ক্রিকেটে গরুর মাংস আর অতীতের সামান্যই গুরুত্ব

0
40

রোহিত শর্মা অস্ট্রেলিয়ার রেস্তোরাঁয় দু পিস গরুর মাংস খেয়েছেন কি খাননি, অমনি শুরু হয়ে গেছে ‘কুরুচিকর’ সব কথাবার্তা৷ যেন ক্রিকেটারের গরুর মাংস খাওয়ার স্বাধীনতা নেই৷

ওদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪ জনের প্রাথমিক দলে মাশরাফির নাম নেই বলে শুরু হয়েছে ‘‘কেন, কেন, কেন!’’ যেন নির্বাচকদের মাশরাফিকে বাদ দেয়ার অধিকার নেই!

দুটোই থাকা উচিত৷ চাইলে কেউ নিজের পছন্দমতো যে কোনো খাবার খেতে পারবেন- এমন সুযোগ বা অধিকার পৃথিবীর সব দেশেই থাকা উচিত৷ অস্ট্রেলিয়ায় সে সুযোগ আছেও৷

আবার বিশ্বের সব দেশের নির্বাচকদেরই যৌক্তিক কারণে যে-কোনো খেলোয়াড়কে রাখা বা না রাখার অধিকার রয়েছে৷ ব্র্যাডম্যানদের দল যারা নির্বাচন করতেন, তাদের জন্য যে নিয়ম, এখন পাপুয়া নিউগিনি দল যারা নির্বাচন করেন তাদের জন্যও ঠিক একই নিয়ম৷

রোহিতদের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’ এবং ভক্তের অতি উৎসাহ

ঘটনাবহুল অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজের প্রথম দুই টেস্ট খেলেননি রোহিত শর্মা৷  তাকে ছাড়া দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৬ রানে অলআউট হয়ে প্রথম টেস্ট আট উইকেটে হেরে যায় বিরাট কোহলির দল৷ দ্বিতীয় টেস্টে কোহলি, মোহাম্মদ শামি ছিলেন না৷ তারপরও আজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়াকে ঠিক আট উইকেটেই হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় ভারত৷ তৃতীয় টেস্ট যে জিতবে চার টেস্টের সিরিজে সে-ই এগিয়ে যাবে৷ তো এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অংশ নিতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেই রোহিতের এখন লেজে-গোবরে অবস্থা৷ কোথায় সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে দলকে চাঙা করবেন, উল্টো ফেলে দিয়েছেন অনাকাঙ্খিত চাপে৷

  • ইন্ডিয়া নামটি এসেছে মূলত ইন্দাস বা সিন্ধু নদী থেকে৷ অন্তত পাঁচ হাজার বছর আগে সিন্ধু উপত্যকায় এ সভ্যতা গড়ে ওঠে৷ উপত্যকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বলা হতো সিন্ধু৷ পারস্য সাম্রাজ্যের যোদ্ধারা সিন্ধু আক্রমণ করতে এসে ‘সিন্ধু’ শব্দকে পালটে দেয়৷ তখন থেকে পরিচয় পেয়েছে ‘হিন্দু’ শব্দটি৷ এরপর থেকে ভারতের আরেক নাম হয়েছে হিন্দুস্তান, অর্থাৎ হিন্দুদের আবাসস্থল৷ (Getty Images/AFP/A. Hassan)ভারতীয় সংস্কৃতির ১০ তথ্যসিন্ধু সভ্যতাইন্ডিয়া নামটি এসেছে মূলত ইন্দাস বা সিন্ধু নদী থেকে৷ অন্তত পাঁচ হাজার বছর আগে সিন্ধু উপত্যকায় এ সভ্যতা গড়ে ওঠে৷ উপত্যকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বলা হতো সিন্ধু৷ পারস্য সাম্রাজ্যের যোদ্ধারা সিন্ধু আক্রমণ করতে এসে ‘সিন্ধু’ শব্দকে পালটে দেয়৷ তখন থেকে পরিচয় পেয়েছে ‘হিন্দু’ শব্দটি৷ এরপর থেকে ভারতের আরেক নাম হয়েছে হিন্দুস্তান, অর্থাৎ হিন্দুদের আবাসস্থল৷

ইনজুরি কাটিয়ে সদ্যই দলের সঙ্গে যোগ দেয়া রোহিত মেলবোর্নের এক রেস্তোরাঁয় খেতে যান শুভমন গিল, ঋষভ পান্ত, নবদীপ সাইনি এবং পৃথ্বী শ’-কে নিয়ে৷ স্বাভাবিক অবস্থায় এটা বড় খবর হওয়ার মতো ঘটনাই নয়৷ তবে করোনাকালে তো কোভিড-প্রটোকল মানতে হয় ৷ রোহিতরা তা মানেননি৷ এক ভক্ত প্রিয় তারকাদের সঙ্গে একটা ভিডিও শেয়ার করায় বেরিয়ে আসে সব৷ দেখা যায় কোনো নিয়মের ধার না ধেরে খাওয়া-দাওয়া করছেন পাঁচ ক্রিকেটার৷ ভক্তের সঙ্গে কোলাকুলি করতেও দেখা যায় তাদের৷ ফলে পাঁচজনকেই আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড৷

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব ছাপিয়ে চলে আসে রোহিতদের গরুর মাংস খাওয়ার প্রসঙ্গ৷ অতি উৎসাহী সেই ভক্ত একরকম জোরাজুরি করেই রোহিতদের খাওয়া-দাওয়ার বিল পরিশোধ করেছিলেন৷ ভক্ত মহোদয় বিল পরিশোধের আনন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে গিয়েই ডেকে আনেন ‘বিপদ’৷ প্রিয় তারকাদের ছবির সঙ্গে বিলের রশিদও শেয়ার করেছিলেন তিনি৷ তাতেই বেরিয়ে আসে রোহিত শর্মা, শুভমন গিল, ঋষভ পান্ত, নবদীপ সাইনি এবং পৃথ্বী শ’-র গরুর মাংস খাওয়ার বিষয়টি৷ তারপর গরুর মাংস বা যে কোনো খাবার খাওয়াকে নাগরিক বা মানবিক অধিকার হিসেবে একেবারেই না দেখে শুধু ধর্মীয় বিবেচনায় শুরু হয়ে যায় আপত্তিকর আক্রমণ৷ এমন আক্রমণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়৷ রোহিত শর্মা, শুভমন গিল, ঋষভ পান্ত, নবদীপ সাইনি এবং পৃথ্বী শ’ প্রাপ্তবয়স্ক এবং আন্তর্যাতিক মানের ক্রিকেটার৷ অস্ট্রেলিয়ায় তারা কোভিড-প্রটোকল না মেনে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলেও রেস্তোরাঁয় গিয়ে কী খাবেন তা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার৷

মাশরাফী দলে নেই তাই…

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছেন মাশরাফীবিন মোর্তজা৷ কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আসন্ন ওয়েনডে সিরিজে সম্ভবত তিনি থাকছেন না, কারণ, ২৪ জনের প্রাথমিক দলে ৩৭ বছর বয়সি অলরাউন্ডারের নামই নেই৷

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী ২৪ জনের স্কোয়াডে রয়েছেন:

তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন কুমার দাস, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হেসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, সৌম্য সরকার, ইয়াসির আলি, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, সাইফ উদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, পারভেজ হোসেন ইমন, মেহেদি হাসান, রুবেল হোসেন।

টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকে আগেই অবসর নেয়া মাশরাফী কি ২৪ জনেও সুযোগ না পাওয়ায় হতাশ? ২০১৯ বিশ্বকাপের পর একটাও ওয়ানডে খেলেননি বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক৷ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন শেষ দিকের কয়েকটা ম্যাচ৷ তাতে এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হলেও ওয়ানডে খেলার ফিটনেস আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্নটা বড় হয়েছে আরো৷  তাই তরুণ, সম্ভাবনাময়দের বাদ দিয়ে তাকে দলে রাখার দাবিকে স্বয়ং মাশরাফীর কাছেও মনে হয় অন্যায্যই মনে হবে৷ 

ক্রিকেটে তো আসলে অতীত সাফল্যের চেয়ে বর্তমান ফর্ম আর ফিটনেস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷

ডয়চে ভেলে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে