ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার লেখক মুসতাকের কারাগারে মৃত্যু

0
50

রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার রাষ্ট্রচিন্তার লেখক মুসতাক আহমেদ বৃহস্পতিবার রাতে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে মারা গেছেন। গত বছরের ৬ মে রমনা থানায় র‌্যাবের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় লালমাটিয়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের জেলার দেব দুলাল কর্মকার বলেন, সন্ধ্যা ৭ টা ১০ মিনিটের দিকে মুসতাক আহমেদ কারাগারে মাথা ঘুরে পড়ে যান। তখন তাকে কারারক্ষীরা উদ্ধার করেন। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শরীফ জানান, কাশিমপুর কারাগার থেকে ওই বন্দিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে তার কারণ জানা সম্ভব হবে।

মুসতাক আহমেদ লালমাটিয়ায় স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্রসন্তান। মুস্তাকের স্ত্রী লিপা আক্তার মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সম্প্রতি। বাণিজ্যিকভাবে দেশে কুমির চাষের অন্যতম প্রবক্তাও ছিলেন মুসতাক। শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে মুসতাক আহমেদের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

গত বছরের ৪ মে থেকে ৬ মে ধারাবাহিকভাবে রাজধানীর কাকরাইল, লালমাটিয়া, বাড্ডা ও বনানী এলাকা থেকে র‌্যাবের হাতে আটক চারজন হলেন- আহমেদ কবির কিশোর, মুশতাক আহমেদ, দিদারুল ইসলাম ও মিনহাজ মান্নান। পরে রমনা থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় এই চারজনসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকিরা হলেন, প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও সাহেদ আলম, সায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন।

র‌্যাবের দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। মুশতাক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেছিলেন। অভিযুক্ত ১১ জন দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জাতির জনক, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহামারি করোনাভাইরাস সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতার হওয়া কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মুসতাক আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আই অ্যাম বাংলাদেশি নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির’ অভিযোগ আনা হয়।

গত সেপ্টেম্বরে এই মামলায় গ্রেফতার মিনহাজ মান্নান ও দিদারুল ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পান। কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুসতাকের জামিন হয়নি। ছয় বার মুসতাকের জামিন আবেদন নাকচ হয়। কারাগারে থাকা কার্টুনিষ্ট কিশোরও অসুস্থ্য বলে জানিয়েছেন তার বড় ভাই আহসান কবীর। গত ১১ জানুয়ারি রমনা থানা পুলিশ কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুসতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে