


ঢাকা, ২২ এপ্রিল, ২০১৮ (নোঙরনিউজ) : মো. মনির হোসেন : পৃথিবীর সব মানুষ যদি ভিন্নতা আর বৈরিতা ভেঙে শুধুমাত্র একটি ভাষায় যোগাযোগ করতে চায়, তবে সেটি কোন ভাষা হবে? সেটি হবে ইশারা ভাষা বা অঙ্গের ভাষা। এটিকে বলা যেতে পারে শরীরের ভাষা বা দেহের ভাষা। জগতের আদি ও অকৃত্রিম, শাশ্বত ও সর্বজনীন ভাষা হলো দেহের ভাষা। কালের পরম্পরায় দেহের আর শরীরের এই ভাষাকে শিল্পে সংজ্ঞায়িত করা হয় মূকাভিনয় বলে।
আর অতিসম্প্রতি এই মূকাভিনয় শিল্পের আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়ে গেল সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে। গত একুশ থেকে তেইশ মার্চ ওয়ার্ল্ড মাইম অর্গানাইজেশন আয়োজিত এ সম্মেলনে বিশে^র ২৫ টি দেশ অংশ গ্রহন করে। এর মধ্যে এশিয়ার দেশ চারটি বাংলাদেশ, জাপান, চীন ও শ্রীলঙ্কা। এতে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন মূকাভিনেতা, নির্দেশক, প্রশিক্ষক ও ঢাকার রুপঙ্কর কালচারাল সেন্টারের পরিচালক নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী এবং গাজীপুরের মুক্তমঞ্চ নির্বাক দলের সভাপতি মো. শহীদুল হাসান শামীম। শহীদুল হাসান নিজেও একজন মূকাভিনেতা, নির্দেশক ও প্রশিক্ষক। নাদেজদা ফারজানা মূকাভিনয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস তুলে ধরেন সবার মাঝে। আর শহীদুল হাসান উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের মূকাভিনয়ের ইতিহাস ও চর্চারীতি বিষয়ক একটি গবেষনা প্রবন্ধ।
মূকাভিনয়ের সঙ্গে কিভাবে যুক্ত হলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে শহীদুল হাসান জানান, ‘ছোট বেলায় আমার নায়ক ছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। তাঁর নির্বাক অভিনয় আমার খুব ভাল রাগতো। কথা না বলেও কত কিছু বুঝানো যায়। সেই থেকে যে মূকাভিনয়ের নেশা চেপেছে এখন অব্দি চলছে। ৯৯ সনে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী প্রশিক্ষনে অংশ গ্রহণ করি। যেখানে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী যার সঙ্গে আমি এ আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় সম্মেলনে অংশ গ্রহন করি।’
২০০০ সালে শহীদুল হাসান শামীম গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল। এর মধ্য দিয়েই গাজীপুরে শুরু হয় মূকাভিনয় চর্চার। এ দলটির নাটকের সংখ্যা ১৬ টি যা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চার শতাধিকবার মঞ্চায়িত হয়। ২০১৬ সাল থেকে মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল চ্যাপলিন মূকাভিনয় উৎসব আয়োজন করে আসছে। যেখানে দেশের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্নরাজ্য থেকেও বিভিন্ন দল অংশ গ্রহণ করেন। তার স্বপ্ন একটি মূকাভিনয় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করা। যার নাম দিতে চান বাংলাদেশ পেন্টোমাইম ইনস্টিটিউট।
শামীম মূকাভিনয়ের শিক্ষা নেন কিংবদন্তি মূকাভিনয় শিল্পী জিল্লুর রহমান জন, কাজী মশহুরুল হুদা,ভারতের পদ্মশ্রী নিরঞ্জন গোস্বামী, শ্রী বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী ও অঞ্জন দেবের মত বিখ্যাত মূকাভিনেতাদের কাছ থেকে।
নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী। বাবা,মা,নানা, নানি সবাই মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৯৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাটকতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন ১৯৯৮ সালে। এর সাথে ভারত উপমহাদেশের মূকাভিনয়ের প্রবক্তা শ্রী যোগেশ দত্ত পরিচালিত “যোগেশ মাইম একাডেমি-তে ১৯৯৩ সালে ভর্তি হন এবং চারবছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
বাংলাদেশে প্রথম ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে পক্ষকাল ব্যাপি মূকাভিনয় কর্মশালার মূখ্য প্রশিক্ষক হিসাবে ৪৫ জন শিক্ষার্থীদে মধ্যে সফলতার সাথে প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
ঢাকায় ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মূকাভিনয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও চর্চা কেন্দ্র ” রূপঙ্কর কালচারাল সেন্টার”। তিনি নিজের উদ্যোগে রূপঙ্কর কালচারাল সেন্টার হতে ২০১৫ সাল হতে বিজয় দিবস উপলক্ষে ” বিজয় মূকাভিনয় মেলা” এর এর আয়োজন করে যাচ্ছে। এছাড়াও নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী রুপঙ্কর কালচারাল সেন্টার হতে নিজ উদ্যোগে ও অর্থায়নে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় মূকাভিনয় কর্মশালার একটি প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রকল্পের পরিচালক: নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী ও সহকারী পরিচালক : মোঃ শহিদুল হাসান শামীম ও মোঃ শফিকুল ইসলাম ডাবলু। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় ৬ টি জেলায় মূকাভিনয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী ও শহীদুল হাসান শামীম মনে করেন এ মূকাভিনয় শিল্প সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।