মেঘনা নদীর প্লাবণ ভূমিতে চলছে ডাকাতি! : সুমন শামস

0
1557
সরেজমিনে দেখাযায় একদল শ্রমিক মেঘনা নদীর পাড় থেকে কৃষিজমি থেকে অপরিকল্পিত ভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে। ছবি : নোঙরনিউজ

ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ (নোঙরনিউজ) : গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সোমবার নোঙর এর অনুসন্ধান ছিল শীতলক্ষ্যা থেকে মেঘলা নদী এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরভূমি পরিদর্শন।

একটি বেসরকারি কোম্পানী এই জমি লিজ নিয়েছে তারাই এই নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে অন্য একটি নদীর পাড়ে ইটের ভাটায়। ছবি : নোঙরনিউজ

নোঙর’র এ অভিযানে অংশগ্রহণ করে ছিলেন সুদূর ডেনর্মাক থেকে আগত নদী ও পরিবেশ গবেষক জুডিট জোলেসকি ও গুন্নার ওলেসেন, ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ মাহমুদ, কৃষক বন্ধু জাকির হোসেন, কবি সৈয়দ এনায়েত হোসেন, চ্যানেল আই টিভির পরিবেশ প্রকৃতি বিষয়ক বিশেষ সাংবাদিক জাহিদুজ্জামান জাহিদ।

নোঙর’র এ অভিযানে অংশগ্রহণ করে ছিলেন সুদূর ডেনর্মাক থেকে আগত নদী ও পরিবেশ গবেষক জুডিট জোলেসকি ও গুন্নার ওলেসেন। ছবি : নোঙরনিউজ

পরিদর্শনে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার পাশের নদীর মেঘনার শাখা নদীর তীরভূমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেয়া হয়েছে। সরেজমিনে দেখাযায় একদল শ্রমিক মেঘনা নদীর পাড় থেকে কৃষিজমি থেকে অপরিকল্পিত ভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে। স্থানীয় এক কৃষকের কাছে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি কোম্পানী এই জমি লিজ নিয়েছে তারাই এই নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে অন্য একটি নদীর পাড়ে ইটের ভাটায়।

তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে নদীর তীরভুমি দখর এবং লিজ দেয়া চলমান থাকলে নদীর অস্তিত্ব আর অবিশষ্ট থাকবে না। আমরা জানি যে, প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস করা বেআইনি কাজ।

এখানে স্থানীয় কৃষকরা এই মেঘনা নদীর প্লাবন ভূমিতে পুরো শীত মৌসুমে নানা ধরণের চাষাবাদ করে থাকেন। ছবি : নোঙরনিউজ

এ ছাড়াও এখানে স্থানীয় কৃষকরা এই মেঘনা নদীর প্লাবন ভূমিতে পুরো শীত মৌসুমে নানা ধরণের চাষাবাদ করে থাকেন। এবার কিন্তু তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ভর করেছে কারণ, আগামী বছর থেকে তারা এই নদীর তীরভূমি কৃষিকাজে ব্যাবহার করতে পারবে না। লিজ নেয়া কোম্পানী এ খানে কারখানা নিমার্ণ শুরু করবে। যেখানে সরকার এবং পরিবেশবাদিরা বলছেন ‘নদীর তীরভুমি রক্ষাকরতে হবে’ অথচ অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে তার উল্টো চিত্র!

মেঘনা নদীর প্লাবন ভূমি দখলকরে শতশত ইটভাটা গড়ে উঠেছে নদী উপয় তীরে। হরদম চলছে ব্যবসা আর এই ইটভাটার আগুণে প্রতি দিন জ্বালেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে নদী মাতৃক পরিবেশ প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র।

এ সব দেখে আমার মনে একটা সাধারণ প্রশ্ন জাগে যে, এই নদীর তীরভূমি দখলবাজেরা কি দেশপ্রমীক? এরা কি তাদের মাকে ভালোবাসেন? এরা কি তাদের সন্তান দেরকে ভালোবাসেন! অপরিকল্পিত ভাবে নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছ এটা একটা বড় ধরণের অন্যায় কাজ।বেআইনি পরিবেশ ধ্বংশ করার কাজ। অনুসন্ধানে আরো জানা যায় যে, এই নদীর তীরভূমি লিজ নেয়ার আবেদনকারির পক্ষে স্বাক্ষর করে সহযোগিতা দিয়ে থাকেন সাধারণত জেলাপ্রসাশক মহদয়গণ! অথচ দেশপ্রমিক হিসেবে যেখানে সকল জেলার নদী সুরক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জেলে প্রশাসকদের কাছে।

মেঘনা নদীর প্লাবন ভূমি দখলকরে শতশত ইটভাটা গড়ে উঠেছে নদী উপয় তীরে। ছবি : নোঙরনিউজ

এ ভাবে সারা দেশের নদী পরিবেশ নষ্ট করেই চলছে এই অসাধু ব্যবসায়ী নদী, ভূমি, পরিবেশ এবং মানুষ খেকোরা। আমারা জানি যে, ইটের ভাটার দুই কিলমিটার এলাজুড়ে আগুনের তাপে কোন গাছে মুকুল ধরে না, তাই ফুল ফোটে না এবং ফল ধরে না আর নিমর্ল অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা বশীর ভাগ মানুষ।

নদী বাঁচান, কৃষক বাঁচান, দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান।ছবি : নোঙরনিউজ

পরিতাপের বিষয় হলো যে, এর পরেও আমাদের আরো দেখতে হবে যে, ঐ পরিবেশ দুষণকারী নদীমাতৃক লাল সবুজের জাতীয় শত্রু ইটভাটার মালিকেরা হয়তো আগামী দিনে এ দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হবেন এবং বিজয়ী হবেন! অবাক হবার কিছু নেই তার কারণ বাংলাদেশ একটি সকল সম্ভাবনার দেশ।এরা আবার দেশের আইনও প্রণয়ন করবেন! এরা আরো ধনী এবং ক্ষমতাধর প্রভাবশালী হবেন।নদীর জায়গা দখল করে অবৈধ সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চত করতে লাইসেন্স করা বন্দুক বাহিনী, ক্যাডার পুষবেন এবং শেষ পর্যন্ত এ দেশ এবং দশের বারোটা বাজিয়েই ছাড়বেন!

নদীর তীরভুমি দখর এবং লিজ দেয়া চলমান থাকলে নদীর অস্তিত্ব আর অবিশষ্ট থাকবে না।ছবি : নোঙরনিউজ

আমারা বলছি এ ধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কথা। নদী দখল-দুষণ আর নদীর তীরভুমির মাটি কেটে নেয়ার বিরুদ্ধে দেশের প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যাবস্থা নিতে বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।

নদী বাঁচান, কৃষক বাঁচান, দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান এবং নদী দূষণ-দখলকারী জাতীয় শত্রুদের ধরিয়ে দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে