মমতার পদত্যাগে আন্দোলন থামবে?

0
3

নারী চিকিৎসক হত্যার আন্দোলনের নজিরবিহীন একটা দিন দেখলো বঙ্গবাসী। রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে ৭২ ঘণ্টা আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা নবান্নের মুখ থেকে ফিরে এলেন।

মুখ্যমন্ত্রী তাদের জন্য অপেক্ষা করার পরও চিকিৎসকরা দেখা করলেন না। বিচারের দাবিতে আন্দোলনে অনড় চিকিৎসকরা নবান্নের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো প্রায় দুই ঘণ্টা। ভেতরে বসে রইলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাইরে আন্দোলনকারীরা। মমতার শাসকালে এ প্রথম এ রকম একটি নজিরবিহিন দিন দেখলো বঙ্গবাসী।
পরে মুখ্যমন্ত্রী আপসোসের সঙ্গে বললেন আমার পদত্যাগে যদি সব ঠিক হয়ে যায় তাহলে আমার পদত্যাগ করতে সমস্যা নেই। তবে কী মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন? তবেই থামবে আন্দোলন এ প্রশ্ন এখন বড় হচ্ছে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আন্দোলনে রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে। ফলে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টম্বর) চিকিৎসকদের সঙ্গে নানা শর্ত টানাপড়নে বৈঠক হল না। আজ বৈঠক হলে অনেটাই স্তিমিত হত আন্দোলনের।
কিন্তু কেন হল বৈঠক? সামান্য একটা লাইভ নিয়ে। চিকিৎসকদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠক হবে তার লাইভ সম্প্রচার করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তাতে বাধা দেন। মমতার অভিমত, বৈঠক করতে রাজি আছি, কিন্তু লাইভ নয়। এখানেই সমস্যার শুরু হয়।
৫ দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে অবস্থান করছেন রাজ্যের ২৬টি মেডিকেল কলেজের শতশত জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট যতই বলুক কাজে ফিরতে, যতক্ষণ না তারা নিরাপত্তা পাচ্ছে, তারা কাজে যোগ দেবেন না।
গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) যখন সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি ওঠে তখন রাজ্য সরকারের আইনজীবী জানিয়েছিল, গত এক মাসের চিকিৎসকদের আন্দোলনের কারণে রাজ্যে ২৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু দেশটির শীর্ষ আদালত অপর পক্ষের মন্তব্য না শুনে বিচারক নির্দেশ দিয়েছিলেন মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে সবাইকে কাজে ফিরতে হবে। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সব চিকিৎসক।
তাদের দাবি, একপক্ষ শুনে বিচারক এ নির্দেশ দিতে পারে না। মোদী-দিদির সেটিং তথ্য তুলে তারা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে রাত্রি যাপন করছেন। পাশে রয়েছে সিনিয়র চিকিৎসকরা। সিনিয়রদের দাবি, যতক্ষণ না জুনিয়রদের কথা মেনে নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ এ আন্দোলনকে তারা সমর্থন জানাবে। যদি রাজ্য সরকার কোনো কঠিন পদক্ষেপ নেয়, তাহলে বাংলার সমস্ত সরকারি হাসপাতালের আউটডোর বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হবে। একমাত্র খোলা থাকবে জরুরি পরিষেবা।
তাতে যেমন আরও বল পায় জুনিয়রা। তেমন তাদের সেই আন্দোলনে এগিয়ে আসছেন সাধারণ মানুষ। এগিয়ে দিচ্ছেন খাবার, পানি। মাথা গোজার জন্য করে দিয়েছেন পলিথিনের ব্যবস্থা। সরাসরি সাধারনরা তাতে যুক্ত না হলেও সব রকম সহযোগিতা করছেন বঙ্গবাসী। তারই মধ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব জুনিয়রদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানান। কিন্তু ডাক্তাররা অনড়। তারা একমাত্র বৈঠক করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
এরপরই বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্ন থেকে মেইল আসে আন্দোলনকারীদের কাছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসকদের বৈঠকের অনুমতি দেয়। এরপরই চিকিৎসকরা মেইল মারফত জানায়, বৈঠকে যোগ দেবে, ২৬টা মেডিকেল কলেজে ৩০ জন জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধি। সমস্ত বৈঠক লাইভ করতে হবে। যাতে বাংলার প্রতিটি মানুষ জানতে পারে ভেতরে কী কথা হচ্ছে।
কিন্তু নবান্নের তরফে বলা হয়, ১৫ জন প্রতিনিধি ভেতরে আসতে পারবে। বৈঠকে কোনো লাইভ হবে না। এরপরই চিকিৎসকরা জানান, আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে বৈঠক করতে চাই। আর এ লাইভের বিষয় পথ দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। মুখ্যমন্ত্রী যদি প্রশাসনিক বৈঠক লাইভ করতে পারেন। প্রকাশ্যে মন্ত্রী, আমলা, সচিবদের বকাঝকা করতে পারে। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের শুনানি যদি লাইভ হয়, সেখানে কেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক লাইভ দেখানো যাবে না। আমরা মনে করি এ লাইভ হলো স্বচ্ছতার পথ।
এরপরই প্রশাসনের তরফ থেকে তাদের গাড়ি পাঠালেও তারা সেই গাড়ি গ্রহণ করেনি। বরং নিজেরাই একটি বাস ভর্তি করে ৩০ জন প্রতিনিধি নবান্নে যান। অপেক্ষা করতে থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই প্রশাসন জানায়, বৈঠক লাইভ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নেই। বেঁকে বসেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। নবান্নের বাইরে তারা ঠায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন।
শোচনীয় অবস্থা হয় কর্মকর্তাদের। ভেতরে মুখ্যমন্ত্রী বাইরে চিকিৎসকরা। ছোটাছুটি শুরু করে দেন মুখ্যসচিব থেকে প্রশাসনের কর্তারা। একবার তারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যায়, আবার চিকিৎসকদের বোঝাতে আসে। কিন্তু শেষমেষ বৈঠক না করে ফিরে আসে চিকিৎসকরা। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী একা লাইভে আসেন এবং বলেন, কিছু বিষয় চাইলেও লাইভ করা সম্ভব নয়। তা ওদের বোঝানো যাবে না। তবে আমি ওদের মাফ করে দিলাম।
ফলে শর্ত টানাপড়েনে ভেস্তে গেল বৈঠক। ধারণা করা হচ্ছিল এ বৈঠক হলে অনেটাই শান্তি ফিরে আসবে বাংলায়। কিন্তু বৃহস্পতিবারও তা হলো না। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আপসোসের সঙ্গে বলেন, আমার পদত্যাগে যদি সব ঠিক হয়ে যায়, তাহলে আমার পদত্যাগ করতে সমস্যা নেই। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন? তবেই থামবে আন্দোলন এ প্রশ্ন এখন বড় হচ্ছে। অপরদিকে সিনিয়র চিকিৎসকার জানান, আজ লাইভ হলে তদন্তে অনেক ফাঁকফোকড় বের হয়ে পড়ত। সে কারণেই এড়িয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে