নাবিকের সমুদ্র কথন (দ্বিতীয় পর্ব-২৩) : ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ মাহমুদ

0
439
captain Abdullah Mahmud. photo : shuman shams

২৩ সেপ্টেম্বর , ২০১৮: দিনের যখন শুরু, তখন বাজে ভোর ০৫:১৫।
কাল রাতে চীফ ইন্জিনিয়ারের সাথে কথা হয়ে ছিল, তার কথা অনুযায়ী বেশীক্ষণ আর চালিয়ে দেখার দরকার নেই, একটু দেরী করে নোঙর উঠালেও চলবে। ০৫:১৫ এ থার্ড অফিসার নিখিল ফোন করল যে পাইলট ০৭:৩০ তে আসবে, বা আরো দেরী হতে পারে, নোঙর ক’টায় উঠাব? বললাম আমি ব্রীজে আসি, তার পর দেখা যাক। একটু সময় হাতে পাওয়াতে বিছানায় একটু মোচড়ামুচড়ি করে ব্রীজে গেলাম পৌনে ছ’টার দিকে। বিস্তারিত জেনে নিলাম নিখিলের কাছ থেকে। সব প্রস্তুত শুধু নোঙর তোলার অপেক্ষায়। আমাদের এগুতে হবে মাত্র ৫ কিমি, ৩০ মিনিটের মত সময় হাতে রাখলেই চলে। কিন্তু ইন্জিন একটু ঝালিয়ে দেখার ইচ্ছা, তাই সিদ্ধান্ত হল ০৬:১৫ এ নোঙর তোলা শুরু করব, উঠাতে ১৫ মিনিট, অতপর প্রায় ঘন্টা খানেক হাতে।

অন্য সময় হলে কফি খেয়ে ঘুম ঘুম ভাবটা তাড়াতাম, কিন্তু ডায়েটিং প্লানে কফি বাদ দিয়েছি, সুতরাং গ্রীন টি দিয়ে দিনের শুরু। এরপর সময়মতই সাড়ে ছ’টায় এংকর তুলে রওনা হলাম। পাইলট যেখান থেকে উঠবে তার এক মাইল দুরে জাহাজ থামিয়ে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে, পাইলট আসবে তাদের সুবিধা অনুযায়ী এবং এক্ষেত্রে কখনোই কাটায় কাটায় সময় মেনে চলা সম্ভব না। কারন পোর্ট থেকে বহির্গামী জাহাজের পাইলট নেমে আমাদের জাহাজে উঠবে। আমরা ছারাও আরো দুটি জাহাজ অপেক্ষায়, কিন্তু সমস্য হল সাগরে থেমে থাকা যায় না, স্রোত তাকে একদিকে টেনে নিয়ে যাবে, আর তার চেয়ে বড় সমস্যা হল মাথা ঘুড়ে যাবে, যাবে উত্তরে আর স্রোতে মাথা ঘুড়িয়ে দিল দক্ষিনে, তখন শুধু মাথা ঘুড়িয়ে উত্তরে আনতেই মিনিট বিশেক লাগে।তাই আমরা এক মাইলের পরিবর্তে মাইল দেড়েক আগেই থেমে যাই, কিছুক্ষন পর পর ইন্জিন একটু চালিয়ে জাহাজ সোজা করে নেই।

আজকেও অপেক্ষার পালা, পাইলট আসল সোয়া আটটার দিকে।
এ বন্দরটি সাগর থেকে একদম কাছে, সাড়ে দশটার দিকেই জাহাজ বাঁধা শেষ। এবং এবারও আমাদের বৃদ্ধা মহিলা মানে আমাদের জাহাজ নিরাশ করেনি। মেক্সিকো তে এংকর তোলার যে উইন্চটি সমস্যা দিয়েছিল, জাহাজ বাধার সময় সেটি আবার বেকে বসল। কিন্তু আমাদের সৌভাগ্য খুব বেশী সমস্যা হয় নি, চীফ ইন্জিনিয়ার দ্রুত গিয়ে সমাধান করে দিয়েছে সমস্যার, পাইলটের বিরক্তির উদ্রেক হবার আগেই।

জাহাজ বাধার পরেই ইমিগ্রেশন ও এজেন্ট হাজির। তাদের সাথে কাজকর্ম সারতে প্রায় পৌনে বার অতপর রবিবারের বিরিয়ানী।

বিকেলে চীফ ইন্জিনিয়ারের সাথে বাইরে যাবার প্লান হল, কিন্তু পোর্ট থেকে শহর একটু দুরে, আমরা দুজন বাদে কেউ আগ্রহও দেখালো না, তাই যাওয়াও হলনা। সকালে অনেক ভোড়ে উঠেছি, ঘুমের প্রয়োজন, তাই একটু আগেই বিছানায় গেলাম আর শেষ হল আরেকটি দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে