রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে কোটি টাকার গাছ হরিলুট

0
1038

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহা সড়কের দুই পাশে থাকা প্রায় দুই হাজার বিভিন্ন প্রকার গাছ হরিলুটের খবর পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগ সাজশে প্রভাবশালীরা এ সব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

রবিবার দুপুরে সরেজমিনে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের চন্দনী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বড় আকৃতির কড়ই গাছ কাটছেন সাত শ্রমিক। এ সময় শ্রমিকদের সর্দার বাবলু মন্ডল জানান, এই রাস্তার গাছ কিনেছেন আজিজ সর্দার নামে একজন ব্যবসায়ী আমরা তার শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি দৈনিক ৫ শত টাকা মুজুরি পাই। প্রায় দুই মাস যাবৎ গাছ কাটা চলছে। পাংশা উপজেলার অপর এক শ্রমিক আনোয়ার হোসেন রাজবাড়ীবিডিকে জানান, এই রাস্তার কমপক্ষে দুই হাজার বড় আকৃতির গাছ কাটা হয়েছে যে গাছগুলির দাম হবে প্রতিটি কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা করে। সেই হিসেবে কোটি কোটি টাকার গাছ কাটা হয়েছে।

এই সড়কের কয়েকজন ব্যবসায়ী বিভিন্ন লটে গাছগুলি ক্রয় করেছেন। চন্দনী এলাকার গাছ ক্রেতা আজিজ সর্দার রাজবাড়ীবিডিকে বলেন, ‘বন বিভাগ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে আমি গাছ কিনেছি। আমাকে যে গাছগুলো দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই গাছগুলিই কাটা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোন গাছ আমি কর্তন করিনি।’

রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম জানান, ১৯৮২-৮৩ অর্থ বছরে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে সড়ক বনায়নের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রকার গাছ রোপন করা হয়। সেই গাছগুলো এখন বেশ বড় হয়েছে। আর বন বিভাগের মাধ্যমে গাছ রোপন করা হয় ২০০৩ সালে সেই গাছগুলো একেবারেই ছোট। সড়কের উন্নয়ন কাজের সুবিধার্থে গাছ কাটার নির্দেশনা আসে। বন বিভাগ টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পর্ন করেছে কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করেনি। এরই মধ্যে সড়কের কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে কে বা কাহারা প্রায় দুই হাজার গাছ কেটে নিয়ে গেছে। আমি নিজে এর মধ্যে তিন নসিমন গাছ আটক করে সড়ক ও জনপথ বিভাগে পাঠিয়েছি কিন্তু রহস্যজনক কারনে তারা নিরব।

এদিকে রবিবার সকালে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সরকারী রাস্তার সরকারী গাছের হরিলুটের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ সময় রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন ‘আমি যতদিন রাজবাড়ীতে আছি এমন অন্যয় মেনে নেব না আমি সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখবো। আমি মাঝে মধ্যেই দাপ্তরিক কাজে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি গাছ কাটা দেখেছি, অনেক সময় আমার গাড়ি গাছ পড়া থেকে রক্ষা পেতে দাঁড়িয়ে থেকেছে সেই গাছ টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই চোরেরা নিয়ে যাচ্ছে, আর আমাকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানাতেই প্রয়োজন মনে করলো না। তবে কি তারাও জড়িত?’

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামকে উদ্দেশ্যে করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিৎ। আপনি সামান্য গাছ রক্ষা করতে পারেন না আর কয়েকশত কোটি টাকার কাজ সামাল দিবেন কিভাবে ? আপনিতো ঠিকাদারের পকেটে চলে যাবেন।’

উন্নয়ন সমন্বয় সভার শেষে রাজবাড়ী কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সড়কে গাছ রক্ষায় অভিযান চালায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ সময় এক নসিমন কড়ই ও মেহগনি গাছ জব্দ করেন তারা। অভিযান পরিচালনাকারী রাজবাড়ীর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌলশী মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, এলাকার কিছু প্রভাবশালী আমাদের অগোচরে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে খবর পেয়ে আমরা আসলে তারা করাত ফেলে পালিয়ে যায়। আজকে এক নসিমন গাছ জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যপারে আপনারা কোন মামলা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে বিষয়টি আমাদের প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন।

এ ব্যপারে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের পৌকশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাছের কোন টেন্ডার হয়নি আমাদের গাছের হিসেব নিকেশ করে আরবারি বিভাগ রাস্তায় কতগুলো গাছ ছিল তাও তারা বলতে পারবেন। এই সড়কের গাছচুরির ব্যপারে আমরা আগেও অভিযান চালিয়েছি। গাছ কাটা অবস্থায় লোক ধরে থানায় দিয়েছি কিন্তু থানা তাদের ছেড়ে দিয়েছে।’

কালুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার থানা এলাকার গাছগুলো রক্ষা করার জন্য চেষ্টা অব্যহত আছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদাসিনতা আছে থানায় কোন অভিযোগই করতে আসেনি। আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে