ধর্মীয় অনুভূতিতে ‘আঘাত’ বিষয়ে একুশের বইমেলায় সতর্কতা

0
696

মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭ (নোঙরনিউজ ডটকম): বাংলাদেশে এবারের একুশে বইমেলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন বই যাতে মেলায় আসতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারি করবে বলে খবর বেরিয়েছে।
অতীতে বিভিন্ন সময় মেলার বাইরে লেখকদের উপর আক্রমণ, হত্যা এবং প্রকাশক গ্রেফতারের প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন বইয়ের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নজর রাখছে। কিন্তু বইয়ের উপর পুলিশি নজরদারির বিষয়ে লেখক-প্রকাশকরা সমালোচনায় মুখর।
পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন বিষয়বস্তু সংবলিত বই চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খবরে প্রকাশ, গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল এ ধরনের বই চিহ্নিত করবে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অতীত রেকর্ড আছে কিংবা আশংকা আছে এমন বইগুলো পড়ে দেখা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং লেখক মুনতাসির মামুন মনে করেন যে কোন ধর্মকে কটাক্ষ করে কিংবা অবমাননা করে কোন লেখা সমর্থনযোগ্য হতে পারেনা । কিন্তু একই সাথে এ বিষয়ে পুলিশের নজরদারিকে দু:খজনক বলে বর্ণনা করেন অধ্যাপক মুনতাসির মামুন।
“পুলিশের কাজ তো বই পড়ে ধর্মীয় অবমাননা চিহ্নিত করা না। পুলিশের কাজ হচ্ছে অন্যান্য বিপদ-আপদ থেকে আমাদের রক্ষা করা। যার যে কাজ তাকে সেটা করতে দেওয়াই ভালো,” বলছিলেন অধ্যাপক মুনতাসির মামুন।
প্রায় ২০০ গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক মামুন মনে করেন, ধর্ম নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি’ যে পর্যায়ে যাচ্ছে সেটা অনভিপ্রেত।


তিনি উল্লেখ করেন, “পাঠ্যবই থেকে শুরু করে সব জায়গায় একটা ধর্ম-ধর্ম ব্যাপার চলে এসেছে।”
ঢাকা মহানগর পুলিশকে উদ্ধৃত করে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে এমন বই চিহ্নিত করতে বাংলা একাডেমি একটি প্যানেল করবে।
তবে বাংলা একাডেমির একজন পরিচালক ড: জালাল আহমেদ জানিয়েছেন, এ ধরনের কোন প্যানেল গঠন করার কোন চিন্তা-ভাবনা তাদের নেই। তবে মেলার নীতিমালা সম্পর্কে প্রকাশকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ড: জালাল আহমেদ বলছেন, জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি কটাক্ষমূলক এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় – এমন বই মেলায় বিক্রি, প্রচার এবং প্রদর্শন করা যাবেনা। মেলার নীতিমালায় এ বিষয়টি আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “বিদ্যমান ব্যবস্থায় এমন কোন উপায় নেই যে আপনি আগে বইগুলো যাচাই-বাচাই করবেন এবং তারপরে মেলায় দিবেন। কারণ মেলায় প্রতিদিন গড়ে দেড়শ’র উপর বই আসে।”
তবে নিরাপত্তার দিক থেকে পুলিশের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবার অভিযোগে গত বছর ‘ব-দ্বীপ’ নামের একটি প্রকাশনা সংস্থা নিষিদ্ধ এবং প্রকাশককে আটক করা হয়েছিল। এর এক বছর আগে লেখক অভিজিত রায়কে মেলার সামনে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ওসমান গনি বলছেন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা এমনিতেই সতর্ক। কিন্তু পুলিশি নজরদারির যেসব খবরা-খবর দেখা যাচ্ছে তাতে প্রকাশনার স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মি: গণি উল্লেখ করেন।
এদিকে পুলিশি নজরদারীর বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোনও বক্তব্য পাওয়া না গেলেও বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে এ কথা স্পষ্ট যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন বইয়ের বিষয়ে তারা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এবার বেশি দৃষ্টি দেবে। সূত্র: বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে