


অভিন্ন নদী তিস্তার উপর শুধু বাঁধ-ব্যারেজ নয়, ২শ’ কিলোমিটারের বেশী খাল খনন করে তিস্তার পানি সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। এসব খাল বা ক্যানেল দিয়ে ৫ লাখ ২৭ হাজার হেক্টরের বেশী (১৩ লাখ একর) পরিমাণ জমিতে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভারতীয় পানিসম্পদ বিভাগের একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, তিস্তাকে কেন্দ্র করে মোট ৫টি খাল বা ক্যানেল প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। এগুলো হলো, তিস্তা-মহানন্দা মূল ক্যানেল, মহানন্দা প্রধান ক্যানেল, ডাউক নগর প্রধান ক্যানেল, নাগর টাঙ্গন প্রধান ক্যানেল এবং তিস্তা-জলঢাকা প্রধান ক্যানেল। এর মধ্যে ভারত গাজলডোবায় তিস্তার উপর যে ব্যারেজ নির্মাণ করেছে তার ফলে তিস্তার ভারতীয় অংশ শুকনো মওসুমে পানির আধারে পরিণত হয়। এই আধার থেকে পানি সরিয়ে নেবার জন্য তৈরি ‘তিস্তা-মহানন্দা মূল ক্যানেল’-এর সাহায্যে তিস্তার শুকনো মওসুমের প্রবাহ থেকে ১ হাজার ৫০০ কিউসেক পানি মহানন্দা নদীতে নিয়ে যাচ্ছে। তিস্তা-মহানন্দা লিংক ক্যানেলের দৈর্ঘ প্রায় ২৬ কিলোমিটার। এই ক্যানেলের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। এর বিতরণ খালের সংখ্যা ১০টি। এই সংযোগ খাল থেকে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, পশ্চিম দিনাজপুর, কোচবিহার, মালদহ জেলার কৃষি জমিতে সেচের পানি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ খালটির মধ্যে করলা, নিম, সাহু, করতোয়া ও জোড়াপানি নদী রয়েছে। এসব নদীর ওপর অ্যাকুইডাক্ট (কৃত্রিম পানিপ্রণালী) তৈরি করা হয়েছে। আধুনিক কারিগরিতে তৈরি অ্যাকুইডাক্টের নিচে বয়ে চলেছে নদী, ওপর দিয়ে খাল। এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি রুপি।
এদিকে মহানন্দা প্রধান ক্যানেলের দৈর্ঘ্য ৩২ কিলোমিটারের বেশী। এই ক্যানেলের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। এর বিতরণ খালের সংখ্যা ১৩টি। ডাউক নগর প্রধান ক্যানেলের দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটারের বেশী। এই ক্যানেলের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। এর বিতরণ খালের সংখ্যা ১৮টি। নাগর টাঙ্গন প্রধান খালের দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটারের বেশী। এর মাধ্যমে বছরে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। এর বিতরণ খালের সংখ্যা ৮টি। তিস্তা-জলঢাকা প্রধান ক্যানেলের দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটারের বেশী। এর মাধ্যমে ৫৮ হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। এর বিতরণ খালের সংখ্যা ৬টি। উল্লেখ্য, ভারত এসব প্রকল্প গ্রহণ করে ১৯৭৬ সালে এবং ১৯৯৫-৯৬ সাল নাগাদ প্রায় ৮০ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদানের উপযোগী করা হয়। এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এই প্রকল্পগুলোকে ‘জাতীয় প্রকল্প’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ২০১৫ সালের মার্চের মধ্যে ৫ লাখ ২৭ হাজার হেক্টরে সেচ দেওয়ার উপযোগী করার কথা।
এদিকে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই তিস্তার উজানে ভারত অনেকগুলো পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে এবং গাজলডোবায় বৃহদাকার ব্যারেজ নির্মাণ করে তিস্তায় পানির সরবরাহ ব্যাহত করেছে। এর মধ্যে এসব সেচ খাল একেকটি নদী হয়ে তিস্তার পুরো প্রবাহকেই হজম করে ফেলবে। নদী গবেষক ও লেখক মাহবুব সিদ্দিকীর মতে, এর ফলে বাংলাদেশের তিস্তা শুধু শুকনো মওসুমেই নয়, পুরো বছরই পানিশূন্যতার কবলে পতিত হবে। বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজ পরিত্যক্ত হওয়া ছাড়া এর কোন কার্যকারিতা থাকবে না। উৎসঃ *সংগ্রাম *