ধলেশ্বরী নদীর চর দখলের মহোৎসব চলছে!

0
922


বুধবার ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ (নোঙরনিউজ ডটকম): মানিকগঞ্জের ঘিওরে ধলেশ্বরী নদীর চর দখলের মহোৎসব। চলছে ঘরভাড়া বাণিজ্য। একশ্রেণীর প্রভাবশালী মহল নদীতে জেগে উঠা চর দখল করে কাঁচা-পাকা স্থাপনা নির্মান করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করছে। অথচ অনেক ভূমিহীন পরিবার রয়েছে যাদের মাথা গোঁজার কোন জায়গাই নেই।

এলাকাবাসীরা জানায়, বাপ-দাদার আমল থেকে এখানে ধলেশ্বরী নদীর বিশালতা দেখেছি। ধলেশ্বরী নদীর দক্ষিণ কোল ঘেঁষে বেগবান ¯্রােতধারায় বইতে দেখেছি কুস্তা ইছামতি শাখা নদী যা বর্তমানে কুস্তা খাল নামে পরিচিত। এখন এখানে সেই খর¯্রােতা ইছামতি শাখা নদী ও ধলেশ্বরী নদীর বিশালতা নেই। ধলেশ্বরী নদীর দক্ষিণ তীরে ও কুস্তা ইছামতি শাখা নদীর উত্তর-পূর্ব পাশে ঘিওর সরকারী কলেজের নিকটবর্তী উত্তর পাশের ধলেশ্বরী নদীতে গত কয়েক বছরে জেগে উঠেছে। বর্তমানে এ চর দখল করে এখানে ঘরবাড়ি নির্মান করে বাসাভাড়ার বাণিজ্যে নেমেছে চর দখলকারী প্রভাবশালী মহল। এছাড়া গাছপালা লাগিয়ে স্থায়ীভাবে দখল করে নিচ্ছে এ চরের জমি। তবে দখলকারীরা জানায়, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৯৯ বছরের লীজ নিয়ে তারা এসব জমি দখলে নিয়েছে।

এলাকাবাসীরা আরও জানায়, সরকারি কর্মকর্তা ও দালালদের সাথে আতাত করে এ চরের জায়গা দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। এখানে কাঁচা-পাকা স্থাপনা ও গাছপালা লাগানোর কারনে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ক্ষতি হচ্ছে ব্রীজ, পাকা রাস্তা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বহু ফসলী জমি। ঘিওর সরকারী কলেজ ও ঘিওর ডি,এন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী ঘিওর-দৌলতপুর সংযোগ সড়কে ধলেশ্বরী নদীর উপর স্থাপিত ব্রীজের উত্তর পাশের খুঁটির নীচের মাটি সরে গেছে এ চর দখলের কারনে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে নদীর উত্তর পাশের ঘিওর-দৌলতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি ও নদীর উপর নির্মিত পশুহাসপাতালের নিকটবর্তী স্টীলের বেইলী ব্রীজটি।

ইতোপূর্বে একাধিক ব্রীজ, মসজিদ, পাকা রাস্তা, অসংখ্য ফসলী জমি ও ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে। তাই নদীর উত্তর পাড়ের কুল ভেঙ্গে এ দুটি ব্রীজ সহ শত শত ফসলী জমি ও বহু বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় নদী শাসন ও পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর গতিপথ স্বাভাবিক না রাখলে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শত শত বিঘা ফসলী জমি ও বাড়িঘর সহ সরকারী-বেসরকারী বহু স্থাপনা। বর্ষা মৌসুমে পানি থাকলেও বর্তমানে এখন শুধু ধূধূ বালুর চর।

নদীর অগভীরতা ও চর দখল করে শক্তভিত সৃষ্টি করায় বর্ষা মৌসুমে দ্রুত প্লাবিত দু’কুল। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের কৃষি ফসলী জমি ও অনেক পরিবার। অস্থায়ীভাবে ওই চরে বসবাসরত ভূমিহীন মুনছের আলী(৬৫), বাবলু মনি(৪০), রফিকুল(৩৫), মোঃ কাজেম সরদার(৮০), ইন্নুস আলী(২৮), রোজিনা(৩০), ইয়াকুব(২৫), জানায়, তাদের নিজস্ব কোন জায়গা-জমি নেই। এসব ভূমিহীন লোকজন ওই চরে ঘর তুলে তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। গত ৩/৪ বছর আগে ভূমি অফিসে জমি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তারা। কিন্তু অফিসে বহু ঘোরাঘুরি করেও কোন কাগজ পাওয়া যায়নি।

চরে বসবাসকারী কয়েকজন ভূমিহীন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, নিজস্ব জায়গা জমি থাকলেও গোলাপনগর গ্রামের মিজান ও সালমা, চরমাস্তুল গ্রামের বাহেজের ছেলে রনজিতসহ আরও কয়েকজন লোক এই চরের জায়গা দখল করে ঘর তুলে ভাড়া দিচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মোঃ শাহাদত হোসেন খান ওই চরে বিশাল এলাকাজুড়ে মাটি ভরাট করে গড়ে তুলেছেন কাচা-পাকা স্থাপনা। এসব স্থাপনা তিনি ভাড়াটিয়াদের নিকেট ভাড়া দিয়েছেন।

এদিকে মোঃ আতোয়ার রহমান চরের জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল কাঠ বাগান। আর আঃ গফুর মিয়া বসত বাড়ি সহ আশেপাশে গড়ে তুলেছেন কাঠ বাগান। উল্লেখ্য, ঘিওর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থান ও কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের মধ্যবর্তী একটি সরকারী রাস্তায় ধলেশ্বরী নদীর উপর স্থাপিত ছিল একটি ব্রীজ। ব্রীজটি বর্তমানে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে বিলীন হয়ে যাওয়া ব্রীজের পীলারের নীচ দিয়ে অবৈধভাবে জায়গা দখল করে মাটি ভরাট করেছেন কুস্তা গ্রামের মোঃ দুলাল মিয়া।

উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) সুমনা আল মজীদ জানান, বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে