রাঙ্গামাটিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৫ জন নিহত : আহত ১০

0
532

শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮ (নোঙরনিউজ) : রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতা শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা সদরে এই হত্যাকান্ড ঘটে। শক্তিমান উপজেলা পরিষদের পাশে তার বাসা থেকে নিজের কার্যালয়ে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় শক্তিমান চাকমার সঙ্গে থাকা রুপম চাকমাও গুলিতে আহত হয়েছেন।

অপরদিকে, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হককে (৭০) গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আলম জানান, সিরাজুল হক রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। তাছাড়া তিনি বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও এক বছর আগে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

এদিকে, রাঙামাটিতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে হত্যার খবর শুনে ঢাকায় সচিবালয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাঙামাটির পুলিশ সুপারকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার নির্দেশ দেন। কেউ গ্রেফতার হয়েছে কিনা তাও তিনি মোবাইল ফোনে জানতে চান। তিনি বলেন, লোকটা (শক্তিমান চাকমা) উপজেলা চেয়ারম্যান, আমার নিজের জেলায়ও না। কিন্তু তার মৃত্যুতে আমার ভেতরে খুব তোলপাড় হচ্ছে। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে কথা ছিল।

শরীরে তিনটি গুলি লাগে এবং ঘটনাস্থলেই নিহত হন শক্তিমান চাকমা

অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা ২০১০ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) নামে নতুন দলে যোগ দেন। সংস্কারপন্থি এই নেতা ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। আহত রূপম চাকমা জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) নানিয়ারচর উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা বলেন, সকালে বাসা থেকে মোটর সাইকেলে করে রূপমকে নিয়ে অফিসে যাচ্ছিলেন শক্তিমান চাকমা। পথের মধ্যে দুইজন অস্ত্রধারী মোটর সাইকেল থামিয়ে তাদের গুলি করে। শক্তিমান দাদার শরীরে তিনটি গুলি লাগে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। রূপমের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউডিপিডিএফ) দায়ী করে সুদর্শন বলেন, ‘তারা দীর্ঘদিন ধরে দাদাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। আমরা এর প্রতিবাদে কর্মসূচি দেব। এই অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের প্রচার বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা বলেন, এটি তাদের আন্তঃকোন্দলের ফল হতে পারে। আমরা কোথা থেকে এর মধ্যে আসব! আমাদের মধ্যে যারা বিরোধ জিইয়ে রাখতে চায়, এমন পক্ষও এটা করাতে পারে।’

পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, কারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী তা তাত্ক্ষণিকভাবে বলা যাচ্ছে না। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটিতে আনা হবে। আমরা খুনিদের গ্রেফতারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।

গত মার্চে খাগড়াছড়ির ইউপিডিএফ নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনায় যে মামলা হয়েছিল, সেখানে শক্তিমান চাকমাসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। চলতি বছরের শুরুতে ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমা হত্যা মামলার এজাহারেও আসামি হিসেবে শক্তিমানের নাম ছিল। এদিকে শক্তিমান চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)। গতকাল বিকালে সদরের শাপলা চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা ইউপিডিএফকে রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি জানান। সমাবেশে জেএসএস খাগড়াছড়ি সদর শাখার সভাপতি কিরণ চাকমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমেদ চাকমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

নরসিংদীতে ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যা : নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী জানান, গতকাল দুপুরে রায়পুরা উপজেলা পরিষদে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনার সভা শেষে নিজ বাড়ি বাঁশগাড়ি যাচ্ছিলেন সিরাজুল হক। পথে আলীনগর আড়াকান্দি এলাকায় তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা তার মাথায় এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে গুলি করে। এ সময় আশপাশের লোকজন দৌড়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে প্রথমে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিত্সক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে স্বজনরা তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকরা মৃত ঘোষণা করেন।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা শাহরিয়ার আলম আরো বলেন, এলাকার আধিপত্য নাকি অন্য কোনো কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

এদিকে, সিরাজুল হকের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা রণসাজে এলাকায় টহল দিচ্ছে এবং প্রতিপক্ষের লোকজন খুঁজে বেড়াচ্ছে। যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এলাকায় ।

জানা গেছে, দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে সিরাজুল হকের সঙ্গে সদ্যপ্রয়াত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সরকার হাফিজুর রহমান সাহেদের দ্বন্দ্ব ছিল। এর আগে এই বিবাদের কারণে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে হতাহতের সংখ্যা শতাধিক। সেই সঙ্গে পাল্টাপাল্টি হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে