নেপালি নদীর সিঁদুর : সুমন শামস

28
976

‘নদী অধিকার মঞ্চ’র আহবানে গত বছর ২৫-২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ তিন দিনের দক্ষিণ এশিয়ার ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমার প্রথম বার নেপাল ভ্রমন ছিলো অসাধারণ।

ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিবক বিমান বন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান ৪২ হাজার ফুট উপরে আকাশের দেশে উড়তে উড়তে ভারতের আকাশ সীমা অতিক্রম করে নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডুর ত্রিভূবন বিমান বন্দরের রানোয়েতে বাংলাদেশ বিমান অবতরণ করে।

আকাশে বসে হিমালয়ের চূড়ার দৃশ্য আমাকে মাতাল কর দিয়ে ছিলো। আমার সফর সঙ্গী মোকাদ্দেস আলীসহ আংলাদেশের সকল যাত্রী এই দৃশ্য উপভোগ করতে করতে শান্ত শহর নেপালে পৌছে যাই। ঠান্ডা ছিলো জিরো ডিগ্রী, হাড় কাপানো প্রচন্ড ঠান্ডার দেশের মানুষগুলো দেখতে দেখতে বিমানবন্দরের ইমিগ্রশন পার হয়ে বাইরে যেতেই দেখি আমাদের জন্য জাপান ফের আইটি প্রকৌশলী অপেক্ষায় আছে। সে আমাদের প্রিয় বদরী জীর একমাত্র ছেলে।

আমাদেরকে স্বাগতম জানিয়ে একটিএ প্রাইভেট কারে তুলে ৩০ মিনিটের যাত্রা শেষে নেপালের রাজধানী থেকে নোয়াল পরাসি জেলা বুদ্ধাঘাট গ্রামে যাবার একটি দারুন বাসে দুলে নিলো।

রাতভর সেই যাত্রায় পাহাড়ি পথের দৃশ্য উপভোগ করতে পররি নি। ভোর রাতে আমাদের গাড়ি গন্তব্যের আরো অনেক দূরে গিয়ে দাড়ায়। আমাদের গাইড ঘুমিয়ে পড়ার কারণে সে টের পায়নি। তার পর কঠিন ঠান্ডার মধ্যে একটি মহা সড়কে নেমে অটো গাড়িতে চড়ে বুদ্ধাঘাট পৌছে বিশ্রামে যাই।

সকালে ঘুমথেকে উঠে একটি খাবার হোটেলে নিয়ে যায় বদরী জী। সেখানে পরিচয় হয় নেপালি একজন সচেতন মানুষের সাথে। তিনি বলছেন, আপকো প্রধানমন্ত্রী পেয়াজ খানা ছোড় দিয়া, নিউজ দেখা ম্যায়নে। বললাম, আপ ঠিক বোলা। ইছিলিয়ে হামলোক ভি ছোড় দিয়া। ইত্যাদি রাজনৈতিক বিষয় আলাপ শেষে নাস্তা করে গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলতে চেষ্টা করি। প্রচন্ড শীতের সকালে অনেক শিশু, নারীরা একটি বিশাল আকারের শুকনো গাছের আগুন থেকে তাপ নিচ্ছে আর আমাদের দেখছে। কি দারুন দেখতে নেপালের শীতের সকালের আগুন পোহানোর দৃশ্য।

একসময় আমাদের গাড়ী আসে এবং আমাদের নিয়ে যায় নেপালের গন্ডাক নদীর পাড়ে। সেখানে নদীর পাড়ে হাজার হাজার মানুষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছে। অনুষ্ঠান স্থলে পৌছাতেই সমাবেশের মাইক থেকে উচ্চ স্বরে আমার নাম ধরে স্বাগতম জানাচ্ছে আমন্ত্রণকারী বন্ধু প্রিয় শৈলেন শর্মা। হাজার মানুষের অভ্যর্থনায় আপ্লুত হয়ে মঞ্চের প্রথম সারির অতিথির আসরে বসে দেখি আগত সকল মানুষ আমাকে দেখছে। কি যেনো বলছে আর বারে বারে আমাকে দেখছে। দিনব্যাপী সম্মেলনে নেপালের সংসদ সদস্যসহ গণ্যমাণ্য সকল মানুষের উপস্থিতি আমাকে অবাক করে দেয়। পরপর দুই দিনের সম্মেলন শেষে আবার আমাদের নিয়ে যায় সেই বুদ্ধাঘাট গ্রামে।

ফিরে আসার রাতে আমাদের দেখতে আসেন হোটেলের মালিকের জমজ দুই মেয়ে আইনের ছাত্রী আস্থা পৌড়াল এবং আইটির ছাত্রী আরতি পৌড়াল এবং তার স্ত্রী।পারিবারিক পরিবেশে বিদায়ী সেই রাতে খাবার পরিবেশন করে দুই মেয়ে। খাবার শেষে তারা নেপালি ভাষায় কি বলেছিলো বুঝতে পরি নি। একটু পরেই তার বাবা একটি কাশার থালায় সিদুর আর প্রদীপ জ্বালিয়ে নিয়ে আসে। তার পর আমার কপালে সিদুর আর ফুল ছিটিয়ে আপন করে নেয় আইনের ছাত্রী আস্থা পৌড়াল এবং আইটির ছাত্রী আরতি পৌড়াল।

তার পর আমার পালা। এবার আমার হাতে তাদের মতো করে সিদুর দিতে হবে এবং পরিবারের সকলের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি ও তাদের সম্মান জানিয়ে ছিলাম। সম্পুর্ণ পরিবার যেনো চির আপন হয়ে গেলো সেই থেকে।

নেপালের ভালোবাসা চির স্মরণীয় হয়ে থেকবে। ধন্যবাদ প্রিয় সম্মেলন আহবায়ক জনাব ব্রিজ রাজ, জনাব শৈলেণ শর্মা, জনাব ডি এন গুপ্তা, জনাব ণারায়ণ ভান্ডারী এবং নেপালের প্রিয় ভালোবাসার নেপালের বন্ধুদের। বাংলাদেশের নদী কোন দিন তোমাদের ভুলে যাবে না। চলবে……

তারিখ : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯, নোয়াল পরাসি, নেপাল। ছবি মীর মোকাদ্দেস আলী

28 মন্তব্য

  1. অসাধারণ লেখা অসাধারণ নেপাল ভ্রমণ, যে ভালবাসা পেয়েছি হিমালয়ের দেশে সেটাই একটা ইতিহাস। সুমন সামসকে এতসুন্দর ভাবে ভ্রমণ কাহিনী ইতিহাস করে রাখার জন্য ধন্যবাদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে