজনীতিবিদদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশ্নের উত্তরের জন্য তরুণদের ওপর নির্ভর করছেন।

গ্রেটা বলেন, “তোমাদের কত দুঃসাহস। আমার এখানে থাকা উচিত না। আমার স্কুলে থাকার কথা। তবুও তোমরা আমাদের মত তরুণদের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছো কীভাবে!”

টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষনা করা হয় তাকে।

স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ব্যানারের পাশে গ্রেটা
Image caption স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ব্যানারের পাশে গ্রেটা

গ্রেটা কী চায়?

গ্রেটার মতে, বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর সরকাররা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্বন নিঃসরণ সীমিত রাখার জন্য যথেষ্ট দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

তরুণদের ভবিষ্যত ঝুঁকির মধ্যে ফেলার জন্যও নেতাদের সমালোচনা করেন গ্রেটা। প্রাথমিক ধাপে তার বিক্ষোভ ছিল সুইডিশ সরকারের জলবায়ু বিষয়ক লক্ষ্যমাত্রার বিপক্ষে। তবে বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান যেন তারা তাদের নিজ নিজ দেশে একই ধরণের দাবি তুলে প্রতিবাদ শুরু করে।

খ্যাতি বাড়ার সাথে সাথে বিশ্বের নানা দেশের সরকারের কাছে বিভিন্ন ধরণের দাবি তুলে ধরেন।

২০১৯ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন, এবছরে দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলন ছাড়াও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য দেন তিনি।

দাভোসে যেভাবে বিতণ্ডায় জড়ালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও গ্রেটা থুনবার্গ

মানুষ তার সম্পর্কে কী বলেন?

গ্রেটার স্কুল বাদ দিয়ে বিক্ষোভ কার্যক্রম বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। জলবায়ু বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্ট, বিজ্ঞানী, বিশ্বনেতা এমনকি পোপও গ্রেটাকে সমর্থন করে তাকে ‘কাজ চালিয়ে’ যেতে বলেছেন।

প্রকৃতিবিদ এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো গ্রেটার প্রশংসা করেছেন এই বলে যে সে যা অর্জন করেছে তা আর কেউ করতে পারেনি।

গ্রেটাকে তিনি বলেছেন, “তুমি পৃথিবীকে জাগিয়ে তুলেছ। আমি তোমার কাজে গর্বিত।”

তবে তার বার্তা সবাই সহজভাবে নেয়নি। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে বক্তব্য রাখার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সমালোচনা করেছেন এই বলে যে, গ্রেটার নিজের ‘রাগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা সমাধানে কাজ করা উচিত।’

এর কিছুদিন পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গ্রেটাকে ‘দয়ালু কিন্তু কম অবগত কিশোরী’ বলে সমালোচনা করেন।

জানুয়ারিতে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভেন এমনুচিন গ্রেটাকে পড়াশোনা করার উপদেশ দেন। বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে