


বাংলাদেশ সাধীনতা সংগ্রামের সময় জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া জাতীয় শ্লোগাণ ছিল, ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার মাত্র ৪৬ বছর পরে আজ আমরা দেখছি যে, আমাদের পদ্মা-মেঘনা, যমুনা, তিস্তা নদীসহ ৫২টি নদী আজ পানিশুণ্য মরুভূমি হতে চলেছে প্রায়।এ ছাড়াও ঢাকা শহরের চার পাশের নদীগুলো দখল এবং দুষণের কবলে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দেশের সমস্ত নদ-নদীর সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ নদ-নদীর মূখপত্র নোঙর সম্পাদক সুমন শামস এর সাথে একান্ত স্বাক্ষাতকারে কথা বলেন বিশিষ্ট নদী বিজ্ঞানী অধ্যাপক আইনুন নিশাত।
সুমন শামস : ঢাকা শহরের চার পাশের নদীগুলো দখল এবং দুষণের কবলে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে একই সাথে সারা দেশের সমস্ত নদ-নদীর একই অবস্থা। চার পাশের নদী গুলোকে আমরা কি ভাবে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারি?
ড. আইনুন নিশাত : আমি যখন কোন নদীকে বিবেচনায় আনি তখন তার তিনটা দিক দেখি। একটা হচ্ছে নদীটার ভৌত অবস্থা, (ফিজিক্যাল) অনেক সময় (এ্যবার্টিক) বলা হয়, দ্বিতীয়টা হচ্ছে (বায়টিক), এর ভিতরের যে জীবন আছে আর তৃতীয়টা হচ্ছে তার (ক্যামিক্যাল), রাসায়নিক অর্থাৎ তার গুণগত মান এ- বি-সি এ্যবায়টিক, বায়টিক এন্ড ক্যামিক্যাল। বাংলায় বললে তার ভৌত অবস্থা তার জীবনের অবস্থা এবং তার রাসায়নিক অবস্থা। আবার অন্য দিক দিয়ে ঘুরিয়ে বললে বলা যেতে পারে যে এর ভিতরে যে পরিমানের পারি প্রবাহিত হচ্ছে তার হিসাব। কোয়ান্টিটি আরও একটা হচ্ছে কোয়লিটি পানির গুণগত মান। তো আমরা কোয়ান্টিটির নিয়ে কথা বার্তা বলি কিন্তু কোয়ালিটির দিকে আজ পর্যন্ত নজর দেই নাই। অথচ আমাদের দেশের ১৯৯৫ এর আইনে মানে এই যে গুণগত মানের যে পরিবর্তন হলো অর্থাৎ রাসায়নিক মানটা পরিবর্তীত হয়ে দুষিত হওয়ার কারণে কিন্তু নদীটার জৈবীক যে জীবন সেটা নষ্ট হয়ে গেল। পানির প্রবাহের পরিমান হয়তো ঠিক আছে কিন্তু রাসায়নিক অর্থাৎ কোয়লিটিটা নষ্ট হওয়ার কারনে কিন্তু তার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল।
আমি যদি বলি যে বুড়িগঙ্গা নদীতে আমি শুশক দেখেছি। বুড়িগঙ্গাতে আমি শয়ে শয়ে জেলে নৌকা দেখেছি। বুড়িগঙ্গাতে ইলিশ মাছ ধরতে দেখেছি, যেটা আজকে অবাস্তব মনে হয়। ৬০ এর দশকে দেখেছি বেশী দিন আগে না। তা হলে বুড়িগঙ্গার পানির পরিমান কতটুকু কমেছে সেটাতে আমি পরে আসছি কিন্তু বুড়িগঙ্গার গুণগতমান নষ্ট হয়েছে বলে জীবনটাও নষ্ট হয়েছে আর গুণগতমান নষ্ট হয়েছে পানি দুষিত হয়েছে বলে। অর্থাৎ শিল্পায়ণের কারণে ট্যানারী ইন্ডাসট্রির কারণে, তেজগাঁও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার কারণে, টঙ্গী ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার কারণে, র্গামেন্টস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা প্রসার লাভের কারণে, ডাইং ইন্ডাস্ট্রি প্রসার লাভের কারণে বর্জ্য ট্রিট না করে এটা ফেলা হচ্ছে। এখন এটার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অঙ্গীকার কতোটুকু এবং রাষ্ট্র কতোটুকু সজাগ?
১৯৯৫ এর আইন ১৯৯৭ রেজুলেশন এবং ২০০০ সালের পরিবেশ আদালত ২০১০ গিয়ে আইনটাকে আরো শক্ত করা হয়েছে। এগুলো সবই করা হয়েছে কিন্তু পরিবেশ রক্ষা করার জন্য। তবে এই ক্ষেত্রে জাতির অঙ্গীকারটা ছিল আইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। জাতির অঙ্গীকারটা আমরা পাই তার সংবিধানে এবং সম্প্রতি যে পঞ্চদশ সংসধনী হয়েছে এটা কিন্তু পরিবেশ রক্ষায়, নদীর পানির গুণগত মান রক্ষায়, জলাভূািম রক্ষায়, জীববৈচিত্র রক্ষায় একটি অনন্য সিদ্ধান্ত।
২০১১ সালে আমাদের সংবিধানে আমাদের সংবিধানে ১৮ (ক) ধারা সংযোযিত হয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে যে, রাষ্ট্রের দাইত্ব হচ্ছে পরিবেশ, প্রকৃতি, জলাভূমি, জীববৈচিত্র, বন-সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ এগুলোকে তার অখণ্ডতা বজায় রেখে সেটাকে রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ আমরা হয়তো আইন তৈরী করে শুরু করে ছিলাম কিন্তু জাতির কোন অঙ্গীকার ছিল না। এখন জাতির অঙ্গীকারটা এসছে এটা যদি রক্ষা করা যায় তাহলে বুড়িগঙ্গা অবশ্যই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।
গুণগত মানের সাথে এখন যদি পরিমাণগত মানের হিসাব করি বুড়িগঙ্গা নামেই কিন্তু প্রমানিত হয় যে আজ থেকে ৫০০ বছর কিংবাব ১০০০ বছর আগে এটা গঙ্গার সাথে যুক্ত ছিল, পদ্মার একটা ধারা ছিল হয়ত কোনো এক সময়। পরবর্তীতে যখন ব্রহ্মপুত্র যমুনা খতে প্রবাহিত হয় তখন এটা যমুনার সাথে সম্পর্কিত হয় এবং বুড়িগঙ্গার যে মূলধারাটা যমুনা থেকে আসতো সেটা এখন মৃত প্রায় নেই বললেই চলে। অন্য নামে পরিচিত হচ্ছে এখন তুরাগ এবং বংশাই নদীর পানি এবং সাভারের বিল অঞ্চলে কিছু পানি মিলে বুড়িগঙ্গায় আসছে। বুড়িগঙ্গায় যেহেতু জোয়ার-ভাটা আছে অতএব জোয়ার ভাটা নির্ধারণ করে সমুদ্র চন্দ্র সূর্যের টানে যেটা হয় অর্থাৎ পানির স্তরটা ঠিক আছে।
এর পরে থককে গভীরতা। এই গভীরতাটা বন্ধ হয়ে যাবে যদি সলিড বর্জ্য ফেলে ফেলে আমরা যেটা করছি এটা করলে পানির প্রবাহটা কমে যাবে। বর্ষাকালে বংশাই, তুরাগ এবং মূল ব্রহ্মপুত্রর যে ধারাটা ছিল সেগুলোর মাধ্যমে কিছু পানি প্রবাহিত হয় বলে বর্ষা কালে পানির গুণগত মানের উন্নতি হয়, কিছুটা জীবন ফিরে আসে প্রবাহটা আসে।
আজকে বুড়িগঙ্গার পানির অবস্থা এতা খারাপ যে এটাকে পানি না বলে থক থকে কাঁদার কাছা কাছি, স্লারি পানির থেকেও ভারি একটা বর্জ্য প্রবাহিত হচ্ছে। আমি কিন্তু আশাবাদি যে সরকার যদি কনস্টিটিউশন সংশোধন করতে পারে তাহলে তারা কিছু দিনের মধ্যে স্টেপ নিতে পারবেন এই দুষণগুলোকে রোধ করতে।
এর জন্য প্রত্যেকটা কল-কারখানায় ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান বসাতে হবে। বসানো হচ্ছে হয়তো ঠিক মতো কাজ করে না। আর হাজারীবাগ ট্যানারিটা যেটা সাভারে নিয়ে যাওয়ার কথা এটা আমলাতান্ত্রীক জটিলতা অর্থাৎ সুপ্রিমকোর্টে গিয়ে এটার ইনজাংশন জারী করে আটকানো আছে কিন্তু আমি মনে করি যে সরকারকে জোর করে হলেও এটাকে পাঠিয়ে দেয়া উচিৎ কারণ এই বুড়িগঙ্গার পানিতে যে শুধুমাত্র নৌকা বা লঞ্চ চলাচল করে তা কিন্তু না। বুড়িগঙ্গার পানি মিশেছে নারায়ণগঞ্জের কাছে শীতলক্ষ্যার পনিতে শীতলক্ষ্যার পনি কিন্তু আবাবর আমাদের সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটম্যান্টপ্ল্যান্টের জন্য যে পানিটা আসে সেটা কিন্তু এই শীতলক্ষ্যার পানিটাকেই আনা হয়। সেটাও কিছুটা দুষিত বুড়িগঙ্গান পানি মিশে আরো দুষিত হচ্ছে অর্থাৎ এই দুষিত পানিকে শোধন করে ঢাকা নগরবাসীকে ঠিকমতো সুপেয় পানিটা দিতে পাছে না ঢাকা ওয়াসা। আর ওয়াসার আরও একটা ট্রিটম্যান্টপ্ল্যান্ট চাঁদনীঘাটে আছে সেটার পানি এতো খারাপ যে ওটাকে আর ট্রিটকরা যায় না। আমি কিন্তু আশাবাদী এই কারণে যে আইন আছে আদালত আছে এবং রাষ্ট্রে অঙ্গীকার আছে তাহলে এখন প্রয়োজন হচ্ছে এটার বাস্তবায়ন। এখন কারিগরীভাবে এটাকে বাস্তবায়ন করে সুপেয় করা সম্ভব? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ আমি বলব সম্ভব। সরাসরি খাবার স্তরে হয়তো যাবে না কিন্তু পানির যে গুণগত মান ভালো পানি সেটা হয়তো কিছুটা যাবে।
৬০ এর দশকে লন্ডনের টেমস্ নদী কিংবা গ্লাজগোর ক্লাইন নদী কিংবা প্যারিসের সেইন নদী কিংবা রোমের প্রো নদী প্রত্যেকটার অবস্থা এই রকম ছিল। আমি জাপানের কিওটো শহরের মধ্যে দেখেছি শহরের নদীটা খুব ছেট কিন্তু আমাকে দেখাতে যখন নিয়ে গেল নদীর উপরে যে সেতু সেখান থেকে দাঁড়িয়ে তলাতে যে মাছ আছে সেটাকেও দেখা যায় সেটা অগভীর ছোট নদী। একদম ঝকঝকে পরিস্কার নদী এবং তারা আমাকে ছবি দেখিয়েছে যে ঐ নদীটাতে ময়লা পড়ে এমন অবস্থা ছিল যে একটা কুকুর কিংবা একটা বিড়াল ওটার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারতো। অর্থাৎ আইনের সঠিক প্রয়োগ করে এই কাজটি করা সম্ভব। তমে আমি মনে করি সরকারকে এই কাজে সাধারণ নাগরিকদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। কিভাবে করা যেতে পারে যে সমস্ত শিল্প, কল-কারখানা এই নদী দুষণের কাজে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের পণ্য যদি আমরা বর্জন করি তাহলে কিন্তু কনজ্যুমারের কাছ থেকে একটা চাপ সৃষ্টি হবে। আমি আগেই কিন্তু বলেছি যে সরকার চাচ্ছে তারা সংবিধান সংযোজন করেছেন পরিমার্জন করেছেন তাদের আইন আছে কোর্ট আছে সব কিছু আছে। এখন শিল্পপতিদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা। শিল্পপতিদের সাথে কথা বললে তারা যে দুষণে রোধ করা তাদের দাইত্ব এটা তারা শিকার করে। তাদের কথা হচ্ছে যে আমরা কয়েক জন যদি দুষণ রোধের জন্য ইনফ্লুয়েন্ট ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট চালাই আমাদের খরচ অনেক বেড়ে যাবে। আর যারা চালাচ্ছে না তাদের একটা কম্পেটিভ এজ হবে অর্থাৎ লেভেলপ্লেইং ফিল্ড হলে এটা করা যেতে পারে অর্থাৎ রাষ্ট্র যদি সকলে উপর সমান ভাবে ইনর্ফোস করে তাহলে তারা এটা মানতে বাধ্য হবে।
আর চামড়ার ক্ষেত্রে, আমি মনে করি চামড়া ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্দ্যোগে অবিলম্বে এই দুষণ রোধের কাজটি তাদের করতে হবে আদারওয়াইজ ২০১৫ সালের পরে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য কোনো দেশ কিনবে না। কারণ আর্ন্তজাতিক আইনের মধ্যে তারা পড়ে যাবে। আপনি বহু গার্মেন্টস ইন্ডাষ্ট্রিজ দেখবেন তারা কিন্তু এখন কম্পাইন্ট হচ্ছে নিয়ম কানুুন মেনে চলছে। আপনারা দেখলেন যে একটা গামের্ন্টস পুরে গেল বলে কিন্তু ওয়ালর্মাট তাদের অর্ডার বাতিল করে দিল ওয়ালমার্ট হচ্ছে কতো বড় কম্পানী আপনি বুঝিতে পারছেন। অর্থাৎ আমাদের এখন প্রয়োজন হচ্ছে রাষ্ট্রের উপরে চাপ সৃষ্টি করা অনুরোধ করা এবং এ্যাড দ্যা সেমটাইম দুষণকারীর উপরেও চাপ সৃষ্টি করা।
সুমন শামস : শহরের নদীগুলোকে কি ভাবে দুষণ মুক্ত করা যায়?
ড. আইনুন নিশাত : এই দুষণাটা হচ্ছে শহরের কাছে যেটা যেমন ঢাকায় বুড়িগঙ্গা, খুলাতে ভৈরব, চট্রগ্রামে কর্ণফুলী শহরের আশেপাশে কিংবা কল কারখানার আশেপাশে যেগুলো। এখন বর্ষা কালে আর শীত কালে যে পানি ব্যতিক্রম আমারা দেখি এটা বুঝতে হবে যে এটা প্রাকৃতিক। এখন শুকনো মৌসুমে আমাদের উত্তরবঙ্গের নদীগুলো একদম শুকিয়ে যায়। নদীগুলো কি শুকায় নাকি আমরা শুকিয়ে ফেলি? আপনি নভেম্বর মাসে ডিসেম্বর মাসে ওখানে গেলে দেখতে পাবেন পানির পাম্প বসিয়ে পানি তোলা হয়। আমরা এখন কথা বলছি এখনই গেলে আপনি দেখবেন ছোট নদীতে অসংখ্য পাম্প বসিয়ে পাম্প করা হচ্ছে সেচের কাজে অর্থাৎ নদী থেকে আমি পানি তুলে মাঠে দিচ্ছি সেচের কাজে। কেন দিচ্ছি? মানুষ বেড়েছে। ১৯৪৭ সালে যে দেশে মানুষ ছিল ৪ কোটি আজকে সেখানে ১৬ কোটি অর্থাৎ আমাকে চারগুণ বেশী খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন করতে হচ্ছে কিন্তু জমি বাড়েনি অর্থাৎ ঐ জমিতে শুকনো মৌসুমে সেজ দিচ্ছি এই সেচটা কোত্থেকে আসছে? কিছুটা আসছে ভূগবস্থ থেকে আর ভূগর্বস্থ থেকে পানিটা নেমে গেলে নদী থেকে পানিটা চুঁইয়ে নিচে চলে যাচ্ছে কিছুটা আসছে পাম্পের মাধ্যমে নদী থেকে অর্থাৎ আমরা নদীগুলোকে শুকিয়ে ফেলছি। আমাদের এখন উচিৎ হবে যদি সম্ভব হয় প্রত্যেকটা নদীতে কিছুটা পানি রেখে দেয়া।
আরও একটা সমস্যা হচ্ছে যে শুকনো মৌসুমে যে পরিমানের পানি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় তার ৯২% আসে দেশের বাহিরে থেকে। এবং এই প্রবাহের উপরে কিন্তু আমাদের কোনো দখল নেই কিংবা কোনো প্রকারে নিয়ন্ত্রণ নেই। তো আমি আমার মূল কথাটিতেই ফিরে যাবো যে নদীটিকে দেখব তিন দিক থেকে তার ভৌত অবস্থা। এখানে খুব দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে মানু ক্রমান্নয়ে নদীকে চাপিয়ে ছোট করে ফেলছে। এখন নদীর তিটা বেসিক প্যারামিটার যদি আমি দেখি তার প্রশস্ততা, তার গভীরতা এবং তার ঢাল। এই তিনটা বেসিক প্যারামিটার দিয়ে নদীর জিওমেট্রিটাকে প্রকাশ করা যায়। তার সাথে আমরা ভুলে যাই যে নদীর সাথে পলিবহনের একটা ক্ষমতা আছে। পলিকে আমি ইংরেজীতে সেলিম্যান্ট বলবো কারণ বাংলাতে পলি শব্দটা কারেক্ট না। সেলিম্যান্ট বহনের একটা ক্ষমতা আছে। সব কিছু মিলে নদীর একটা স্ট্যাবিলিটি আসে।
এখন দেশে যেহেতু জাগা শর্টেজ ক্ষমতাসীন ব্যাক্তিরা নদীগুলোকে চাপিয়ে ফেলছে। নদীগুলোতে আঁড়িবাঁধ দিয়ে তার প্রবাহ নষ্ট করছে। আপনি এটা যশহর কিংবা কুষ্টিয়া অঞ্চলে গেলে দেতে পাবেন যে কতোটা প্রকটা আকার ধারণ করেছে। অর্থাৎ নদী প্রবাহের ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে। অর্থাৎ এটার একটা বিরাট প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্রের উপরে। নদীকে চাপিয়ে ফেলে যখন আমি নদীকে সংকুচিত করে ফেলছি, নদীর তল দেশটা তখন উপরে উঠে আসছে এবং তখন পানি ধারণের ক্ষমতা তার কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রকৃতিও এ্যাডজাষ্ট করে একটা বিচিত্র অবস্থাতে যাচ্ছে।
আমরা যদি এখন থেকে পাঁচশত বছর আগে কিংবা একহাজার বছর আগে এমনকি দুই শত বছর আগের ইতিহাসেও দেখি। আগে যখন গ্রামপঞ্চায়েত ছিল। ঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে যে পঞ্চাতে নির্বাচিত হতো তা না, প্রভাবশালী ভূ-স্বামী হয়তো পঞ্চায়েতের মাতুব্বর করেছে কিন্তু তাদের অধীনে যে সমস্ত কর্মী থকতো, গ্রাম সরঞ্জামী কিংবা অষ্টপ্রহরী তারা মিলে নদীগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতো। তখন দেখা যাবে যে প্রত্যেকটা জনপদে স্থানীয় জনসাধারণ তাদের এলাকার নদীগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। ছোট নদীগুলো তারা কায়ীক শ্রমে পলিমুক্ত করে তার প্রবাহটাকে ঠিক রাখা হতো যেন নৌকা চলাচল করতে পারে। শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে গেলেও বর্ষা মৌসুমে যাতে পানি প্রবাহিত হয়। আর বড় নদীগুলার ক্ষেত্রে, যমন যমুনা নদীর ক্ষেত্রে বা-লিং বলে একটা পদ্ধতী আছে, বাঁশ দিয়ে তৈরী করে সেখানে একটা গভীর চ্যানেল তারা বজায় রাখতো। এটা বৃটিশ প্রিয়ডে স্থানীয় ভূ-স্বমীরা এটা করতেন। পরবর্তীতে সরকার এই দাইত্ব গ্রহণ করে এবং নদীর যে রক্ষণাবেক্ষনের পদ্ধতি ছিল সেটা উঠে যায়। এখন আমরা ভুলতে বসেছি। অর্থাৎ নদীরও একটা যত্ন নেয়ার প্রয়োজন আছে। আমরাতো নদীর যত্ন নেই না বরং উল্টো তার বুক থেকে পনি তুলে তাকে ড্রাই করছি এবং সেটার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্রের উপরে, ইকোসিস্টেমের উপরে, প্রতিবেশের উপরে।
বন্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমরা ফ্লাড ডাইক্স করছি, এ্যমেইনম্যেন্ট করছি, বাঁধ সিস্টেম করছি কিন্তু এটা করে ফ্ল্যাড প্লেনের সাথে অর্থাৎ প্লাবন ভুমির সাথে নদীর যে সংযোগ ছিল সেটা আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি। প্লাবন ভুমির ভিতরে যে জলাভূমিগুলো ছিল তার সঙ্গে নদীর সংযোগকে আটকে দিয়ে জলাভূমিগুলোকে বদ্ধ পুকুরে পরিণত করছি। মাছের মূল উৎপাদন ক্ষেত্র ছিল কিন্তু এই জলাভূমি। অর্থাৎ প্লাবনভূমির সাথে নদীর যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এই যে বললাম যে নদীর তিনটা বিষয় আছে, তার জীবন একটা আছে। সেই জীনের বড় অংশটাকে আমরা বন্ধ করে ফেলছি।
অর্থাৎ নদী রক্ষণাবেক্ষণ একটা হলিস্টিক উপায়ে দেখতে হবে। নদীর সাইজটার উপরে বিবেচনা করতে হবে। এক র্ফমুলায় সব চলবে না। যমুনা যে ফর্মুলাতে চলে, চিকলি কিংবা চওয়ালকাটা কিংবা ঘাগড় কিংবা লিটেল যমুনা এই ফর্মুলাতে চলবে না। আবার মহানন্দা, কিংবা গড়াই কিংবা আড়িয়াল খাঁ কিংবা গোমতী কিংবা মাতামহুরি কিংবা ফেনী নদী, সেটার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাটা অন্য রকম হবে। যে কারণে আমরা বলে থাকি যে প্রত্যেকটা নদীর জন্যে অববাহিকা ভিত্তিক একটা ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।
নদীর কিছু স্বতন্ত্রতা আছে, নদীর কিছু স্পেসিফিক ব্যাপার আছে। অফর্কোস, জেনারেল সাইন্সের ফরমূলা, জেনারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ফরমুলা ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু এই কাজটি করতে গেলে স্থানীয় জনসাধারণকে সংপৃক্ত করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। স্থানীয় জনসাধারণকে সংপৃক্ত করে স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে, এই ক্ষেত্রে আমি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদে যেতে রাজী আছি এর উপরে না। অর্থাৎ স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবস্থাপনাটা স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই করতে হবে। এই ব্যবস্থাপনাটা কিন্তু আমাদের ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যায়, ছিল।
নদীর কিছু ধর্ম আছে। নদী চলাচল করে, নড়াচড়া করে এক জায়গা থেকে আরেক জয়গায় চলে যায়। নদী যখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মুভ করবে, মানে যে নদী নদীর পাড় ভাঙ্গে না সে নদী নদী না। যে বাচ্চা দুষ্টাম করে না বুঝতে হবে যে তার কোনো অসুবিধা হচ্ছে। যে নদী তার পাড় ভাঙ্গে না বুঝতে হবে তার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। পাললিক শীলাতে এ্যলুভিয়ামের মধ্যে যে নদী সেটা মুভ করবেই।
এখন থেকে পঞ্চাশ বছর আগে যখন লোক সংখ্য এক তৃতীয়াংশ ছিল তখন নদীর পাড় ভাঙলে জনপদের অসুবিধা হতো না কারণ জনপদ নদীর পাড়ে কিন্তু নদী থেকে বেশ দূরে থকতো। কিন্তু এখন মানুষের চাপে একেবারে নদীর পাড়েই জনপদ গড়ে উঠেছে সেই ক্ষেত্রে কিছু নদী শাসনের প্রয়োজন। কিন্তু নদী শাসনটাও কতগুলো স্পটে নদী ভাঙ্গনের রোধ না করে নদীটার একটা মাস্টার প্ল্যান করে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ফ্ল্যাড এ্যাকশনপ্লানের মাধ্যমে ১৯৮৯ থেক ১৯৯৫ সালে পর্যন্ত এই কাজটি কিন্তু করা আছে। কোন নদীতে কোন অববাহিকায় কোন ব্যবস্থাপনা করতে হবে সেই পরিকল্পপণা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আছে। প্রয়োজন হচ্ছে বাস্তবায়ন কিন্তু যখনই বাস্তবায়ন করতে যাব তখনই ভূ-স্বমী ক্ষমতাসীন ব্যাক্তিদের সাথে সংঘাত অবস্বম্ভাভি আর সেই সংঘাত কিভাবে মেটানো হবে সেটা নিয়ে আলোচনার অবকাশ আছে।
সুমন শামস : বুড়িগঙ্গা নদীকে বাঁচাতে আমরা কি করতে পারি?
ড. আনুন নিশাত : আমাদের সংবিধানে ১৮ (ক) ধারা সংযোযিত হয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে যে, রাষ্ট্রের দাইত্ব হচ্ছে পরিবেশ, প্রকৃতি, জলাভূমি, জীববৈচিত্র, বন-সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ এগুলোকে তার অখ-তা বজায় রেখে সেটাকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের সয়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের যে পানিটা আসে সেটা কিন্তু শীতলক্ষ্যার উজান থেকে আসছে, সেটাও কিছুটা দুষিত, বুড়িগঙ্গার পানি মিলে এটা আরও দুষিত হচ্ছে। অর্থাৎ এই দুষিত পানিকে শোধন করে ঢাকার নগরবাসীকে শুপেয় পানিটা ঠিক মতো ওয়াসা দিতে পারছে না। ওয়াসার আরও একটা ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট ওটা চাঁনীঘাটে আসে সেটা তারা শুকনো মৌসুমে বন্ধ করে দেয়। কারণ ওটার পানি এতা খারাপ যে ওটার পানি আর ট্রিট করা যায় না।
সুমন শামস : বুড়িগঙ্গার পানির প্রবাহ ঠিক করতে সরকার যমুনা নদী থেকে পানি আনার একটা প্রস্তাবের কথা আমরা শুনেছি? এ ব্যাপরে একটা নদী কমিশন এবং টাস্কর্বোড গঠন করা হয়েছে।
ড. আইনুন নিশাত : আমি ব্যাক্তিগতভাবে এটার সমর্থক নই। বুড়িগঙ্গাকে দুষণ রোধ করতে বুড়িগঙ্গার কাছেই আবার ফিরিয়ে দিয়ে বুড়িগঙ্গাকে দুষণ রোধ করতে হবে। আমার যে রোগটা হয়েছে সেই রোগের প্রতিশোধণ করাটাই মূল উদ্দেশ্য। মলম লাগালে তো রোগটা দূর হবে না। কাজেই বাহিরে থেকে পানি এনে ব্যয়বহুল প্রকল্প করছেন সরকার ভালো কথা। কিন্তু দুষণ রোধের জন্য ইণ্ডাষ্ট্রিয়াল পলি্উশন রোধ করার কোনো বিকল্প নেই।
সুমন শামস : টাস্কফোর্স গঠন করার পর নদীতে যে সীমানা পিলার স্থান করা হচ্ছে এটাই আসলে নদীর সীমানা পিলার?
ড. আইনুন নিশাত : নদীকমিশন তখনই হয় যখন তার ক্ষমতা থাকে। যে কমিশনে শুধু আলাপ আলোচনা হবে সেটাতো আর কিছু বাস্তবায়ন করতে পারবে না। আগেই বললাম যে ক্ষমতাসীন ভূ-স্বমীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। আর টাস্কবোর্ড যেটা করা হয়েছে, সেটা কতোটা কার্যকর হচ্ছে সেটা আমি ঠিক জানি না কিন্তু তার আগে আমার কিছু ডেফিনেশন জানা প্রয়োজন নদী কাকে বলে? বর্ষাও নদী কি নদী? শীতকালের নদী কি নদী? এখন স্থানীয় প্রশাসন মীতকালের যে র্শীণ নদী সেটাকেই তারা নদী বলছেন। তাহলে আমার পাল্টা প্রশ্ন হচ্ছে শীত কালে কিংবা শুকনো মৌসুমে যখন একেবারে শুকিয়ে যায় তাহলে সে নদীটা কি নদী না? নদী হচ্ছে, নদীটা যখন কানায় কানায় ভর্তি থাকে তখন তার পাড়টাকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। অনেক জায়গাতে নদীর পাড়টা একেবা খাড়া সেখানে চিহ্নিত করা যায় না আবার কোনো জায়গায় চিহ্নিত করা যায়। নদীকে আমি চিহ্নিত করতে পারি বর্ষায়, বর্ষার নদীটা হচ্ছে নদী, ভরা নদীটা হচ্ছে নদী। উপকূল উপচেপরা না মূল প্রবাহ যেটা সেটা নদী। যদি টাস্কর্ফোসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই নদী চিহ্নিত করণ হয়ে থাকে তা হলে এই চিহ্নিত করার কাজটি সঠিক হচ্ছে না।
সুমন শামস : কিছু দিন আগেও দেখেছি যে নদীর দুই ধারের যে বিস্তীর্ণ প্লাবণ ভূমিতে বিচরণ করতো যেটা জীববৈচিত্রের জন্য প্রয়োজন সেখানে বিভিন্ন রকমের আবাসি প্রকল্পের সাইনর্বোড।
ড. আইনুন নিশাত : নদীটা হচ্ছে সরকারের খাস জমি এই অংশটাকে উদ্ধার করে সরকারের উচিৎ দখলে আনা। কিন্তু আগেই বলেছি নদীর দুই পাড় অত্ত্যন্ত প্রভাবশালীদের দখলে এবং স্থানীয় প্রশাসন প্রভাবশালী লোকদের পক্ষে কাজ করছে। আর এই হাইজিং সোসাইটি সম্প্রতি গড়ে উঠেছে। মানুষ নগরমুখী হয়েছে। ১৯৭২ সালে যে শহরের লোকসংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ছিল সেটা এখন এক কোটি ত্রিশ লক্ষ অর্থাৎ নগরায়ণ প্রক্রিয়াটা জোরদার ভাবে শুরু হয়েছে গত দশ-পনের বছরে সেই কারণে সাইনবোর্ড দেখছি। সেই জন্যই বলছি যে নদীটাকে চিহ্নিত করে আরোও আগেই সরকারের দখলে নেয়া উচিৎ ছিল।
সুমন শামস : আমরা জানি যে নদী প্রকৃতি এবং লজবাযু পরিবর্তন বিষয়ে অনেক বড় সমস্যার সমাধান আপনি দিয়ে থাকেন কিন্তু আমাদের নদ-নদীকে কেন্দ্র করে যে সমস্যা সেটার সমাধান আপনি কী দিবেন?
ড. আইনুন নিশাত : একজন মানুষের পক্ষে তো আর সব কাজ কনা সম্ভব না। আমি মূলত পড়াশোনা করেছি নদীর উপরে তার পরে ১৯৯৮-৯৯ পর্যন্ত এই ফিল্ডে কাজ করেছি পানির ফিল্ডে। আমি কিন্তু ১৯৯৯ সালের পর থেকে সরে গেছি। সরে গিয়ে জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, জলাভূমি সংরক্ষণ, তার পলিসি, তার স্ট্যাডেজী সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামিয়েছি। তার পরে আমি ঐ সময় থেকেই আমি জলবায়ু পরিবর্তন ক্লাইমেট চেইন্জ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি আর এখন নদীক মিশন কিংবা টাক্সর্ফোস নিয়ে কি হচ্ছে সেই ব্যাপারে আমি খুব একটা আপটুডেট না, ওর ধারে কাছেও নাই।
সুমন শামস : জলবাযু পরিবর্তনের বিষয়ে আমাদের অবস্থান কোথায়?
ড. আইনুন নিশাত : বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহিত এবং সরকারের ক্যাবিনেট কর্তৃক গৃহিত ও প্রণিত এবং গেজেটেড বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইন্জ স্ট্যাডেজী এন এ্যাকশান প্ল্যান ২০০৯ যেটাকে ফলো করে পৃথিবীর বাকি সমস্ত দেশ তাদেও এ্যাকশ্যান প্ল্যাান তৈরী করছে। আমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছি।
সুমন শামস : আন্তজাতিক নদীর বাঁধ এটাওতো একটা বড় সমস্যা, যে কাণে আমাদের নদীতে পানির প্রবাহ নেই!
ড. আইনুন নিশাত: প্রথমেই বুঝতে হবে যে নদীর উপরে বাঁধ নির্মাণ। শব্দটি বুঝতে হবে, বাঁধ হচ্ছে নদীর সমান্তরাল। আর প্রতিবেশী দেশের সাথে যেটা নিয়ে আমাদের সংঘর্ষ সেটা হচ্ছে নদীর আঁড়াআড়ি। এটার ইংরেজী হচ্ছে ব্যারাজ বাংলায় হচ্ছে ব্যারাজ। ইংজেীতে হচ্ছে ড্যাম এবং বাংলায় হচ্ছে ড্যাম। কাজেই প্রথমে বুঝতে হবে এটা আঁড়াআড়ি না সমান্তরাল। হ্যাঁ আমাদের প্রতিবেশী দেশ উজানে তার দেশের মধ্যে আঁড়াআড়ি অবকাঠামো নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করছে যেটা বৈশ্যিইক দৃষ্টিভঙ্গীতে গ্রহণ যোগ্য নায়। তবে এই ক্ষেত্রে বৈশ্যিইক ভাবে কোনো আইন নেই নজির আছে। অর্থ্যাৎ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটা সামঝোতায় পৌঁছাতে হবে এবং আমরা দেখতে পাই যে রাজনীতিটাই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়, বিজ্ঞান কিংবা পানি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্তমান সরকার তিস্তা নদীর উপরে চুক্তি করার পরেও ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে সেটা এগোতে পরছে না। অর্থাৎ এটা নেয়-নীতি, জ্ঞান বিজ্ঞন কিংবা ত্বাত্ত্বিক দিক দিয়ে সলভ হবে না এটা রাজনৈতিক অবকাঠামতে নিয়ে সমাধান করতে হবে।
সুমন শামস : আমাদের নদীগুলোর আসলে মালিক কে?
ড. আইনুন নিশাত : আমিও খুঁজে বেড়াচ্ছি যে নদীর আসল মালিক কে? আর বিআইডব্ল্উিটিএ উৎসাহ নিয়ে কাজ করছে কিন্তু আসলে মালিক হচ্ছে ল্যান্ডমিনিস্ট্রি। বিআইডব্লিউটিএর অধিকার হচ্ছে নদীর ঘাটিতে নদীর পাড়ের স্টেশনগুলোতে যেমন নদীর ঘাটে যেটা। লঞ্চঘাট কিংবা স্টিমার ঘাট। ওইটুকু হচ্ছে তার। আর কিভাবে সার্বিক নদীকে ঠিক করতে হবে তার জন্য সরকারের কাছে এই রকম মোটা মোটা ভলিউমের বই আছে। ৩১ মার্চ ২০১৩।