দখলের কবলে বালু নদী, শংকিত প্রকৃতির রাজপথ : সুমন শামস

0
914
সুমন শামস

ঢাকা, বুধবার, ১১ জুলাই ২০১৮ (নোঙরনিউজ) : ঢাকার চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোই হচ্ছে ঢাকার প্রকৃতির রাজপথ। ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় ঢাকার জনপদকে সুজলা-সুফলা এবং সুরক্ষিত নাগরিক সভ্যতা গড়ে ওঠার মূলে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর প্রবাহ প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এসব নদীর সুপেয় স্বচ্ছ পানি কৃষির সেচ, বাণিজ্যিক পরিবহণ এবং মৎস্যের উৎস হিসেবে যুগ যুগ ধরে মানুষের চাহিদা পূরণ করে এসেছে। মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো একেএকে সব উপযোগিতাই হারিয়ে ফেলেছে।

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নে এসব নদীর পানি স্বাভাবিক গুণাগুণ হারিয়ে ফেলেছে। সেই সাথে অবাধে চলেছে নদী ভরাট, দখলের মহা উতসব। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সরকারকে ঢাকার নদীগুলোকে রক্ষা ও উদ্ধারের নির্দেশ জারি করেছিলেন ২০০৯ সালে। এরপর বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার ও রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনেক তদারকির কথা শোনা গেছে, টাস্কফোর্স গঠন এবং হাজার কোটি টাকার প্রকল্পও গ্রহণ করতে দেখা গেছে। প্রকল্পের টাকা পানিতে খরচ করা হলেও নদীর মরণদশা এখনো ঘোচেনি। দখল দূষণ রোধ এবং বিষাক্ত শোধনে কোনো অগ্রগতি নেই। হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ, দখলমুক্তকরণ, সংরক্ষণ এবং দূষণ রোধে গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স নামকাওয়াস্তে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

নদীর সীমানা নির্ধারনের পদ্ধতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল সে সব প্রশ্ন অগ্রাহ্য করেই বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর সীমানা নির্ধারণে ৪.০৬৩টি পিলার বসানো হয়েছিল। নদী উদ্ধারে টাস্কফোর্স নদীগুলোর হালনাগাদ অবস্থা সরজমিন পরিদর্শন শেষে তার ৩০তম সভায় যে রিপোর্ট দিয়েছিল তাতে দেখা গেছে, স্থাপিত সীমানা পিলারগুলোর মধ্যে ৪২২টি পিলার সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি, ২৬৪টি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত ১৪৮টি পিলার দৃশ্যমান ছিল না এবং ৩৬টি পিলারের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে নদীর পানির গুণগতমান পর্যবেক্ষণ সম্পর্কিত জাতীয় পরিবেশ অধিদফতরের এক রিপোর্টে, শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারী-মে) বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী থেকে সংগৃহিত নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায়, এসব নদীর পানিতে অক্সিজেনের উপস্থিতির হার শূন্য।

পানির এই অবস্থা জলজপ্রাণী ও মৎস্য চারণের অযোগ্য। বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে সরকার বহু কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে, কিছুদিন বুড়িগঙ্গা থেকে বর্জ্য অপসারণ করতেও দেখা গেছে, কোটি কোটি মিটার মাটি অপসারণ ও যমুনা নদী থেকে চ্যানেল করে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করেও বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার কথা শোনানো হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ঢাকা শহরের পানি সরবরাহ পানি নিরাপত্তা সম্পর্কিত ইউএনডিপি’র রিপোর্টেও ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর ভয়াবহ দূষণকে নদীর অস্তিত্ব ও পানি নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

বেলাই বিল থেকে বালু নদী
বালু নদী (Balu River) বেলাই বিল ও ঢাকার পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জলাভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডেমরার কাছে শীতলক্ষ্যা নদীতে গিয়ে পড়েছে। শীতলক্ষ্যার সঙ্গে কাপাসিয়ার কাছে সুতি নদীর মাধ্যমেও এর একটা ক্ষীণ যোগাযোগ আছে। একই ধরনের সংযোগ রয়েছে টঙ্গী খালের মাধ্যমে তুরাগ নদীর সঙ্গে।

কালীগঞ্জের কাছেও বালু নদী শীতলক্ষ্যার সঙ্গে মিশেছে। বন্যার মৌসুমে বালু নদী শীতলক্ষ্যা ও তুরাগের পানি বহন করে। এই নদীর প্রধান গুরুত্ব হচ্ছে স্থানীয় জল নিষ্ক্রমণ আর নৌ-পরিবহণ অব্যাহত রাখা।

বালু নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৯ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের উত্তর-পূর্ব এলাকা দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। এটি বেলাই বিল ও ঢাকার উত্তর-পূর্ব বিস্তীর্ণ জলাভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডেমরার কাছে শীতলক্ষ্যা নদীতে গিয়ে পড়েছে।

শীতলক্ষ্যার সাথে কাপাসিয়ার কাছে সুতি নদীর মাধ্যমেও এর একটা ক্ষীণ যোগাযোগ ছাড়াও টঙ্গী খালের মাধ্যমে তুরাগ নদীর এসে মিলিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বালু নদী শীতলক্ষ্যা ও তুরাগের পানি বহন করে। এই নদীর গুরুত্ব হচ্ছে, এটি স্থানীয় পানি নিষ্ক্রমণ আর নৌ-পরিবহণ অব্যাহত রাখা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপরে সময়োচিত নদী ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের অভাবে বালু নদীটি বর্তমানে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। প্রচণ্ড খরস্রোতা এই নদীটিতে প্রতি বছরের ৬/৭ মাসই পানিশূন্যতা বিরাজ করছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে