বৈশ্বিক মহামারি করোনার নতুন সংক্রমণ অর্থনীতিতে ফের শঙ্কা

0
19

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমছে না কোনোভাবেই। এই সংকটজনক পরিস্থিতি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে দিনে দিনে। যার আঘাতে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে।

শিল্পকারখানা, অফিস, আদালত ব্যাংক-বিমা খোলা হলেও মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়ে আছে শ্রমবাজার। একদিকে জীবন আশঙ্কা, অন্যদিকে জীবিকার তাগিদ। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরো চরম আকার ধারণ করবে— বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে বেকারত্বের সঙ্গে বাড়বে সামাজিক সংকটও। ইতিমধ্যে দেশে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নজিরবিহীন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। তবে শুরু থেকেই বাংলাদেশ সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। গত বছরের অর্থাৎ ২০২০-এর মার্চ থেকে শুরু হয়ে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের এক বছর পূর্ণ হয়েছে।

করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারসহ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে দেশের ব্যাংকিং খাতের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাত নিজেই ধুকছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সামগ্রিক আর্থিক খাতের ওপরেই পড়েছিল। এর মধ্যে দেশের অর্থনীতির জন্য বড়সড় ধাক্কা হয়ে আসে করোনা মহামারির প্রকোপ।

গত এক বছরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার ওঠানামা করছে। করোনা এক বছরেও বিদায় নেয়নি পৃথিবী থেকে। কিন্তু তার পরও একে মোকাবিলা করেই আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তেমন পরিস্থিতিতে আমাদের ব্যাংকিং খাতকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে সামনের দিকে। অদৃশ্য এক ভাইরাস রাতারাতি বদলে দিয়ে সারা বিশ্বের চেহারা। গত বছরের করোনাকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন অফিস-আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শপিংমল, মার্কেট দীর্ঘ ৬৫ দিন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ থাকলেও ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমিত আকারে শুরু করে পুরোপুরিভাবে শুরু হয়ে গিয়েছিল ১৫ দিনের মধ্যে।

ঐ সময়ে রাস্তায় যানবাহন, লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল কঠোরভাবে। কিন্তু তার মধ্যেও মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংক কর্মীরা তাদের কর্মস্থলে গেছেন এবং ব্যাংকে আগত গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করেছেন। একদিকে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের জন্য চাপ দেওয়া হলেও খেলাপি কিংবা নিয়মিত ঋণ কোনোটিরই আদায় হয়নি। ফলে ব্যাংকের আয় অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, মুনাফা কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।

করোনা মহামারির মতো বড় ধরনের সংকটে দেশের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের জন্য শক্তিশালী ব্যাংকিং খাতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই সম্ভাব্য সংকট থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত উত্তরণের উপায় হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। করোনার অপ্রত্যাশিত ধাক্কা সামাল দিতে গিয়ে এরমধ্যে আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থা অনেক নতুন কলাকৌশল আয়ত্ত করে নিয়েছে।

কোভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনীতিতে প্রকট ও দীর্ঘস্থায়ী হবে—তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তেমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিজেদের ভূমিকাকে আরো গতিশীল করে তুলতে হবে। কোভিড-১৯-এর ক্ষতি কাটিয়ে আমাদের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ধারাকে টেকসই করতে চাইলে প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রচেষ্টা আরো জোরদার করতে হবে। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা ঠেকাতে আবারও সীমিত আকারে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

লকডাউনের এক সপ্তাহ সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ব্যাংকিং লেনদেন চলবে। আর লেনদেন-পরবর্তী সময়ে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে দুপুর ২টা পর্যন্ত। করোনা ঠেকাতে লকডাউন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল আর্থিক সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটিএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ (এমএফএস) সব মাধ্যমে গ্রাহকরা যেন সার্বক্ষণিক সেবা পান সে ব্যবস্থা করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে এমএফএসের ব্যক্তি লেনদেনের সীমা ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ওষুধ বিক্রয়কারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাবসায়িক লেনদেনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি লেনদেনের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত চার্জ নেওয়া যাবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে