


২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮: সকালে ঘুম ভাংগল একদম নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমের পর। আজকে সোমবার, দুদিন ছুটির পর অফিস থেকে ই মেইল এর মিছিল থাকে সপ্তাহের প্রথম দিনে। তাই নাস্তা করেই মেইল নিয়ে বসা, কিন্তু কোন মেইল নেই। কিন্তু আমাদের পরবর্তি ভয়েজের জন্য অনেক প্রস্তুতি নিতে হবে, এসব কাজ ফোনে সারতে হবে।
পরবর্তি ভয়েজের জন্য বহির্নোঙর থেকে তেল লোড করতে হবে, এর পর যেতে হবে নিউজার্সি, ৬ দিনের পথ। অফিস খুলবে ন’টায়, সাড়ে নটার দিকে কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্টে ফোন করতে হবে। পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ তারিখ রাত ২৩:৫৯ এর মধ্যে আমাদের পরবর্তি লোড পোর্টে যেতে হবে, যা কোনভাবেই সম্ভব না। তাত্বিক ভাবে আজ মধ্যরাতের আগে না পৌছতে পারলে আমাদের চুক্তি বাতিল, কিন্তু ইউ এস বন্দরের আভ্যন্তরীন পন্য পরিবহনে এটা অত কঠোর ভাবে অনুসরন করা হয় না। কিন্তু আমাকে জানাতে হবে আমাদের এ অনাকাংখিত দেরী হবার কারন।
নটা বাজে পাওয়ার (শিপিং এসিস্ট্যান্ট) কাঁচুমাচু ভাবে জানতে চাইল যে সে বাইরে যেতে পারে কিনা। জানতে চাইলাম , তুমি যাবা কিভাবে? আর কে কে যাচ্ছে? বলল নিখিল সিম্যান্স সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করেছে, এরা গাড়ি পাঠাবে। বললাম আমারও যাবার প্রয়োজন, কিছু কেনাকাটা করতে হবে। পাওয়ার বলল যে তার তেমন প্রয়োজন নেই, এমনি সবার সাথে যাবার জন্য যাওয়া, সুতরাং আপনি চলে যান, আমি থাকি। আমি বাইরে গেলে চীফ অফিসার এ শিপিং এসিস্ট্যান্ট বাইরে যেতে পারবে না, এটাই নিয়ম। চীফ অফিসার কার্গো চলাকালীন সময় এমনিতেও যেতে পারে না। আমি প্রস্তুত হলাম যাবার জন্য, কিন্তু নীচে গিয়ে জানলাম এরা শুধু সীম্যান্স ক্লাবে যাবে, ওয়াল মার্টে যাবার কোন প্লান নেই। আমার দরকার ওয়ালমার্টে যাওয়া, সুতরাং আমার যাওয়া বাতিল করলাম, পাওয়ার চলে গেল ওদের সাথে।
অফিসে ফোন করে বিলম্বের কথা জানিয়ে দিলাম, পরবর্তি পোর্টে জ্বালানি ভড়তে হবে সে কথাও স্মরন করিয়ে দিলাম যাতে সব প্রস্তুত থাকে, অতপর দিনের কাজ শেষ।
ছোট ছেলের স্কুল শুরু হয়েছে, তার সাথে ভিডিও চ্যাট। সে আগে পানি খেতে চাইত না, চামচ দিয়ে খাওয়াতে হত। এখন স্কুলে পানির বোতল নিয়ে যায়, পানি খাওয়া তার স্টাইলে পরিনত হয়ে গেছে, সারাদিন পানির বোতল নিয়ে ঘোরে। ভিডিও চোটের সময় আমাকেও অনেকবার পানি খাওয়ানোর চেস্টা করল, মা অনেক কষ্টে বোঝাল যে বাবাকে পানি খাওয়ানো সম্ভব না।
বারটার দিকে নিখিল ফোন করে জানালো যে আমরা ইচ্ছে করলে আসতে পারি, সীম্যান্স ক্লাবের গাড়ি ওয়ালমার্টে নামিয়ে দেবে। সুতরাং পরবর্তি দল তৈরী। আমি, চীফ ইন্জিনিয়ার, ফোর্থ অফিসার এ একজন ইন্জিন ক্রু । দেড়টার দিকে নামিয়ে দেয়া হল শপিং মলে, সবাই যার যার মত ব্যস্ত হয়ে পরল কেনা কাটাতে। আমার ক্রয় তালিকা খুবই সংক্ষিপ্ত, অল্প সময়েই কাজ শেষ, অতপর উইন্ডো শপিং । প্রধান আকর্ষন “ টেক্সাস রোড হাউস” এ বীফ স্টেক খাওয়া।
কিন্তু সেখানে গিয়ে জানা গেল যে তাদের শপ খুলবে চারটা বাজে, সুতরাং এত দেরী না করে গেলাম “ রেড লবস্টার” এ লবস্টার খেতে। একা একা খাবার খাওয়া, কারন অন্য সবাই শপিং এ ব্যস্ত । এবার জাহাজের জন্য কিছু কেনা, মানে ক্রুদের জন্য। ডোনাট ও কিছু কাপ কেক কিনলাম জাহাজে যারা রয়ে গেছে তাদের জন্য, এর মধ্যে অন্য সবারও কাজ শেষ, আর আমাদের গাড়িও হাজির। জাহাজে ফিরলাম সাড়ে পাচটায়, এসে প্রথম খবর যেটা পেলাম তা হল কার্গো ডিসচার্জ স্থগিত , শুরু হবে কাল সকালে।
এবার চীফ অফিসার অনুরোধ করল যে সে একটু বাইরে যেতে পারে কিনা। এমনিতে চীফ অফিসারের বাইরে যাবার সুযোগ মিলে না, কার্গো যখন বন্ধ আছে, তাতে যাবার কোন প্রতিবন্ধকতা নেই, কিন্তু সমস্যা হল টার্মিনাল যদি হঠাৎ বলে শুরু করার জন্য। চীফ অফিসার বলল সেকেন্ড অফিসার কার্গো স্টার্ট করতে পারবে যদি প্রয়োজন পরে । বলে দিলাম যাবার জন্য , সাথে এও বলে দিলাম যে ডিউটি অফিসারদের ভাল ভাবে বুঝিয়ে যাও যাতে তারা নিজে নিজে কার্গো স্টার্ট না করে, যদি করতে হয় সেটা আমি স্বয়ং করব।
নুতন করে মেইল করে জানিয়ে দিলাম যে পরবর্তি লোডিং এ যেতে দেরী হবে, এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব সময়সুচী পাল্টে সবাইকে জানিয়ে রাতের জন্য ছুটি।