ক্যামেরার চোখে বিপন্ন নদী

0
581

ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ (নোঙরনিউজ) : ফেলে দেওয়া তরমুজ ভাসছে বুড়িগঙ্গার জলে। হয়তো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তবু পানিতে নেমে সেগুলো নেড়েচেড়ে দেখছে একটি শিশু। কে জানে, ভালোও তো হতে পারে! আর ভালো হলে খেতে পারবে সে। এমন ছবি দেখে চোখ ভিজে যায়। কারণ ভালো তরমুজ হলেও বুড়িগঙ্গার জলের দশা সবাই জানেন। দূষিত বুড়িগঙ্গাকে পচা তরমুজ আরও দূষিত করে তুলেছে_ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনের লবিতে ঝুলন্ত এমন ছবিতে চোখ আটকে যায় সহজেই।

চোখ আটকে যায় নদীতে ভাসমান ট্যানারি বর্জ্যের ছবিতে। যেন নদী নয়, রক্তের গঙ্গা। নদীর বিপন্নতার এমন সব আলোকচিত্র নিয়ে নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর আয়োজন করেছে ‘নদ-নদীর আলোকচিত্র’ শীর্ষক এক প্রদর্শনীর। গতকাল রোববার বিশ্ব নদী দিবসে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটে সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। ২০ আলোকচিত্রীর তোলা ৩৬টি ছবি রয়েছে এ প্রদর্শনীতে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী আজ হারিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে নদীকে ঘিরে নানা উৎসব। দখল, দূষণের অত্যাচারে নদী আজ মৃত, এর পানি আজ দূষিত। নদীর দু’পাড়ে জমেছে বর্জ্যের স্তূপ। ভালো নেই নদী, তাই ভালো নেই বাংলাদেশও।’ নদী রক্ষা আন্দোলনকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের ‘একটি অংশ’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে নদীগুলোকে রক্ষা করতেই হবে। রক্ষা করতে হবে তার স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি ও পবিত্রতা। নতুবা সমাজ আর উন্নয়ন সবই ধ্বংস হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ একটি ‘বিশেষ’ টাস্কফোর্স গঠন করে নদী রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান। গতানুগতিক পদ্ধতির বদলে আধুনিক পদ্ধতিতে নদী খননের প্রয়োজনীতার কথাও বলেন তিনি। জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রী সাংবাদিক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের নজর শুধু বুড়িগঙ্গার দিকে। তাই আমরা জানি না, ঢাকার আশপাশের নদী বালু ও তুরাগের কী বাজে অবস্থা। অবশ্য গত ২০-২৫ বছর ধরে আমি দখল-দূষণের যে মাত্রা দেখেছি, ইদানীং তা সামাজিক আন্দোলনের কারণে খানিকটা হলেও কমে এসেছে বলে মনে হয়।’ নোঙর সভাপতি সুমন শামস বলেন, ‘সুন্দর-অসুন্দরের লড়াইয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। এ প্রদর্শনী আমাদের সেই তাগিদ দেবে।’

প্রদর্শনীর ছবিগুলোতে রয়েছে নদীর দু’পাড়ের গ্রাম-জনপদ আর প্রকৃতির গল্প। প্রমত্তা নদীর স্বপ্ন ভাঙার গল্প, ক্ষীণস্রোতা নদী তীরবর্তী হতাশ মানুষের গল্প। রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে নদী খেকোদের তা ব, জনপদের নীরব মৃত্যু, নদীর দু’পাড়ে সবুজের বিলুপ্তি আর যান্ত্রিক নগরী গড়ে ওঠার কাহিনী ধরে রেখেছে এসব ছবি। প্রদর্শনী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা অবধি উন্মুক্ত থাকবে। সমকাল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে