


ঢাকা, শনিবার, মার্চ ০৩, ২০১৮ (নোঙরনিউজ) : নদীমাতৃক দেশের বেশিরভাগ নদ নদী এখন মরূপথে। এক সময় এই নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীতে ছোট বড় বিভিন্ন ধরণের নৌকা চলাচল করতো। নদীর সঠিক সুরক্ষা না থাকার কারণে আজ পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে।



এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা শুকিয়ে এখন মরা নদী। মৃত নদীর বুকে জেগে উঠেছে বড় বড় চর। পদ্মার প্রধান প্রধান শাখা-প্রশাখা সংযুক্ত অন্তত ৮৫টি নদীও প্রায় পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, জীববৈচিত্রসহ কৃষিখাত হুমকির মুখে।
পদ্মার প্রধান শাখা নদী হলো মাথাভাঙ্গা, কুমার, ইছামতি, গড়াই, আড়িয়ালখা প্রভৃতি। প্রশাখা হলো মধুমতি, পশুর, কপোতাক্ষ। উপনদী একটি মহানন্দা। মহানন্দা রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানায় পদ্মায় মিলিত হয়েছে। পদ্মার পানি দিয়ে শুকনো মওসুমে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় সেচকাজ চালানো হয়। এ নদীর পানি দিয়ে প্রায় ২০ ভাগ জমির সেচকাজ চলে। বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, নৌযোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদ্মা নদীর ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ।



প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ফরাক্কা ব্যারেজের ভাটিতে মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুরে আরো একটি ব্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লকগেট, বাঁধ ও ফিডার ক্যানেল। ফিডার ক্যানেল লম্বায় ৩৮ দশমিক ৩ কিলোমিটার। ফারাক্কা বাঁধ থেকে গঙ্গার পানি এই ক্যানেল পথেই ভাগীরথীতে পৌছে দেয়া হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের মাধ্যমে ভাগীরথী-হুগলি নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ফিডার ক্যানেলে দৈনিক ৪০ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হয়। ফলে ফারাক্কার উজানে পানি থৈই থৈই করছে। আর এর প্রভাবে ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে যায়। এতে পদ্মার সাথে সংযুক্ত প্রধান শাখাসহ ৮৫টি নদ-নদীতে পানির সঙ্কটে পড়েছে।



পাশাপাশি পদ্মা সংযুক্ত বরেন্দ্র অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দা, আত্রাই, বারনই, শিব, রানী ও ছোট যমুনাসহ ১২টি নদী ও ২০টি খাল পানি শূন্য হয়ে পড়ে। এসব নদী-খাল এখন পলি ও বালু জমে ভরাট হয়ে এখন মৃতপ্রায়। ফলে এ অঞ্চলের কৃষির সেচ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভূগর্ভস্থ’ পানির উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াতে উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। বৃদ্ধি পেয়েছে আর্সেনিকের মাত্রা। বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গড়ে ১১০ ফুট নিচে অবস্থান করছে। দিন দিন তা আরও নিচের দিকেই যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এছাড়া এই অঞ্চলে মাটিতে লবনাত্বতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব মিলিয়ে চর ও বরেন্দ্র এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে বৈরী আবহাওয়া। এদিকে এক সময় এই পদ্মায় ইলিশ, বড় বড় রুই, বাগাড়, বোয়ালসহ শতাধীক প্রজাতির মাছ ছিল। এখন আর কিছুই পাওয়া যায় না। তবে জেগে উঠা চরে, ছোট-বড় অসংখ্য চরে স্থানীয় কৃষকরা চিনা বাদাম, বাঙ্গী, তরমুজ, টমেটো, আখসহ নানা রকম রবি শস্য আবাদ করেছেন।



তথ্যমতে, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবে গৌড়া নতুন দিল্লির হায়দারাবাদ হাউজে গঙ্গা নদীর পানি বন্টন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ৩০ বছরের দীর্ঘ মেয়াদী বাংলাদেশ-ভারত গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তি ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এই চুক্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে শুষ্ক সময়ে বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে। কিন্তু বাংলাদেশ কোন বছরই চুক্তির শর্ত অনুয়ায়ী পানি পাচ্ছে না বলে বিভিন্ন তথ্যে উঠে এসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের বর্ষাকালে পদ্মায় পানির পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ১৪ হাজার ৬০০ কিউসেক।
শুকনো মৌসুমে পদ্মায় তার অর্ধেক পানি থাকার কথা। কিš‘ ওই বছরের মার্চ মাসেই পদ্মায় পানির পরিমাণ মাপা হয় মাত্র ৪০ হাজার ৪১৫ কিউসেক। ফারাক্কা বাঁধের পর থেকেই শুকনো মৌসুমে পানির পরিমাণ এত বেশি কমে যাচ্ছে বলে জানায় পাউবি।



২০১৬ সালের মার্চ মাসে পদ্মায় পানিপ্রবাহ কমে ভয়াবহ ভাবে। বিগত গত ৪৬ বছরের ইতিহাসে সেবারই সবচেয়ে কম পানি প্রবাহিত হয়। ৩১ মার্চ পদ্মায় পানির উচ্চতা ছিল ছয় দশমিক ৯৬ মিটার। ১৯৭২ সালের পর থেকে পানির উচ্চতা কখনোই এত নিচে নামেনি বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।