নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহের অঙ্গীকার

0
800

‘নৌ-শিল্পে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, যাত্রা হবে নিরাপদ এটাই আমাদের চাওয়া’—এই মর্মবাণীকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০১৮। আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত্ত এই কর্মসূচি চলবে। এই উপলক্ষে আধুনিক ও যুগোপযোগী নৌব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহ নৌ-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত নৌযানের মালিক-শ্রমিক, সংশ্লিষ্ট সংস্থা—বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ প্রভৃতির মধ্যে সপ্তাহব্যাপী তত্পরতা ও সচেতনতার আবহ সৃষ্টি হয়েছে। এই সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ আমাদের দেশের নৌ-নিরাপত্তা পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। প্রত্যেক বছর লঞ্চ দুর্ঘটনায় বহু প্রাণ ঝরে পড়ছে। অন্যদিকে দূষণে ও দখলে বিপন্ন নদীগুলির নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাই নৌ-নিরাপত্তা সপ্তাহের অঙ্গীকার হবার কথা। কিন্তু আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারি না। চৈত্রশেষে বৈশাখ সমাগত। এই সময় বৈশাখী ঝড় আসবে। কিন্তু ঝড় আসলেই লঞ্চডুবির আশঙ্কায় আমাদের বুক কাঁপে। তবে ঝড়ের কবলে পড়ে যেসকল লঞ্চ বা নৌযান ডুবে যায়, তাহাদের প্রায় সবই পুরানো ও মেয়াদোত্তীর্ণ। অথবা দেখা যাবে ধারণক্ষমতার চায়ে বেশি যাত্রী উঠানো হয়েছে। লঞ্চ ও নৌযানগুলি সামর্থ্যের তুলনায় অধিক যাত্রী ও ওজন নিয়ে চলাচল করে এবং স্রোতের তোড়ে কিংবা ঝড়ে হঠাত্ দুর্ঘটনা ঘটে যায়। কিন্তু এইসকল দুর্ঘটনা এড়াবার জন্য কিংবা দূষণ-দখল রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কি গ্রহণ করা হচ্ছে? সম্ভবত না। আইন-নির্দেশনা থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নাই বললেই চলে।

নৌ-নিরাপত্তার কতকগুলি বিষয় প্রাকৃতিক, তবে বেশিরভাগ কারণই মনুষ্যসৃষ্ট। বৈশাখী ঝড় কিংবা ঘূর্ণিঝড় রোধে আমাদের তেমন কিছু করবার নেই। কিন্তু নদীর দূষণ ও দখল রোধ আমাদেরই করতে হবে। এইকথা ঠিক, দেশে শিল্পায়নের প্রয়োজন রয়েছে। শিল্পায়নের কারণে পরিবেশ কিছুটা দূষিত হবেই। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব হইল এই দূষণের পরিমাণ সর্বনিম্ন রাখবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। আমরা তা করছি না অথবা সীমিতভাবে করছি। ইউরোপে শিল্পায়নের ইতিহাস বহু পুরানো। কিন্তু আমাদের বুড়িগঙ্গার তুলনায় লন্ডনের টেমস, প্যারিসের সিন নদী অনেকখানি দূষণমুক্ত রয়েছে। এখনো আমাদের জলপথে জরাজীর্ণ নৌযান চলাচল করছে ব্যাপকভাবে। অর্থলোভী মানুষের কারণে নদী-সমুদ্র যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি আইন প্রয়োগসংক্রান্ত দুর্বলতার কারণে আমাদের নৌ-নিরাপত্তা দুর্বল রয়ে যাচ্ছে। যারা সংশ্লিষ্ট উদ্যোগের সহিত জড়িত অর্থাত্ নৌযানের মালিক কিংবা নদীতীরবর্তী কারখানার উদ্যোক্তা, তাদের মনে রাখতে হবে যে, তাদের নিজস্বার্থের কারণে বৃহত্তর পরিবেশ ও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে, যা প্রকারান্তরে তাদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বহু অর্থ রইল, কিন্তু বসবাসের পরিবেশ রইল না, তাহা হলে সেই অর্থোপার্জনের কোনো মানে নাই। আর সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও আন্তরিক ও কার্যকরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। ইত্তেফাক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে