ময়মনসিংহের সন্তোষপুরে ঝলসে যাওয়া বানরগুলোর চিকিৎসা জরুরী

0
273

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতর দিয়ে যাওয়া পল্লীবিদ্যুতের কভার বিহীন তারে জড়িয়ে ঝলসে যাওয়া বানরগুলো চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছে।

ফুলবাড়ীয়ার সন্তোষপুর বনাঞ্চলের আয়তন প্রায় সাড়ে সাড়ে ৩ হাজার একর। ঐ সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রয়েছে ৩ শতাধিক বানর। এ বনাঞ্চলে অন্তত ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কভার বিহীন তারেই দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎসংযোগ। সেই খোলা তারে এরই মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে প্রায় ১০টি বানর। তাদের মেধ্য একটি মারাও গেছে। যেগুলো বেঁচে আছে সবগুলো চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছে।

স্থানীয় দর্শনার্থীরা বনে ঘুরতে এসে বিদ্যুতের তারে ঝলসে যাওয়া বানরগুলোকে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বানরগুলোর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে একাধিক সংবাদ প্রকাশের বিদ্যুৎ বিভাগের টনক কিছুটা নড়লেও খোলা তারেই বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ। বনবিভাগ ও স্থানীয়দের দাবির মুখে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ লাইন কিছুটা সংস্কার করলেও বানরের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েই গেছে।

সন্তোষপুর বনবিটে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যুতে মুখমণ্ডল ঝলসে যাওয়া একটি বানর খেতে পারছে না। কোন কিছু খেলে গলা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। অপর একটি বানরের সামনের পা দুটি বিদ্যুতায়িত হয়ে ঝলসে যাওয়ায় মাংস খসে পড়ে হাড় বেরিয়ে গেছে। বানরের এমন দুরাবস্থা দেখে দর্শনার্থীরা ব্যথিত হচ্ছেন।

দেখা গেছে, ৫ কি.মি. বিদ্যুৎ লাইনের বানর অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে ৫/৬ টি খুঁটিতে কিছুটা পরিবর্তন করে দুই তারের মধ্যবর্তী স্থানে বেশি জায়গা রেখে পুনরায় বিদ্যুৎসংযোগ দিয়েছে পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিস। এতেও বানরের বিদ্যুতায়িত হওয়ার ঝুঁকি থেকে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বন কর্মকর্তা।

বনবিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বানরদের থামানো যাচ্ছে না। এরা বিদ্যুতের তারে লাফালাফি করছে প্রতিনিয়ত। বানর সংঘবদ্ধ প্রাণি। কোনো বানর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে দলবেঁধে বনের অন্য বানরগুলো এ গাছ থেকে ও গাছে লাফিয়ে ছুটে যায় সেখানে।

বন বিভাগ জানায়, এই বনে প্রায় তিন শ’ বানর রয়েছে। বানরগুলোর বিচরণ ক্ষেত্র পুরো বন এলাকা হলেও সন্তোষপুর বনবিট অফিসের কাছাকাছি তারা বেশি অবস্থান করে। সম্প্রতি পল্লীবিদ্যুৎ বনের ভিতর দিয়ে ৫ কি.মি. নতুন লাইন নির্মাণ করে বিদ্যুৎসংযোগ দেয়।

সন্তোষপুরের ফলচাষী আ্য়ুব আলী জানান, বিদ্যুতের খুঁটি বেয়ে উঠে তারে ঝুলে খেলার সময় বানরগুলো বিদ্যুতায়িত হয়ে আহত হচ্ছে। বানর সংঘবদ্ধ প্রাণি হওয়ায় এক বানর আহত হলে সব বানর ওখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে একের পর এক বিদ্যুতায়িত হয়। সংযোগ দেয়ার ৭ দিনের মধ্যে ১০/১২টি বানর আহত হয়েছে। আহত বানরগুলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাচল করছে। তাদের মধ্যে একটি মারাও গেছে। তাই আহত অন্য বানরগুলোকে বাঁচাতে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ফুলবাড়িয়া পল্লীবিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডিজিএম অনিতা বর্মন বলেন, বানর বিদ্যুৎতায়িত হয়ে আহত হওয়ার খবরে ওপরের এসটি লাইন বন্ধ করে দেওয়াসহ নীচের দুই তারের দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আর কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে