চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা সিঅ্যান্ডএফের হামলা ভাঙচুর, শাস্তি পেলেন কাস্টমস অফিসার

0
797


রবিবার, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭, নোঙরনিউজ ডটকম: চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে কাস্টমস অফিসারের অফিসে হামলা-ভাঙচুরে জড়িত সিঅ্যান্ডএফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো কাস্টমস অফিসারকে বদলি করা হয়েছে। এ ঘটনায় কর্মরত কাস্টমস অফিসাররা হতবাক, ক্ষুব্ধ। আর উচ্ছ্বসিত সিঅ্যান্ডএফ নেতারা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংরক্ষিত এলাকায় কাস্টম অফিসে নজিরবিহীন হামলা এবং এর জের ধরে কাস্টমসের কার্যক্রম সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ রাখাটা ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু ওই ঘটনায় জড়িত সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনোই পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উল্টো কাস্টমস অফিসারের ‘শাস্তিমূলক বদলি’র ঘটনা সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের কাছে চট্টগ্রাম কাস্টমকে অসহায় করে তোলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের কাস্টমস কমিশনার এ এফ এম আবদুল্লাহ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বদলির আদেশ তো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দিয়েছে। এখানে আমি কী করব। সংশ্লিষ্ট কাস্টমস অফিসারের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে হয়তো আচরণগত সমস্যার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আর সে কারণে এমন আদেশ এসেছে। ’
আচরণগত সমস্যার কারণে বদলি করা হলেও অফিস চলাকালে বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় কাস্টম অফিসে হামলার মতো ফৌজদারি অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘ব্যবস্থা নিচ্ছি না, এটা বলা যাবে না। একটি তদন্ত কমিটি করেছি। প্রতিবেদন আসার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
জানা গেছে, পণ্য খালাসে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা না পেয়ে গত ১৬ জানুয়ারি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট-কর্মচারীরা বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে জেটি কাস্টম অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করেন। সে সময় অফিস কক্ষে ছিলেন কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আবদুল আহাদ। ওই ঘটনায় জেটিতে কাস্টমসের কার্যক্রম সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ ছিল। আর জেটিতে কর্মরত কাস্টম অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
ঘটনার একপর্যায়ে ওই কাস্টমস অফিসারকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিলে সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীরা অবরোধ তুলে নেন। এরপর দুই দিন ঘটনাটি নিয়ে লুকোচুরি করে কাস্টম। কাস্টমস কমিশনার ওই কর্মকর্তাকে জেটি থেকে বদলির আদেশ দেন। পরে আবার তা প্রত্যাহার করেন। এ অবস্থায় ২২ জানুয়ারি জেটিতে কাজে যোগ দিতে গেলে আবারও প্রতিবাদ করতে থাকেন সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীরা। এরপর ২৩ জানুয়ারি সহকারী কমিশনার আবদুল আহাদকে কাস্টম হাউস থেকে একেবারে বদলি করে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর কাস্টমস অফিসাররা হতবাক হয়ে যান। ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ঘটনায় কাস্টমস অফিসার জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু তা না করে উল্টো কাস্টমস অফিসারকে শাস্তিমূলক বদলি করায় আশ্চর্য হয়েছি। এ পদক্ষেপে আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে, মনোবলও হারিয়ে গেছে। আগামী দিনে রাজস্ব আদায়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ’
এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তারা কাঙ্ক্ষিত সুবিধা না পেয়ে এর আগে একাধিকবার ধর্মঘট ডেকে কাস্টম অফিসকে অচল করে রেখেছেন। কিন্তু সে সময়ের কাস্টমস কমিশনাররা অবৈধ দাবির কাছে মাথা নোয়াননি। পরে আলোচনার মাধ্যমে সেসবের সুরাহা হয়েছে। কিন্তু এ ঘটনায় আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম। ’
বদলির ঘটনার পর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কর্মচারীরা উচ্ছ্বসিত। চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি খায়রুল বাশার মিলটনও স্বীকার করেছেন, ‘সহকারী কমিশনার আবদুল আহাদ একজন সৎ কর্মকর্তা, ভালো মানুষ। কিন্তু তিনি অযথা হয়রানি করায় আমরা আন্দোলন করে দাবি মানতে বাধ্য করেছি। ’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে