সৈকতে ৫ ঘণ্টার মাথায় ভেসে এলো আরেকটি তিমির মরদেহ

0
15
আরও একটি মরা তিমির দেহাবশেষ বালিয়াড়িতে উঠে এসেছে।

কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে শুক্রবার দুপুরের জোয়ারের সাথে ভেসে আসা মরা তিমিটি একইদিন দিবাগত রাত ১টার দিকে মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছে।

গবেষণার জন্য হাড় ও অন্য প্রত্যঙ্গ সংগ্রহের আশায় পুঁতে ফেলা স্থানটি সংরক্ষণ করছেন সমুদ্র ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, শুক্রবারের মরা তিমির দেহ পুঁতে ফেলার ৫ ঘণ্টার মাথায় আরও একটি মরা তিমির দেহাবশেষ বালিয়াড়িতে উঠে এসেছে। হিমছড়ি সৈকতের শুক্রবারের সেই স্থান হতে প্রায় ৫শ’ মিটার দক্ষিণে ক্ষুদ্রকায় তিমির মরদেহ জোয়ারের পানিতে এসে ভাটায় বালিতে আটকে গেছে। ২৫-৩০ ফুট লম্বা এ তিমিটিও অর্ধগলিত এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর কুমার সাহা।

তিনি জানান, শুক্রবার ভেসে আসা মৃত তিমির দেহাবশেষ সৈকতের বালিয়াড়িতে বিশাল গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয়েছে। জোয়ারের পানিতে আবার ভেসে যাওয়া থেকে দেহটি আটকাতে বন বিভাগ শতাধিক শ্রমিক দিয়ে প্রচেষ্টা চালায়। এসময় প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মী এবং উৎসুক জনতাও এতে সামিল হয়। কিন্তু সন্ধ্যা নামার পর উৎসুক জনতা ও অন্যান্য বিভাগের কর্মীরা ফিরে গেলেও বনবিভাগ, রামু উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করেন। ভেটেনারি সার্জনগণ ময়নাতদন্তের পর স্কেবেটরের সাহায্যে গর্ত করে বনবিভাগের লাগানো শতাধিক শ্রমিকের সহযোগিতায় মৃত দেহটি পুঁতে ফেলা হয়। রাত ১টার দিকে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্টরা বাসায় ফিরতে ২টা বেজে যায়।

সৈকতে ভেসে এলো আরেকটি তিমির মরদেহ

রেঞ্জ কর্মকর্তা আরও জানান, শনিবার ভোর ৬টার দিকে একই সৈকতের ভিন্ন পয়েন্টে আরও একটি মৃত তিমির দেহাবশেষ বালিয়াড়িতে উঠে এসেছে। জোয়ার নেমে যাওয়ার পর এটি বালিতে আটকে আছে। শুক্রবারের তিমির চেয়ে এটি সাইজে ছোট। এটিও ক্ষতবিক্ষত, অর্ধগলিত। ধারণা করা হচ্ছে এটিও আগে মরে ভাসতে ভাসতে ঢেউয়ের তোড়ে তীরে উঠে এসেছে। দুর্গন্ধ বেশি ছড়ানোর আগেই গতকালের মতো এটিও পুঁতে ফেলার উদ্যোগ চলছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পিএইচডি ফেলো মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, শুক্রবার তীরে উঠে আসা মরা প্রাণিটি ব্রাইড হুয়েল এবং এটি প্রাপ্ত বয়স্ক। নীল তিমি গ্রুপের একটি প্রজাতি হল ব্রাইড হুয়েল। এটি আমাদের বঙ্গোপসাগরেরই বাসিন্দা। তিমি সাধারণত দলবেঁধে চলে। কোন কারণে দলছুট হলে অনেক সময় তিমি মারা যায়। এটা এবং আজকেরটার (শনিবারে তীরে আসা) ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে এবং এসব তিমি আরও অন্তত ১০-১২দিন আগে মারা গেছে বলে ধারণা বিজ্ঞানী আশরাফের। কিন্তু তিমির মৃত্যুর সঠিক কারণ অজানা।

সূত্রমতে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমির ছবির সাথে প্রায় সকলেই পরিচিত হলেও বাস্তবে মাছটি দেখেছেন দেশের খুব কম মানুষই। এমনকি সমুদ্র উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের মানুষও কদাচিৎ দেখে থাকেন মাছটি। শুক্রবার দুপুরে সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে ভেসে আসে ৪৫ ফুট দীর্ঘ মরাপঁচা নীল তিমি। শনিবার সকালেও এসেছে আরও একটি তিমির নিথর দেহাবশেষ। ঘটনাগুলো স্থানীয়দের নজরে এলে বাস্তবে তিমি দেখতে সেখানে ধীরে ধীরে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। গণমাধ্যম ও ফেসবুকের বদৌলতে খবরটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ এমনকি চকরিয়া থেকেও উৎসুক মানুষ হিমছড়ি সৈকতে এসে হাজির হয়। ঘটনাস্থলে আসেন জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। ময়নাতদন্তের জন্য আসেন জেলা প্রাণিসম্পদ ও ওয়াইল্ড লাইফ বিভাগের সার্জনসহ একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী।

তীরে ভেসে আসা মরা নীল তিমির কঙ্কাল শিক্ষা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা উচিৎ মন্তব্য করে পরিবেশবাদী সাংবাদিক আহমদ গিয়াস বলেন, এর আগে ১৯৯০ সালের এই সময়ে শহরের লাবণী পয়েন্ট সৈকতে ভেসে এসেছিল একটি মরা নীল তিমি। যেটি ছিল আকারে প্রায় ৬৫ ফুট। সেই তিমির কঙ্কাল সংরক্ষণ করা হয়েছিল।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, মাটিতে পুতে ফেলা তিমির দেহাবশেষের প্রয়োজনীয় অংশ সমুদ্র ও মৎস্য বিজ্ঞানীদের পরামর্শে শিক্ষা ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের লক্ষ্যে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাংস পঁচে গেলে হাড়গুলো তুলে যেন সংরক্ষণ করা যায় সেই লক্ষ্যে পুঁতে ফেলা অংশটি ঘিরে রাখা হয়েছে। আজকে (শনিবার) ভেসে আসা তিমির দেহাবশেষও একই পদ্ধতিতে পুঁতে ফেলার উদ্যোগ চলছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে