পশ্চিমবঙ্গের এক নদীর মুখোমুখি: সুমন শামস

0
40

মিস শরিয়া বানু সাহসী, পরিশ্রমী, মেধাবী একজন কমিউনিটির গণমাধ্যম ভলান্টিয়ার। গত ২১ মার্চ ২০১৮ তারিখ আমি আরিকুল ভাইয়ের আমন্ত্রণে প্রথম ভারতের মালদা জেলা সফরে যাই।

আমার সাথে রাজশাহীর সহগযোদ্ধা মুক্তা রাজ সফর সঙ্গী হয়ে ছিলো। সোনা মসজিদ সীমান্ত হয়ে মহদীপুর সীমান্তে প্রবেশ করে মালদা শহরে পৌছে যাই্ শুক্রবার বিকাল ৩টার মধ্যে। মালদা শহর থেকে বাসে চড়ে পঞ্চানন্দপুর মোথাবাড়ী যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে ছিলো।

অসাধারণ লাগছিলো সেই ভ্রমণ। তরিকুল ইসলাম একজন নদী ভাঙ্গণে প্রায় তিনশত বিঘা জমি হারানো আহত একজন। এই অঞ্চলে এই রকম আরো অসংখ্য আহত মানুষের এখনো তাকিয়ে থাকেন গঙ্গা নদীর দিকে। যে নদী তাদের জীবনের সকল সম্বলহীণ করে ঝাড়খান্ডে চলে গেছে আর শতশত পরিবারকে পথে বসিয়ে ফেলে রেখে গেছে! সে সব অনেক কথা, যা শুনলে যে কারো মন খারাপ হতে পারে।

২৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে সকালে ভাগিরথী নদীর ছবি তুলে তরিকুল ভাইয়ের বাড়ী ফিরে আসতে হয়েছে একটি জরুরী টেলিফোন কলে।দ্রুত ফিরে এসে দেখি বাড়ীর সামনে অপেক্ষারত এক সুন্দী তরুণী বসে আছে আমাদের জন্য। বাড়ীতে প্রবেশ করে তার সাথে পরিচিত হয়ে অনেক আপন মনে হয়। মনে হয় অনেক কালের পুরাণ কেউ আমার সামনে এসে দাড়িয়ে আছে! তিনি মিস শরীয়া বানু। মালদা জেলার একটি নিউজ প্রতিষ্ঠানের গণমাধ্যম কর্মী। সে একই সাথে অনেক কাজ করতে জানে।

আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম। ক্যামেরা নিযে একা একাই শুটিং করে বাড়ী ফিরে গিয়ে আবার নিজেই সম্পাদনার কাজ শেষ করে অফিসে প্রেরণ করেন। আমার দেখা অনেকের মধ্যে তিনি বিষেশ কেই। অসাধারণ তার বিষয় এবং উপস্থাপনা।দেশের অসহায় জনগোষ্ঠির জন্য তার যেনো দুখের ঘুম পালিয়ে গেছে আরো অনেক কাল আগে। তারপর…

নদী ভাঙ্গনে অসহায় মানুষদের পাশে দাড়িয়ে কথা বলছেন। আলোচনার প্রসংগ ছিলো গঙ্গার ভাঙ্গণে দিসে হারা মালদহ জেলার পঞ্চানন্দপুর গ্রামবাসীর বেঁচে থাকার লড়াই। কি কারণে এই জেলার হাজার হাজার পরিবার আজ পথের ধারে পলেথিনের নিচে বেচে আছেন! আর কি ভাবে বেচে আছে তাদের ছেলে-মেয়রা?
১৯৬১ সালে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। সেই বছর ২১ এপ্রিল থেকে বাঁধ চালু হয়। ফারাক্কা বাঁধ ২,২৪০ মিটার (৭,৩৫০ ফু) লম্বা যেটা প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার সহায়তায় বানানো হয়েছিল। বাঁধ থেকে ভাগীরথী-হুগলি নদী পর্যন্ত ফিডার খালটির দৈর্ঘ্য ২৫ মাইল (৪০ কিমি)।

১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে কলকাতা বন্দরের কাছে হুগলি নদীতে পলি জমা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই পলি ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে জুন) ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গার ৪০,০০০ ঘনফুট/সে (১,১০০ মি৩/সে) জল হুগলি নদীর অভিমুখে প্রবাহিত হয়।

হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি বাঁধটি তৈরি করে। বাঁধটিতে মোট ১০৯টি গেট রয়েছে। ফারাক্কা সুপার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জল এই বাঁধ থেকেই সরবরাহ করা হয়।

ফারাক্কা বাঁধ ভারত তৈরি করে কলকাতা বন্দরকে পলি জমা থেকে রক্ষা করার জন্য।

তৎকালীন বিভিন্ন সমীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেন যে গঙ্গা/পদ্মার মত বিশাল নদীর গতি বাঁধ দিয়ে বিঘ্নিত করলে নদীর উজান এবং ভাটি উভয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে নষ্ট হতে পারে। এ ধরণের নেতিবাচক অভিমত সত্ত্বেও ভারত সরকার ফারাক্কায় গঙ্গার উপর বাঁধ নির্মাণ ও হুগলী-ভাগরথীতে সংযোগ দেয়ার জন্য ফিডার খাল খননের পরিকল্পনােও কাজ শুরু করে।

পরবর্তীতে যা মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার রাজ্যে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনে। এটি প্রায় ১৮ কি.মি লম্বা এবং মনহরপুরে অবস্থিত।

ভারত সরকারের গঙ্গানদীতে ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মাণ করে ১০,০০০ মি.মি ফিডার ক্যানেল দিয়ে ভারতের ভিভিন্ন রাজ্যে পানি সরিয়ে নিচ্ছে যে কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দেশের তালিকায় নেপাল ও বাঙলাদেশের নামের সাথে ভারতের মালদহ, মূর্শিদাবাদসহ বিভিন্ অঞ্চলের জলপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। এক সময় মালদহ জেলার বেশীর ভাগ ভুমি চলে গেছে গঙ্গা নদীর গর্ভে আর নিস্ব হয়ে পথের ভিখারী হয়ে হাজার হাজার পরিবার বসবাস করছে বিভিন্ন সড়কের পাশে। দীর্ঘবছর পর নদীর ওপাড় যে ভুমি ভেসে উঠেছে সেই ভুমি এখন আর মালদহ জেলার মধ্যে নেই। এই ভুমি এখন ঝাড়খান্ড রাজ্যের এবং বিহার রাজ্যের সম্পদ। অর্থাৱ ভারত সরকারের ভিন্ন রাজ্যের সম্পদ। আর সব হারানো মনুষ গুলো শুধু মালহদ জেলার সম্পদঁ!

২০০৪ সাল থেকে হামেদপুর খাটিয়াখানা চরে ধীরে ধীরে বসতি শুরা হয় ভূমি হীন নিস্ব নদীভাঙ্গা মানুষ দের। সদ্য গড়ে উঠেছে ৯টি গ্রাম আর ১২০০ পরিবার বসবাস করছে হামেদপুর খাটিয়া খানা চরে। একজন রাজেন মন্ডল যখন ভুমিহীনদের কথা বলেন তখন নদী ভাঙ্গণের কথা বলেন তখন মনটা গভীর বেদনাহত হয়ে যায়।

একজন তরিকুল ইসলাম এখনো হাল ছাড়ে নি। মিস্টার তরিকুঋল ইসলামের প্রচেষ্টায় নদী ভাঙা মানুষের জন্য হামেদপুর খাটিয়াখানা চরে ১২০০ পরিবার এখন তাদের হারানো ঠিকানা ফিরে পেতে শুরু করেওছে। নদীতে তরিকুল ইসলামের সহায় সমস্ত সম্বল বার বার ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। তার পর থেকে জনাব তরিকুল ইসলাম আরো হাজার হাজার গ্রামবাসীদের নিয়ে আজো পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বেচে থাকার লড়াই সংগ্রাম।

তাদের বসবাসের জন্য প্রয়োজন সরকারিভাবে স্থায়ী ব্যবস্থা করা। ধন্যবাদ শরিয়া বানু এবং কমিউনিটি নিউজকে। আরো কথা বলার আছে…২৬ মার্চ ২০১৮। মালদা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে